X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ হাসিনার জন্মদিন ও বাংলাদেশের পুনর্জন্ম

নাসির আহমেদ
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৭:৫৮আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৮:০০

বছর ঘুরে কালের প্রবাহে আবার ক্যালেন্ডারের পাতায় উদ্ভাসিত ২৮ সেপ্টেম্বর। প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার শুভ জন্মদিন। জন্মদিনে প্রধানমন্ত্রীকে জন্য সশ্রদ্ধ শুভেচ্ছা। এই দিনটিকে বাংলাদেশের পুনর্জন্মের দিন বললেও নিশ্চয়ই বেশি বলা হবে না। কারণ, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে যেমন ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হতো না, তেমনি তাঁর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার জন্ম না হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ পুনরুদ্ধারও ছিল সম্পূর্ণ অসম্ভব। বাংলাদেশ সেই যে ১৯৭৫ সালে পথ হারিয়েছিল, সেই দেশ আর তার আপন পথ খুঁজে পেতো কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ ছিল।

মুক্তিযুদ্ধের রক্তফসল এই বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীত পথে যাত্রা শুরু করেছিল, সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্রের মতো অনিবার্য স্তম্ভ দুটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো, পাকিস্তানি সামরিকতন্ত্র আর সাম্প্রদায়িকতার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতের একটি রাষ্ট্র কাঠামো হিসেবে যখন বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছিল, সত্যি বলতে তখন কেউ আশা করতে পারেনি যে এই দেশ আবার প্রগতির পথে, অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক আদর্শের পথে যাত্রা করতে পারবে।

মুক্তিযুদ্ধ বিজয়ের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যে মর্যাদার আলোয় উদ্ভাসিত হয়েছিল বাংলাদেশ,  সেই বাংলাদেশ তার সকল গৌরব হারিয়ে পাকিস্তানি স্টাইলে সামরিক শাসন আর সাম্প্রদায়িকতা, শাসন-শোষণে জর্জরিত, ক্ষমতা এবং রাজনীতি যখন স্বাধীনতা বিরোধীদের নিয়ন্ত্রণে, তখন কে আশা করতে পারে যে এই দেশ বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পথে আবার চালিত হবে?

সেই অসাধ্য সাধন সম্ভব হয়েছিল ১৯৮১ সালে ৬ বছরের নির্বাসিত জীবনযাপন শেষে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শেখ হাসিনার বাংলাদেশে ফিরে আসার মধ্য দিয়ে। এমনকি তাঁর বাংলাদেশে আসার পথে রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতাও ছিল চরম পর্যায়ের। যে কারণে মাতৃভূমি বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের পর দুই দশকের মধ্যেই তাঁকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে ১৯ বার। অথচ বাংলাদেশের কোনও রাজনৈতিক দলের প্রধানকেই এমন প্রাণনাশের চেষ্টার দ্বিতীয় কোনও নজির নেই।

তাই জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ সন্তান তথা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার জন্মদিনটি নানা কারণেই তাৎপর্যপূর্ণ আর গৌরবের। কারণ, এই জন্মদিন শুধু একজন প্রধানমন্ত্রীর বা স্বনামখ্যাত নাগরিকেরই নয়, তারও বেশি কিছু। তিনি একটি জাতি- রাষ্ট্রকে চূড়ান্ত বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করেছেন। শুধু রক্ষাই বা বলি কেন, বিশ্বের বুকে এই দেশটিকে মহিমান্বিতও করেছেন।

পঁচাত্তর পরবর্তী বঙ্গবন্ধুহীন এই রাষ্ট্র যে অন্ধ তিমিরে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল, শেখ হাসিনা ফিরে না এলে সেই অন্ধকার যে আরও বিস্তৃত হতো, তা বিবেকবান মানুষ মাত্রই স্বীকার করবেন। সুতরাং তাঁর স্বদেশে ফিরে আসা যেমন তাৎপর্যপূর্ণ, ততধিক তাৎপর্যপূর্ণ তাঁর জন্ম। সে কারণেই শেখ হাসিনার জন্মদিনটি মুক্তিযুদ্ধের রক্তার্জিত হারিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ পুনরুদ্ধারের দিন হিসেবেও বিবেচনা করা যায়।

প্রতি বছর নানা আয়োজনে দেশে-বিদেশে তাঁর অসংখ্য অনুরাগী তথা বঙ্গবন্ধুর প্রগতিশীল রাজনৈতিক দর্শনের অনুসারীরা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার জন্মদিন উদযাপন করেন। যথারীতি এবারও রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গসংগঠনসমূহ ব্যাপক আয়োজনে প্রিয় নেত্রীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাবেন তাঁর অবর্তমানেই। কারণ, এই জন্মদিনের কাছাকাছি সময়েই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন বসে। এবারও তিনি সেই অধিবেশনের যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন। করোনার কারণে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন দুই বছর অনাড়ম্বরেই উদযাপিত হয়েছে ঘরোয়া পরিবেশে। তবে ব্যাপক উদ্দীপনা ছিল ফেসবুকসহ নানা সামাজিক নেটওয়ার্কে।

কিন্তু বিপুলসংখ্যক দলীয় অনুরাগীর বাইরেও এমন বহু মানুষ আছেন, যারা আওয়ামী লীগের কোনও পর্যায়ের নেতাও নন, কর্মীও নন, অথচ শেখ হাসিনার সততা, দেশপ্রেম ন্যায়পরায়ণতা এবং নিরহংকার নির্লোভ সরল জীবনযাপন পছন্দ করেন, তারাও দূরে থেকেই তাঁর জন্য শুভকামনা জানাচ্ছেন, দোয়া করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তারা পরিচিতও নন। কিন্তু তারা ভালোবাসেন তাঁকে। তাঁর সুখে-দুঃখে উদ্বেলিত হন এসব মানুষ তথা আমজনতা। এই জনসাধারণের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসাতেই বঙ্গবন্ধু মহান নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন এই দুঃখিনী বাংলার দুঃখ মোচনের জন্য।

সেই বিপুল সংখ্যক সাধারণেরই একজন হিসেবে লিখছি: শুভ জন্মদিন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রিয় প্রধানমন্ত্রী। লাখো শহীদের রক্তস্নাত এই জন্মভূমির কল্যাণের প্রয়োজনেই আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু হোক। বারবার ফিরে আসুক জন্মতিথির উজ্জ্বল সোনালি সকাল।

সোনালি সকাল আর শেখ হাসিনার জন্মদিন প্রায় সমার্থক। কারণ, এ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন এক আশ্চর্য অধ্যায় তিনি রচনা করেছেন, যা অন্ধকারে নিমজ্জিত একটি দেশের মানুষের জন্য দীর্ঘ অন্ধকার শেষে সোনালি সূর্যোদয়েরই তুল্য। দীর্ঘ অন্ধকার কথাটার ব্যাখ্যা দরকার। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত-ফসল এই বাংলাদেশ ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের প্রত্যুষে সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যার পর ভয়ংকর অন্ধকারের দিকেই যাত্রা করেছিল! সেই অন্ধকার মানে মুক্তিযুদ্ধের প্রগতিশীল রাষ্ট্রচেতনা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া এক অপ্রত্যাশিত সাম্প্রদায়িকতা আর সামরিকতন্ত্র- কবলিত পাকিস্তানি দর্শনের বাংলাদেশ। যে সাম্প্রদায়িকতা- দুষ্ট পাকিস্তানি শোষণ-পীড়নের রাষ্ট্র কাঠামো থেকে বাংলার মানুষের মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধু ২৩ বছর লড়াই করে একাত্তরে বিজয়ী হয়েছিলেন।

এ সত্য আজ সবারই জানা– স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যেই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে নিমগ্ন স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতাকে হত্যার প্রেক্ষাপট সৃষ্টিতে কেন ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে রাজনৈতিক সন্ত্রাস তথা আন্ডারগ্রাউন্ড অপতৎপরতা, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে দেশের অভ্যন্তরে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্র আর অপপ্রচার এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল যে বঙ্গবন্ধুকে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’-এর ডাক দিয়ে নতুন প্রশাসনিক ব্যবস্থার পথে যেতে হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি। কিন্তু দ্বিতীয় বিপ্লব বাস্তবায়নের আগেই তাঁকে শিশু সন্তানসহ সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার নেপথ্যেও কাজ করেছে সেই পাকিস্তানি রাষ্ট্র কাঠামোয় বাংলাদেশকে নিয়ে যাওয়া ষড়যন্ত্র। স্বাধীনতার মহান স্থপতিকে যখন ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার সমস্ত চক্রান্ত চূড়ান্ত, যখন বাংলাদেশ রাষ্ট্র পতাকা ছাড়া আর সবকিছুতেই পাকিস্তানি মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত, তখন ফিরে এলেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। সেই প্রতিকূল পরিবেশে কী কঠোর সংগ্রামের পথে নামতে হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে, তা আজ ইতিহাসের অংশ। পিতার গড়া ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের চরম সংকটের মুহূর্তে কান্ডারি হিসেবে হাল ধরতে হয়েছে তাঁকে। শেখ হাসিনার স্বদেশে প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশকে চিরস্থায়ী বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করেছিল।

কারণ, পৃথিবীর বহু দেশে বহু রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হয়েছে। সরকারপ্রধান নিহত হয়েছেন। গান্ধীর মতো জাতির পিতাও নিহত হয়েছেন। কিন্তু তাতে দেশের চরিত্র হনন হয়নি, স্বাধীনতার মূল চেতনা থেকেও কোনও দেশই বিচ্যুত হয়ে যায়নি। কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর বাংলাদেশ আমূল পাল্টে যায়।

মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে পাকিস্তানি সামরিক শাসন আর সাম্প্রদায়িকতা থেকে বেরিয়ে এসেছিল বাংলাদেশ একটি প্রগতিশীল ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে, সেই পথ উল্টো করে দিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী এবং খুনি চক্রের সহযোগীরা। সামরিক শাসকেরা বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে ক্ষমতা দখল করেই তুষ্ট ছিল না, তারা দেশকে  পাকিস্তানি সাম্প্রদায়িকতা আর সামরিক শাসনের অন্ধকারেও নিমজ্জিত করতে চেয়েছিল চিরদিনের জন্য। কিন্তু অসম সাহসী জনপ্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার কারণে তা সম্ভব হয়নি।

কিন্তু দেশি-বিদেশি এত ষড়যন্ত্রের মধ্যে বাংলাদেশকে তারা আপন পথে ফিরিয়ে নেওয়া বঙ্গবন্ধুকন্যার জন্য সে পথ কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। বরং ছিল ভয়াবহ কণ্টকিত। ১৯৮১ সালের ১৭ মে তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন যে কত তাৎপর্যপূর্ণ ছিল, সে বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে। ওই সময়ের বিদেশি পত্রপত্রিকার খবরের দিকে দৃষ্টিপাত করলে বোঝা যাবে শেখ হাসিনার ফিরে আসার রাজনৈতিক তাৎপর্য কী ছিল!

১৯৮১ সালের ৩১ মে লন্ডনের ‘সানডে টেলিগ্রাফ’ পত্রিকায় লেখা হয় ‘বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের ফলে দেশে রাজনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য দেখা দেয়। ছয় বছর ভারতে নির্বাসিত জীবনযাপনের পর তিনি আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ ও জিয়া- শাসনের বিরোধিতা করার জন্য দেশে ফিরে এসেছেন।’

১ জুনের দ্য গার্ডিয়ান ও মর্নিং স্টার পত্রিকায় লেখা হয় ‘শেখ হাসিনার স্বদেশে প্রত্যাবর্তন জিয়ার পক্ষে গুরুতর উদ্বেগজনক ছিল’। একই তারিখের দ্য টাইমস-এ বলা হয় ‘সংসদের ক্ষমতা হ্রাস করে জিয়াউর রহমান কর্তৃক অধিক ক্ষমতা কুক্ষিগত করার ফলে আওয়ামী লীগের প্রতি জনসমর্থন ক্রমেই বৃদ্ধি পায়। শেখ হাসিনার দেশে প্রত্যাবর্তনের ফলে উক্ত জনসমর্থন আরো পুঞ্জিভূত হয়’। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস ও সাপ্তাহিক ইকোনমিস্ট পত্রিকায়ও অনুরূপ মন্তব্য করা হয়। (সূত্র: শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন/ সুভাষ সিংহ রায়, পৃষ্ঠা ৯৭)।

এসব তথ্য থেকেই বোঝা যায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা পুনরুদ্ধারের সংগ্রামী শেখ হাসিনার অস্তিত্ব কত গুরুত্বপূর্ণ! শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এবং নেতৃত্ব কী বিপুল প্রভাব সৃষ্টি করেছিল বাংলাদেশের রাজনীতিতে, তা পেছনে ফিরে তাকালে আজকের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সচেতন নাগরিকমাত্রই অনুভব করতে পারবেন।

চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সশস্ত্র সেনা অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর তার গড়া রাজনৈতিক দল বিএনপি সবচেয়ে অতিষ্ঠ ছিল শেখ হাসিনা-আতঙ্কে (এবং সে আতঙ্ক তাদের এখনও কাটেনি।) মহান মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামায়াত-মুসলিম লীগের মতোই বিএনপিও শেখ হাসিনাকে ভয় পেতো। কারণ, বিএনপি জানতো মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধুর গড়া দল আওয়ামী লীগ ও তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার চেয়ে বড় শত্রু তাদের আর কেউ নেই। তাই আওয়ামী লীগ এবং তার প্রধান চালিকাশক্তি শেখ হাসিনা শুরু থেকেই তাদের চোখের বালিতে পরিণত হয়েছিলেন। যে কারণে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাসহ তাঁর দলের সকল শীর্ষ নেতাকে একমঞ্চে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মৌলবাদ আর সাম্প্রদায়িক শক্তির দোসর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। সৌভাগ্যক্রমে নেতাকর্মীদের মানবঢালের সহায়তায় বেঁচে গিয়েছিলেন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা।

এ প্রসঙ্গেই উল্লেখ করা যেতে পারে যে, প্রকাশ্য দিবালোকে এই ভয়ংকর হামলায় যে আর্জেস গ্রেনেডগুলো ব্যবহার করা হয়েছিল, তা পাকিস্তানে তৈরি এবং তাদের সেনাবাহিনীর সদস্যরাই এগুলো ব্যবহার করে থাকে।

সশস্ত্র বাহিনীর তত্ত্বাবধানে পাকিস্তানে তৈরি সামরিক বাহিনীর এই মারণাস্ত্র কেমন করে বাংলাদেশে এলো এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ আহূত শেখ হাসিনার শান্তি সমাবেশে ব্যবহৃত হলো! এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলেই বেরিয়ে আসবে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবার জাতির পিতাকে হত্যার সঙ্গে শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টার গোপন ষড়যন্ত্রের যোগ।

শেখ হাসিনা যে মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ এবং সামরিকতন্ত্রের বিরুদ্ধে সবচেয়ে সোচ্চার এবং প্রগতির বাতিঘর হবেন, সেটাই তো স্বাভাবিক। আর সে কারণেই দেশের শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবীসহ সমাজের প্রগতিশীল পেশাজীবীরা যেমন, তেমনি সমাজের সচেতন মানুষের সমর্থন ও ভালোবাসায় অভিষিক্ত হয়েছেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা।

কিন্তু গ্রেনেড-অভিযান ব্যর্থ হওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল ষড়যন্ত্রকারীরা। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির সামরিক বাহিনী সমর্থিত তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের প্রেক্ষাপট তৈরি করে দিয়েছিল সেই হতাশ ষড়যন্ত্রকারীরাই। সে সরকারও অবৈধ পথে ক্ষমতায় থেকে যেতে চেয়েছিল। তাদেরও টার্গেট ছিল শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে সরানো। চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা দিয়ে তাঁকে কারারুদ্ধও করা হয়েছিল। তার আগে সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারই তাঁকে লন্ডন থেকে দেশে ফিরতেও বাধা দিয়েছিল। কিন্তু সকল বাধা তুচ্ছ করে সাহসী জননেত্রী শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের সংগ্রামে শামিল হয়েছেন। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বিজয়ী হলে ২০০৯ সালে পুনরায় সরকারে গিয়ে রাষ্ট্রপরিচালনা শুরু করেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা। সে পথেও বাধা কম ছিল না।

২০০৯ সাল থেকে টানা তিনটি মেয়াদে সরকার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে দক্ষতা আর দূরদর্শিতার সঙ্গে শক্তহাতে দেশ পরিচালনা করছেন, তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

গত একযুগের বাংলাদেশের দিকে তাকালে বোঝা যায় কী বিস্ময়কর পরিবর্তনই না তিনি ঘটিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের রক্ত- ফসল এই বাংলায়! দেশকে ডিজিটাইজেশন করে অর্থনৈতিক এবং যোগাযোগ ক্ষেত্রে যে নতুন যুগের সূচনা করেছেন, ২০০৯ সালেও কেউ তা কল্পনাই করতে পারেননি। নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার বিস্ময়করভাবে কমিয়ে আনা, শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার, বিশেষ করে নারী শিক্ষা প্রসারে এবং প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক গতির সঞ্চার হয়েছে এই সময়ে।

বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতাসহ নানামুখী সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সৃষ্টি করার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে গতি সঞ্চার করাসহ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও এমন সব কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে– যা মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়িয়ে, সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নত করে বাংলাদেশকে নতুন যুগে প্রবেশ করিয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বীরদের জন্য যে সম্মান এবং সুবিধা বঙ্গবন্ধু কন্যা নিশ্চিত করেছেন, তা তুলনাহীন। বাংলাদেশে যাতে কোনও দরিদ্র মানুষ গৃহহীন না থাকে, সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নকল্পে ইতোমধ্যে লাখ লাখ দরিদ্র পরিবারকে নির্মাণ করে দিয়েছেন বাড়ি। জাতির পিতার জন্ম শতবর্ষ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী (২০২১) জুড়ে অব্যাহত ছিল দরিদ্র মানুষের গৃহায়নের কর্মসূচি, যা এখনও চলমান।

মাত্র একযুগের মধ্যে দারিদ্র্যপীড়িত দেশটি আজ মধ্যম আয়ের উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। বাংলাদেশ বিশ্ববাসীর কাছে শুধু বিস্ময় নয়, উন্নয়নের রোল মডেলও।

এর সবকিছুই সম্ভব হয়েছে সততায় নিষ্ঠ সাহসী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য দেশপ্রেম, কর্তব্যনিষ্ঠা আর লক্ষ্যে অবিচল সিদ্ধান্তের কারণে। দেশি-বিদেশি নানা চক্রান্ত আর ষড়যন্ত্রের পরও রাষ্ট্রের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে তিনি শুধু বাংলাদেশের মানুষকেই বিস্মিত করেননি, সপ্রশংস দৃষ্টি কেড়েছেন আন্তর্জাতিক দুনিয়ারও।

বিশ্বের অন্যতম প্রবল স্রোতস্বিনী পদ্মার মতো উত্তাল নদী শাসন করা প্রায় দুঃসাধ্য এক সাফল্যের কাজ। তার ওপর বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় ষড়যন্ত্রকারীদের নানামুখী ষড়যন্ত্র। এত প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে পদ্মার বুকে প্রায় সাড়ে ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণ ছিল অসম্ভব প্রায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করলেন– দেশীয় অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে, তখন অনেকেই বিস্মিত হয়েছিলেন এবং অভিমত প্রকাশ করেছিলেন যে বাংলাদেশের একার পক্ষে পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব নয়।

গভীর দেশপ্রেম আর আত্মবিশ্বাস সম্বল করেই বঙ্গবন্ধুকন্যা সেই অসাধ্য সাধন করে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের সক্ষমতা শুধু প্রমাণ করেননি, দেশকে অনন্য উচ্চতায় তুলে দিয়েছেন। অর্থনৈতিকভাবে পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সমৃদ্ধির নতুন যুগের সূচনা করতে চলেছে।

তাঁর দূরদর্শী সিদ্ধান্ত, গভীর দেশপ্রেম আর সুযোগ্য নেতৃত্বই বাংলাদেশকে আজ বিশ্বসমাজের এত বড় সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। উন্নয়নের নানা সূচকে সফলতা অর্জনের জন্য বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক বহু স্বীকৃতি আর সম্মাননায় ভূষিত। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এযাবৎ তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের জন্য ৪৮টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার-সম্মাননা ও স্বীকৃতি অর্জন করেছেন। বিশ্বের কয়েকটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডিলিট ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এসব সম্মান শুধু তাকে নয় বাংলাদেশকেও মহিমান্বিত করেছে।

একটি ঘটনার দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা যাক। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর দীর্ঘকালের অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে তার সরকার যে ঐতিহাসিক শান্তি- চুক্তি স্বাক্ষর করাতে সক্ষম হয়েছিল, তা শুধু দেশে নয়, বহির্বিশ্বেও ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছিল।

জাতিসংঘের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইউনেস্কো ‘হোপে বোয়ানি শান্তি পুরস্কার’ প্রদান করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত করেছিল। পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে ইউনেস্কোর তৎকালীন মহাপরিচালক ফেদেরিকো মেয়র যে মন্তব্য করেছিলেন তার উল্লেখ এখানে প্রাসঙ্গিক হতে পারে–

‘জাতি গঠনে আপনার পিতার অনুসৃত পথ অবলম্বন করে আপনি দেশকে শান্তি ও পুনর্গঠনের পথে নিয়ে গেছেন। দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠায় আপনার উদ্যোগ ও নিষ্ঠা বিশ্বে শান্তির সংস্কৃতির দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’

শুধু এই একটি অর্জন নয়, এরকম গৌরবময় অর্জন অনেক। জাতিসংঘের আরেক অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ‘বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি’ ক্ষুধার বিরুদ্ধে আন্দোলনে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘চেরেস পদক’ এ ভূষিত করে। পরিবেশ সংক্রান্ত বিশ্ব ফোরামে পরিবেশ সুরক্ষায় শেখ হাসিনার সৃজনশীল নেতৃত্বের অসাধারণ ভূমিকার জন্য পরিবেশ বিষয়ে বিশ্বের সর্বোচ্চ সম্মান ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত করে ২০১৫ সালে। ‘গ্লোবাল সামিট অব উইমেন’ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০১৮ সালে ‘গ্লোবাল উইমেন্স লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করে। দেশে নারী শিক্ষার উন্নয়ন এবং উদ্যোক্তা তৈরিতে অসামান্য নেতৃত্বদানের জন্য তাঁকে এই সম্মাননায় ভূষিত করা হয়।

মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত হয়ে বিতাড়িত ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে অতুলনীয় মানবতাবাদী নেতার ভূমিকা পালন করেছেন, সেজন্য বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নিউজ এজেন্সি আইপিএম তাঁকে ‘মাদার অব হিউমিনিটি’ উপাধিতে ভূষিত করে। শুধু তা-ই নয়, তিনি আইপিএম ইন্টারন্যাশনাল এচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড এবং ২০১৮ সালের স্পেশাল ডিস্টিংশন অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন।

জাতিসংঘের ইউএন উইমেন থেকে ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’, গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফোরাম থেকে ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ পুরস্কারসহ অনেক সম্মাননা ও স্বীকৃতিতে বাংলাদেশকে বিশ্বে মর্যাদাবান একটি জাতিরাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। বিশ্বখ্যাত ফোর্বাস ম্যাগাজিনের জরিপে বিশ্বের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় স্থান পাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুরস্কার এবং সম্মাননার দীর্ঘ তালিকা তুলে ধরা এ নিবন্ধের উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য বাংলাদেশের মতো দুর্নীতিতে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন (২০০১-২০০৬) একটি লজ্জিত রাষ্ট্রকে কতটা মাথা উঁচু করে দাঁড় করানো যায় সঠিক সুযোগ্য নেতৃত্বের গুণে, সেই সত্যটাই উপলব্ধি করার প্রয়াস।

করোনা আক্রান্ত পৃথিবীতে গত তিন বছর যে অর্থনৈতিক বিপর্যয় বিশ্বের উন্নত দেশগুলোকেও যে চরম দুর্ভোগ আর দুর্যোগে ঠেলে দিয়েছে, সে সময়ে বাংলাদেশ কর্মহীন দরিদ্র মানুষকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় খাবার দিয়ে, আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে, বিশ্বের উন্নত অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ করোনাজনিত ক্ষয়ক্ষতিও অনেকখানি রোধ করতে সক্ষম হয়েছে কেবল সুযোগ্য নেতৃত্বের কারণে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যোগাযোগ ক্ষেত্রে পশ্চাৎপদ বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে উন্নীত করার সুফল মানুষ মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছে করোনাকালীন বিচ্ছিন্ন সময়ে। সারা দেশের সঙ্গে তৃণমূল প্রশাসনের  সংযোগ রক্ষা করতে সরকার প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা নিয়মিত বৈঠক করেছেন, প্রতিটি অফিস আদালত দক্ষতার সঙ্গে দাফতরিক কার্যক্রম চালিয়েছে, দেশের শিক্ষাঙ্গনগুলোতে অনলাইন প্রক্রিয়ায় পাঠদান কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে কেবল ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সুবাদেই। রাজধানীর সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রেও নতুন যুগের সূচনা হয়েছে গত এক যুগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে।

বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন গরিব-দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর। জাতি হিসেবে বাঙালি বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে এই বাংলাদেশ হয়ে উঠবে উন্নত, সমৃদ্ধ সত্যিকারের সোনার বাংলা। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা হিসেবে শেখ হাসিনা সেই স্বপ্নই একের পর এক বাস্তবায়ন করে চলেছেন। যে পরাশক্তি একদিন বাংলাদেশকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছিল, ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে অপমানজনক অভিধা দিয়েছিল, আজ তারাও বাংলাদেশের উন্নয়নের তারিফ করে। বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ আজ মহিমান্বিত জাতিরাষ্ট্র।

মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী এদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যে সম্মান এবং সুবিধা বঙ্গবন্ধুকন্যা নিশ্চিত করেছেন, তা তুলনাহীন। বাংলাদেশে যাতে কোনও দরিদ্র মানুষ গৃহহীন না থাকে, এই লক্ষ্য বাস্তবায়নকল্পে ইতোমধ্যে লাখ লাখ দরিদ্র পরিবারকে নির্মাণ করে দিয়েছেন বাড়ি। জাতির পিতার জন্ম শতবর্ষ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীজুড়ে অব্যাহত ছিল দরিদ্র মানুষের গৃহায়নের কর্মসূচি, যা এখনও চলমান। পর্যায়ক্রমে দেশের গৃহহীন সব মানুষকেই আবাসন নিশ্চিত করার কর্মসূচি এগিয়ে চলেছে।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের তিনি বাংলায় ভাষণ দিয়ে বাংলা ভাষাকে অতীতের মতো এবারও মহিমান্বিত করেছেন। যুদ্ধবাজদের সংযত হতে অনুরোধ করেছেন তিনি তার ভাষণে। বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের মতো সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক ফোরামে যুদ্ধের বিরুদ্ধে শান্তির পক্ষে ভাষণ দিয়ে একজন বিশ্বনেতা হিসেবেই নিজেকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন, যা বাংলাদেশের জন্য পরম গৌরবের।

জয়তু শেখ হাসিনা! শুভ জন্মদিন প্রিয় প্রধানমন্ত্রী।

লেখক: অ্যাকাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি ও সিনিয়র সাংবাদিক। সাবেক পরিচালক (বার্তা), বাংলাদেশ টেলিভিশন।

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ