X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

নির্বাচন, কমিশন, প্রশাসন

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
১২ অক্টোবর ২০২২, ১৪:৩১আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০২২, ১৬:০২

জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে আর দেড় বছরেরও কম সময় বাকি আছে। তাই রাজনৈতিক অঙ্গনে কথাবার্তাও সেভাবেই চলছে। বড় দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের হাতে এবং কমিশনসহ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এখন তাই নিয়মিত সংবাদ শিরোনাম।

গত শনিবার জেলা পরিষদ নির্বাচন ও অন্যান্য নির্বাচন নিয়ে ডিসি-এসপিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। সেখানে এমন কিছু প্রসঙ্গ তুলেছেন তিনি যেগুলো নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। সিইসি বলেছেন, জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) দলীয় কর্মী হিসেবে নয়, সরকারি কর্মসূচি হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। তাহলে প্রশ্ন আসে, বাংলাদেশের ডিসি-এসপিরা কি দলীয় কর্মী? বা তারা এভাবেই দায়িত্ব পালন করেন? বলেছেন, এবার নির্বাচন কমিশন শক্ত অবস্থানে থাকবে। এর অর্থ হলো, অন্য সব নির্বাচনের সময় কি কমিশন শক্ত অবস্থানে ছিল না? কিন্তু এ কথা তো সত্যি যে নিকট অতীতে অনেক ভালো নির্বাচন হয়েছে। এই সভায় তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে। কীসের ভিত্তিতে তিনি এই আশা করছেন, সেটা পরিষ্কার নয়; যেখানে বিভিন্ন দলের সঙ্গে সঙ্গে তার সংলাপটাই অংশগ্রহণমূলক হয়নি। তার ডাকে বিএনপি ও বাম ঘরানার বড় দলগুলো যায়নি সংলাপ করতে। ইভিএম বিষয়ে তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে ভোটারদের আরও প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, খোদ ইভিএম নিয়েই তো কোনও সমঝোতা হলো না এখন পর্যন্ত। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিএনপি তো বিরোধিতা করছেই, সিপিবি-বাসদও এর বিরুদ্ধে বলছে। সরকারের অংশীদার বা অনুগত বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত জাতীয় পার্টিও এখন ইভিএম বিরোধী। প্রশ্ন হলো, কীসের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট নেবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে? ৩০০ আসনেই বা কেন ইভিএমে ভোট নয়? এমন প্রশ্নের উত্তরও আশা করি কমিশনের কাছে নেই। সবশেষ, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন প্রসঙ্গে বলেছেন, প্রয়োজন হলে সেনাবাহিনী নামানো হবে। প্রয়োজনটা কেন তিনি বোধ করছেন না, তার ব্যাখ্যাই বা কী?

দেশে নিয়মিত নির্বাচন হয়। নানারকম নির্বাচন হয়। স্থানীয় থেকে কেন্দ্রীয় সব নির্বাচনকেই রাজনৈতিক নেতৃত্ব যথেষ্ট গুরুত্বও দেন। তীব্র গরম বা শীতেও তারা প্রচারণা চালান। নির্বাচন কমিশনও প্রচুর শ্রম ও অর্থ ব্যয় করেন। কিন্তু নির্বাচনের যে প্রধান অংশীজন ভোটার– তাদের কথা কি কোথাও ভাবা হয়?

একটা সময় ছিল যখন মানুষ ভালো প্রার্থীর মর্যাদা দিতো। এখন এই অতি বিভাজিত রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে তার প্রয়োজন নাই। ভালো প্রার্থী, ভালো কাজের এখন আর দরকার নেই। বরং ধর্ম নিয়ে আবেগ উসকে দিলে কাজ হয় বেশি, বা নির্বাচনে এক পক্ষকে কোনোক্রমে দূরে রাখতে পারলে বা শুধু শাসক দলের টিকেটখানি বাগাতে পারলেই হয়, নির্বাচনে জয় সুনিশ্চিত। আর যদি ভিন্ন পক্ষ থাকে, তবে তো সব রকম প্রভাব বিস্তার করার রীতি আছেই।

এখানেই নির্বাচন কমিশনের নিজস্বতা আশা করে মানুষ। শনিবারের সভায় সিইসি বলেছেন, জেলা ও পুলিশ প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে চেষ্টা করে কিন্তু সংসদীয় ব্যবস্থা এমন যে সরকার ও দল আলাদা করা অনেক সময় কষ্টকর। অনেক সময় অলক্ষ্যে প্রভাব চলে আসতে পারে। এখানেই নির্বাচন কমিশনের শক্ত অবস্থান আশা করে মানুষ। প্রশাসনের কর্মীরা আচরণবিধি মেনে গণকর্মচারী হিসেবে অর্পিত দায়িত্ব পালন না করলে যদি দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তবেই ইতিবাচক প্রভাব পড়বে পুরো নির্বাচনি ব্যবস্থাপনায়।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, নির্বাচনের সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও এর অধীন যেসব বাহিনী আছে, যাদের নির্বাচনের কাজে সংশ্লিষ্টতা থাকবে, তারা কমিশনের অধীন থাকবে। তাই তাদের যেকোনও নির্দেশনা মানতে তারা বাধ্য থাকবে। কিন্তু একটা উত্তর পাওয়া গেলো না– যদি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের কোনও নির্দেশ না মানেন, তাহলে তিনি কী করবেন? তবে তার আভাস পাওয়া গেলো শনিবারের সভায়ও। নির্বাচন কমিশনার আনিসুর রহমান যখন ডিসি-এসপিদের দলীয় পক্ষপাত ও আর্থিক সততা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন, তখন তারা জোর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তার কথা শুনতেই চাইলেন না। একপর্যায়ে তাকে বক্তৃতা শেষ না করেই মঞ্চ থেকে নেমে যেতে হলো। এগুলো ভিন্ন সংকেত দেয় মানুষের কাছে।

নির্বাচনকালীন সরকারের ধরন নিয়ে বিএনপি যে দাবি করে আসছে সেই সমাধান কমিশনের হাতে নেই। কিন্তু যেটা আছে সেটার চ্যালেঞ্জ অনেক। এগুলোর মধ্যে রয়েছে– নির্বাচন কমিশনের ওপর রাজনৈতিক দল ও সমাজের আস্থা সৃষ্টি, প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন নিশ্চিত করা, অর্থ ও পেশিশক্তির নিয়ন্ত্রণ করা, সব দল ও প্রার্থীকে আচরণবিধি অনুসরণ করানো, নিয়মতান্ত্রিক প্রচারে প্রার্থীদের বাধার সম্মুখীন না হওয়া এবং ভোটকেন্দ্রে প্রার্থী, এজেন্ট ও ভোটারদের অবাধ যাতায়াত নিশ্চিত করা।

গত দুটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে রাজনৈতিক দল ও জনগণের একটা বড় অংশের মধ্যে আস্থার যে সংকট তৈরি হয়েছে, সেই সংকট দূর করতে কমিশন কী ভূমিকা রাখে সেটা দেখার বিষয়। আগামী দ্বাদশ নির্বাচনকে ঘিরে একটি বড় চ্যালেঞ্জের সমাধান অবশ্য কমিশনের হাতে নেই। দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল বলছে, দলীয় সরকারের অধীনে তারা নির্বাচনে যাবে না। এই রাজনৈতিক বাধা কীভাবে অতিক্রম করা যায় সেটা নির্বাচন কমিশন ও রাজনীতি– উভয়কেই ভাবতে হবে।

লেখক: সাংবাদিক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘জুনের মধ্যে ১০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন হবে’
‘জুনের মধ্যে ১০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন হবে’
জাবি ছাত্রলীগের সেই ৩ কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ 
জাবি ছাত্রলীগের সেই ৩ কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ 
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ