X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

চাঁদাবাজি: দায় কি শুধু বিপৎগামী ছাত্রদের?

রেজানুর রহমান
২৬ এপ্রিল ২০২২, ১৬:৩৪আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২২, ১৬:৫৯

রেজানুর রহমান ঢাকা কলেজে পড়ার ইচ্ছে ছিল প্রবল। কিন্তু আর্থিক দৈন্যসহ নানা কারণে তা হয়ে ওঠেনি। তবে পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে সেই ইচ্ছে ও আকাঙ্ক্ষাটা মিটে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঐতিহ্যগতভাবে দেশসেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দেশের মহান স্বাধীনতা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে। একটা সময় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হতো আমাদের প্রিয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারাতো অনেক সৌভাগ্য ও কৃতিত্বের। তবু ঢাকা কলেজের নাম মন থেকে মুছে ফেলতে পারিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় মাঝে মাঝে ঢাকা কলেজ এলাকায় যেতাম। রাস্তা দিয়ে যাওয়া-আসার সময় আড়চোখে কলেজটিকে দেখতাম। দেশসেরা কলেজ। দেশের বাছাই করা মেধাবী ছাত্ররা এই কলেজে পড়ে। দেশসেরা শিক্ষাবিদরা এই কলেজে পড়ান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগে পড়াকালীন আমি দৈনিক ইত্তেফাকে বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার হিসেবে যুক্ত হই। শিক্ষা বিষয়ক একটি বিশেষ রিপোর্টের তথ্যের প্রয়োজনে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষের সাক্ষাৎকার নিতে হবে। কয়েক দিনের চেষ্টায় অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি মেলে। ওই প্রথম আমি ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকি। আহ! কী ছিমছাম, শান্ত পরিবেশ। একজন শিক্ষক এই মাত্র ক্লাস শেষে শ্রেণিকক্ষ থেকে বের হলেন। করিডোরে কয়েকজন ছাত্র দাঁড়িয়েছিল। তারা সতর্ক হয়ে উঠলো। শিক্ষককে দেখে সবাই হাত তুলে সালাম দিলো। শিক্ষক স্নেহ ও আদর মাখা নরম কণ্ঠে ছাত্রদের প্রশ্ন করলেন, কেমন আছো তোমরা? ছাত্ররা সবাই বিনীত কণ্ঠে উত্তর দিল– ভালো আছি স্যার...। সেদিনের ওই আনন্দমুখর পরিবেশ দেখে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলাম যে বহুদিন এই আনন্দ স্মৃতি লালন করেছি।

সেই ঢাকা কলেজ এখন ভয়ংকর সংবাদের শিরোনাম। দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা ঢাকা কলেজের বিভিন্ন সময়ের হাজার হাজার দুর্দান্ত মেধাবী ছাত্রদের কাছে বিষয়টি কতটা কষ্টের ও বিব্রতকর তা বেশ বুঝতে পারছি। আমি কলেজটিতে পড়িনি। কিন্তু কলেজটির শিক্ষা কার্যক্রম বিষয়ক ঐতিহাসিক সুনাম উপভোগ করেছি। সে কারণে কলেজটির জন্য খুব মায়া হচ্ছে। দেশের একটি আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন নাকি চাঁদাবাজরা রাজত্ব করে। হলে হলে চাঁদাবাজদের রাজত্ব। নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় নাহিদ হোসেন নামে কুরিয়ার সার্ভিসের একজন কর্মীকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এখন শোনা যাচ্ছে, এই ঘটনায় ঢাকা কলেজের বিপৎগামী কিছু ছাত্র জড়িত। কী ভয়ংকর সংবাদ।

একটি শীর্ষ দৈনিক পত্রিকায় পর পর দুদিন এ সংক্রান্ত যে রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে তা বেশ উদ্বেগজনক। প্রথম দিনের শিরোনাম ‘চার অস্ত্রধারী শনাক্ত। তারা ছাত্রলীগের। দ্বিতীয় দিনের শিরোনাম- হেলমেট পরা অস্ত্রধারীসহ ছাত্রলীগের ছয় জন শনাক্ত। তারা সবাই ঢাকা কলেজের ছাত্র।

কী এক উদ্বেগজনক খবর। ঢাকা কলেজ। এক নামেই যার পরিচয়। সেই কলেজের ছাত্ররা প্রকাশ্যে মানুষ হত্যা করে আবার হলের ছাত্রাবাসে নিরাপদে বসবাসও করে। কীভাবে তা সম্ভব? একসময়ের দেশসেরা এই কলেজে কি এখন কোনও নিয়ম-কানুন মানা হয় না? অস্ত্রধারী চাঁদাবাজরা কলেজের হলে থাকে কী করে? একথা সত্য, কলেজের আবাসিক, অনাবাসিক সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থী সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত নয়। তারা নিরাপদ শিক্ষাঙ্গনের পক্ষে। অথচ তারাও এই বদনামের ভাগীদার হচ্ছে। কলেজটির সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের বিশেষ করে কলেজের সাবেক ছাত্রদের উচিত এ ব্যাপারে একটি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

পরিবারের বখে যাওয়া সন্তানের ক্ষেত্রে আমরা মূলত পরিবারকেই দায়ী করি। বিশেষ করে বাবা-মা এক্ষেত্রে কাঠগড়ায় দাঁড়ান। কী সন্তান জন্ম দিয়েছেন যে তাকে শাসন করতে পারেন না? তেমনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও এমন প্রশ্ন এসে যায়। ঢাকা কলেজ, একসময়ের গৌরবদীপ্ত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কেন এই ভয়ংকর অবস্থা? এজন্য কী কলেজ কর্তৃপক্ষের কোনও দায়-দায়িত্ব নেই? সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজরা কলেজের আবাসিক হলে থাকে কী করে? অভিযোগ রয়েছে, সরকারি ছাত্র সংগঠনের পরিচয়কে সন্ত্রাসীরা কাজে লাগাচ্ছে। যদি তাই হয় তাহলে ছাত্র সংগঠনটিই বা কেন তাদের (সন্ত্রাসী) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না?

এবার একটি ভিন্ন প্রসঙ্গে অবতারণা করতে চাই। কথায় আছে- এক হাতে তালি বাজে না। নিউ মার্কেট এলাকায় এই যে সন্ত্রাসী ঘটনাগুলো সংঘটিত হলো তার একক দায় কি শুধু ছাত্রদের? প্রতিপক্ষ ব্যবসায়ীদেরও কি কোনও দায়-দায়িত্ব নেই? অভিযোগ রয়েছে, ছাত্র নামধারীরা তাদের কাছে (ব্যবসায়ীদের) চাঁদা তোলে। কিন্তু তারা চাঁদা দেন কেন? এই যে তারা লাঠিসোঁটা নিয়ে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে দাঁড়ালেন, এই ধরনের প্রতিবাদ তারা কেন আগে করেননি? ধরা যাক তারা চাঁদা দিতে দিতে অস্থির হয়ে উঠেছেন! সম্মিলিত প্রতিবাদ কী এর আগে করতে পারতেন না? বলতে পারতেন না আমরা চাঁদা দিবো না? এর উত্তরও আছে। ব্যবসায়ীদের অনেকে চাঁদাবাজদের উৎসাহিত করেন। কার পেছনে কতজন দুর্ধর্ষ চাঁদাবাজ আছে এটাও অনেক ব্যবসায়ীর এক ধরনের নিরাপত্তা। কাজেই নিজেদের স্বার্থেই ব্যবসায়ীদের অনেকে চাঁদাবাজ পোষে। কাজেই বিপৎগামী ছাত্রদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি দুর্নীতিপরায়ণ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করাও জরুরি।

ছাত্রজীবন অনেক মধুর। সন্ত্রাস আর চাঁদাবাজির কলঙ্কে যারা এই জীবনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন তাদের বয়কট করা সময়ের দাবি। নিউ মার্কেটের সন্ত্রাসী ঘটনার সঠিক কারণ শনাক্ত করে প্রকৃত দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। এই ব্যবস্থা যেন নির্মোহভাবে করা হয়। শুভ কামনা সবার জন্য।

লেখক: কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, সম্পাদক- আনন্দ আলো।

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পুরস্কার পেলেন কুবির চার শিক্ষার্থী
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পুরস্কার পেলেন কুবির চার শিক্ষার্থী
গরমে বেড়েছে অসুখ, ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগরমে বেড়েছে অসুখ, ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ এপ্রিল, ২০২৪)
মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা ৫ টন কফি পাউডার জব্দ
মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা ৫ টন কফি পাউডার জব্দ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ