X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রশ্ন অনেক

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
২২ নভেম্বর ২০২২, ১৭:৩৭আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০২২, ১৭:৩৭

২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশের ইতিহাসে নৃশংসতম জঙ্গি হামলার পর জঙ্গিবাদ দমন ও জঙ্গি ‘খতমে’ পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সাফল্য নিয়ে অনেক শব্দ ও বাক্য লেখা ও বলা হয়েছে। কিন্তু কোথাও না কোথাও যে ফাঁকফোকর রয়েছে, সমস্যা রয়েছে, সেটা আর অস্বীকার করার উপায় থাকলো না পুরনো ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ আদালত চত্বর থেকে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায়। ছিনতাইকৃত দুই জঙ্গি নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের (সাবেক আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) সদস্য। জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সল আরেফিন দীপন ও লেখক-ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট সহ বিশেষায়িত সংস্থাগুলো এখন ঘটনার চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে। সেটা তারা করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু জনগণ স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছে না এ ঘটনাকে। তাদের মনে ভয় ধরেছে তবে কি এরা আবার বড় কিছু করার পরিকল্পনা করছে? এর আগে ময়মনসিংহের ত্রিশালে জঙ্গিদের ঢাকায় আনার পথে পুলিশকে আক্রমণ করে ফিল্মি কায়দায় জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।

আদালত পাড়ার ঘটনায় তদন্ত কর্তারা বলছেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় আনসার আল ইসলামের ১০ জনের বেশি সদস্য অংশ নেন। তারা আটটি মোটরসাইকেলে করে ঘটনাস্থলে আসে। দুটি ভাগে ভাগ হয়ে তাদের একটি দল আদালতে পুলিশের ওপর হামলা করে, আরেকটি দল আশপাশের কয়েকটি গলির ভেতরে মোটরসাইকেল নিয়ে অপেক্ষা করছিল। ঘটনার পর দুই সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গিসহ অন্যরা এসব মোটরসাইকেলে পালিয়ে যায়।

জঙ্গিরা কতখানি খারাপ, কতটা ভয়ংকর, সেটা বলার কোনও অপেক্ষা রাখে না। অনেকে এই ঘটনায় রাজনীতির রঙ মেশাতে চাইবেন, সেটাও আমরা জানি। কিন্তু সেসব বিতর্ক এ মুহূর্তে অবান্তর। যারা সব ঘটনায় রাজনীতি খোঁজে তারা এখানেও সেটা আনবে, নাটক বলবে, এটা বলবে, সেটা বলবে। তারা এ মুহূর্তকেও নষ্ট হতে দেবেন না রাজনীতির কূটচাল থেকে। সেসব তর্কে কান দিলে চলে না। বরং বলতে হয় মুহূর্তের একমাত্র তাৎপর্যপূর্ণ প্রশ্নটি অপেক্ষা করছে: পুলিশের ওপর হামলা করা সম্ভব হলো কীভাবে?

কোথাও সন্ত্রাসী হামলা বলে কয়ে ঘটে না। কিন্তু এরাতো পুলিশের হাতে বন্দী ছিল এবং নিশ্চয়ই এমন বন্দীদের আদালতে আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। যারা দায়িত্বে ছিলেন এরা সবাই যথেষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেননি। ঘটনার পরপরই পুরো আদালত চত্বর নিরাপত্তারক্ষীরা ছেয়ে ফেলেছিলেন। আগে কেন হলো না? এতটা নির্বিঘ্নে পালিয়ে যেতে পারলো? সিসিটিভি ফুটেজে একজনকে দেখা গেলো মটরসাইকেলে উঠতে না পেরে প্রথম দৌড়ে, পরে হেঁটে হেঁটে চলে গেলো, কেউ আটকালো না, তাকে কেউ ধাওয়াও করলো না। কেন এত এত চেকপোস্টের কোনোটিতেই তাকে আটকানো হয়নি, সে প্রশ্নের উত্তরও নেই। একজন সাধারণ আসামিকে আদালতে নেওয়া হলে যে পরিমাণ পুলিশ দেখা যায়, এই জঙ্গিদের বেলায় সেটা ছিল না। আমরা যতভাবেই বলি না কেন, তাতে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর মিলছে না।

নিরাপত্তা গাফিলতির প্রশ্নটিই বারবার উঠছে এবং উঠবে। লেখক-প্রকাশক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গিদের এভাবে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা আদালতের এবং সামগ্রিক নিরাপত্তাব্যবস্থার গুরুতর ত্রুটিকে সামনে নিয়ে এসেছে। প্রয়োজনের তুলনায় সামগ্রিকভাবেই আদালতে নিরাপত্তা কর্মী কম এবং এই আসামিদের বেলায় সেটা আরও কম ছিল। সহজ হিসেব বলে যে, নিরাপত্তার এ দুর্বলতাকেই কাজে লাগিয়েছেন জঙ্গিরা।

আগেই উল্লেখ করা হয়েছে জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। ২০১৪ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে জেএমবির তিনজন সদস্যকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এ ধরনের অভিজ্ঞতার পর নিশ্চয়ই এস ও পি-তে পরিবর্তন এনে আরও জোরদার করা হয়েছিল সংঘবদ্ধ ও ধর্মীয় মতাদর্শ দ্বারা উদ্দীপিত অপরাধীদের আনা নেওয়ার ব্যবস্থায়। বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথাটি এ কারণেই উঠছে। উঠছে নিরাপত্তা গাফিলতির কথাও। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিজেরাই বলেছে, জঙ্গিরা হাতকড়া খুলে পালিয়েছেন। তাদের কাছে কীভাবে হাতকড়ার চাবি গেলো? কারাগারে তারা ডান্ডাবেরি ও কনডেম সেলে থাকার কথা, তারা বাইরের সহযোগীদের এই পরিকল্পনার সাথে কীভাবে সংশ্লিষ্ট হলো?

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়া এবং তাদের নির্বিঘ্নে পালিয়ে খুবই অস্বাভাবিক ঘটনা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জঙ্গিবাদ দমনে যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়ে চলছে। সাধারণ মানুষের মধ্যেও তৈরি হয়েছিল জঙ্গিবাদবিরোধী মানসিকতা। কিন্তু সবার নাকের ডগায় আদালত প্রাঙ্গণের মতো স্পর্শকাতর এলাকা থেকে জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা কীভাবে সম্ভব, সেই প্রশ্ন করছে নিরাপত্তাবাহিনীর প্রশংসা করা মানুষেরাই।

জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিলে কী হয় তার প্রমাণ আফগানিস্তান ও পাকিস্তান। পাকিস্তানের শাসনযন্ত্র, তার রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ, বিচারবিভাগ, সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলো সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে কোনও কঠোর দমননীতি গ্রহণ করতের পারছে না। অবস্থাটা এমন যে সেখানে জেহাদিরা নির্ভয়ে যত্রতত্র ঘাঁটি গাড়ছে, সেনা-দফতর ও পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সহ বিমানঘাঁটি ও নৌবন্দরে জঙ্গি হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তানের গোটা শাসনব্যবস্থাকেই প্রভাবিত করছে জঙ্গিরা। সেখানে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে ভয় পায়। রাজনীতিকরা তাদের সাথে দরকষাকষি করেন। আর সাধারণ মানুষ সদাসন্ত্রস্ত থাকে।

আমরা এমন অবস্থা কোনোভাবেই চাই না। পলাতক জঙ্গিদের দ্রুত আটক ও যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনা কেন ঘটলো তা বের করা যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি দেশব্যাপী আবার জঙ্গি বিরোধী জনমতকে চাঙ্গা করা, জাগিয়ে তোলা।

লেখক: সাংবাদিক

 

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ