X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফিরে আসুক মাঠের ছাত্র রাজনীতি

লীনা পারভীন
২২ এপ্রিল ২০২২, ১৯:২৪আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০২২, ১৯:২৪
লীনা পারভীন এই উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস মানেই ছাত্রদের রাজনৈতিক লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসের এমন রাজনৈতিক অনেক আন্দোলনের ঘটনা আমরা ইতিহাসে পড়েছি, যার নেতৃত্বে ছিল ছাত্ররা। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের ঘটনা যদি কাউকে মনে করতে বলে তাহলে যে নামগুলো চিন্তা ছাড়াই উচ্চারিত হবে তাঁর সবকটিই হয়তো আসবে সে সময়কার ছাত্রনেতাদের। ভারত ভাগ হলো। সৃষ্টি হলো ভারত পাকিস্তানের ইতিহাস। সেখান থেকে দুই পাকিস্তানের সৃষ্টি। কাগজে কলমে পূর্ব পাকিস্তান বলা হলেও মূলত আমাদের এই দেশ পরিচিত ছিল বাংলাদেশ হিসেবেই। পশ্চিম পাকিস্তানিদের বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিবাদ প্রথমে এসেছিল ছাত্রদের মধ্য থেকেই। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস মানেই ছাত্রদের রাজনৈতিক প্রতিদান। সেই আন্দোলন থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম। সংকটের মধ্যের পড়া এই বাংলাদেশকে বারবার রক্ষা করেছে এই অঞ্চলের ছাত্ররাই।

অথচ সেই ঐতিহ্য এখন নিজেই সংকটের মুখে। হারিয়ে যেতে বসেছে আমাদের ছাত্রদের রাজনৈতিক আন্দোলনের ঘটনা। কবে কখন কেমন করে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে লিখতে গেলেই সকল ঘটনাই আসে অতীত হয়ে এ এক বিস্ময়। সমসাময়িক সময়ে ২০১৩ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের বাইরে আর কোনও ঘটনাই উদাহরণ তৈরি করতে পারেনি। একটা বিরাট প্রজন্ম তৈরি হয়েছে এই রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামের আবহের বাইরে। তারা জানেও না এই অঞ্চলে একটা সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেতন বৈষম্যের বিরুদ্ধে মিছিল হতো। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে রুখে দিতে রাজপথে নামতো আমাদের ছাত্ররা।

হ্যাঁ, এ কথা মিথ্যা নয় যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পরিবর্তনের সঙ্গে রাজনৈতিক বাস্তবতার পরিবর্তন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত, কিন্তু আমাদের দেশের অর্থনীতি এখনও পশ্চিমা অর্থনীতির কাঠামো ধারণ করেনি যেখানে রাজপথের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেছে। আমাদের সংসদ কাঠামো এখনও এমন হয়ে যায়নি যেখানে সাধারণ মানুষের ভূমিকা থাকবে কেবল ভোটের সময়ে মত প্রকাশ করা। এখনও আমাদের দেশে শিক্ষা ব্যবস্থায় সমস্যা আছে। এখনও আমাদের দেশে সামাজিক বিশ্বাসের জায়গাটি একমুখী হয়নি। এখনও আমাদের দেশের বাজার নিয়ন্ত্রিত হয় সিন্ডিকেট দ্বারা, যেখানে কেন্দ্রীয় প্রশাসনও অসহায় হয়ে যায়।

আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেদিন তাঁর এক বক্তৃতায় দুঃখ করে বলেছেন, একটি শক্ত বিরোধী দলের অভাব তিনিও অনুভব করেন। এই আলাপটি কিন্তু তিনি এমনি এমনি তোলেননি। তিনি মাঠের রাজনীতি করা একজন নেতা। তিনি এই মুহূর্তের বাংলাদেশের সবচেয়ে অগ্রগামী চিন্তার একজন রাজনৈতিক নেতা এবং বলা যায় অবকিল্প। সেই তিনি যখন আফসোস করেন তখন বাস্তবতা আমাদের সামনে চিন্তার উদ্রেক করে বৈকি। কিন্তু কথা হচ্ছে, সেই বিকল্প আসবে কোথা থেকে? আমাদের ঐতিহ্য হচ্ছে ছাত্র রাজনীতি আগামীর জাতীয় নেতা বানানোর কারখানা। সেখান থেকে পাঠ নিয়ে গড়ে উঠতো এক একজন বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দীন, নজরুল ইসলাম, মনসুর, কামরুজ্জামান বা এ যুগের তোফায়েল আহমেদ বা সৈয়দ আশরাফরা।

এই মুহূর্তের আলোচিত ঘটনা ঢাকা কলেজ ও সেই এলাকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাতেও সেই ছাত্র রাজনীতির সংকটকে অনুভূত হয়েছে। আলোচনা করার বা ছাত্রদের গাইড করার মতো কোনও ফোরাম খুঁজে পাওয়া যায়নি, যার কারণে দুই পক্ষকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসার জন্য উদ্যোগের অভাব ছিল প্রকট। গোটা ঘটনায় আমার কাছে মনে হয়েছে এই সংকট আমরা কতটা বুঝতে পারলাম? আমরা কি সচেতন হবো যে এখনও ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়নি? এমনকি এর আগেও কোটা আন্দোলনসহ বেতন বা ভ্যাট আন্দোলনসহ সড়ক আন্দোলনের সময়েও একই সংকট দেখেছিলাম আমরা।

আমাদের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন কোথাও কোনও ছাত্র সংসদ নেই। ছাত্র সংসদের অভাবে আগ্রহ হারিয়েছে ছাত্র সংগঠনগুলোও। কারণ, ক্ষমতাশীল দলের ছাত্র সংগঠনের একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে অন্যান্য ছাত্র সংগঠনতো দূরে থাক প্রতিষ্ঠান প্রশাসনও স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না বা কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। এমন উদাহরণ আমরা দুদিন পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম না সংবাদ মাধ্যমে দেখে থাকি। অথচ যদি রাজনৈতিক কার্যক্রমের স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় থাকতো তাহলে সেখানে সবার সমান অংশগ্রহণ একটি সুশাসনের নিশ্চয়তা দিতে পারতো। ছাত্র রাজনীতি কেবল দল করাকে বুঝায় না। এটি একটি স্কুলিং প্রক্রিয়া। এখানে একজন ছাত্র দেশ, রাজনীতি, অর্থনীতি, বিশ্বনীতি ইত্যাদি সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান লাভ করে থাকে, যা পরবর্তীতে তাঁর নিজের জীবনে কাজে লাগে এবং দেশের নানা ইস্যুতে সে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে।

আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলি অথচ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া রাজনীতিকে মেরে ফেলছি। সে সময়ে যদি ছাত্ররা রাজনৈতিকভাবে সচেতন না থাকতো তাহলে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে কখনোই স্বাধীনতার ডাক দেওয়া সম্ভব হতো না। আফসোস, আমরা বাংলাদেশকে মেরে ফেলছি। বাংলাদেশ মানেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সচেতনতা আর সেই সচেতনতা
 আসে একটি গঠনমূলক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।

অর্থনৈতিক সক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য আমাদের দরকার বাংলাদেশকে বুকে ধারণ করে এমন রাজনৈতিক নেতৃত্বের। রাজনৈতিক নেতা তৈরির পাঠশালা হচ্ছে ছাত্র সংসদ। এই সংসদ এমনকি ব্যবসায়ীদেরকেও পরিচালনা করতে সক্ষম। কিন্তু রাজনৈতিক পাঠশালাগুলোকে বন্ধ করে দিয়ে কি সেই কাঙ্ক্ষিত নেতা তৈরি সম্ভব? 
 
লেখক: কলামিস্ট
 
/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
‘শো মাস্ট গো অন’
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ