X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

দেশব্যাপী বিজয় দিবস পালন হোক স্মৃতিসৌধে

মো. আবুসালেহ সেকেন্দার
১২ ডিসেম্বর ২০২২, ১৮:৩৪আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২২, ১৮:৩৪

প্রতি বছরের মতো এই বছরও ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের শোক কাটিয়ে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উদযাপন করবে সারা দেশ। বিজয়ের রঙ পথঘাট, নগর-বন্দর, শহর-গ্রামে ছাড়িয়ে যাবে। এই বছর শুধু এমনটি ঘটবে তা নয়; স্বাধীনতার পর থেকে প্রতি বছরই ১৬ ডিসেম্বরে এ দেশের সাধারণ মানুষ, শিশু-কিশোরেরা এমন বিজয়ের উৎসবে মাতোয়ারা হয়েছে।

যত ব্যস্ততাই থাক, বিজয়ের দিনে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশে ফুল দেওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে এই দিনের জন্য রাখেন বাড়তি প্রস্তুতি। নতুন পোশাকে ছেলেমেয়েদের সাজিয়ে পালন করেন বিজয় দিবস। পোশাকে যেমন থাকে দেশপ্রেমের ছোঁয়া, তেমনি বাড়িতে আয়োজন করা হয় বিশেষ খাবারের। উৎসব উৎসব ভাব থাকে ধনী দরিদ্র সবার ঘরে।

প্রতি বছর এমন আনন্দ উৎসবের সংবাদ ও ছবি গণমাধ্যমগুলো বেশ ফলাও করে প্রকাশ করে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সব জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকায় বিজয় উৎসবের ছবি প্রকাশিত হবে। ছাপা হবে সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিজয় উৎসব পালনের রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সংগঠন, সুশীল সমাজ, প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের বিজয় উৎসব পালনের ছবি। বিগত বছরগুলোর ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে ঢাকায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিজয় দিবস পালন করা হলেও সারা দেশের অধিকাংশ স্থানে বিজয় দিবস পালন করা হবে শহীদ মিনারে। একাত্তরের মহান বীরদের স্মৃতিতে ফুল দেওয়া হবে শহীদ মিনারে।

প্রতি বছর এমনটিই আমরা দেখে আসছি। তাই এ বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবা যায়। কারণ, শহীদ মিনার আর স্মৃতিসৌধ দুটি ভিন্ন বিষয়। একটি বিজয়ের হলেও অন্যটি শোকের স্মারক।

বিজয় দিবসের দিন বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতিতে ফুল দেওয়াটা দোষেরও নয়। ১৬ ডিসেম্বর শুধু একাত্তরের শহীদ বীর যোদ্ধাদের নয়; দেশের জাতীয় ইতিহাসের সব শহীদ বীর যোদ্ধাদেরও স্মরণ করা উচিত। তিতুমীর থেকে সূর্যসেন, ভাষাশহীদ রফিক থেকে আসাদ সবারই রক্তস্নাত আত্মত্যাগই আমাদের দিয়েছে স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার। ধাপে ধাপে আমরা স্বাধীনতার দিকে এগিয়েছি। পেয়েছি গণতন্ত্রের অধিকার। কথা বলার অধিকার। দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি। পরাধীনতা থেকে স্বাধীনতা। স্বাধীন বাংলাদেশেও যারা গণতন্ত্রের জন্য গণমানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন, প্রাণ উৎসর্গ করেছেন, তাদেরও স্মরণ করা উচিত বিজয় দিবসে। তাহলে জাতি হিসেবে আমরা যে অকৃতজ্ঞ নই সেটা প্রমাণিত হবে। কিন্তু প্রশ্ন এই বিষয়ে নয়। প্রশ্ন হচ্ছে, বিজয় দিবসের উৎসব কেন স্মৃতিসৌধে না হয়ে শহীদ মিনারে হয়?

সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের মতো সারা দেশের প্রায় অধিকাংশ স্থানে কোনও স্মৃতিসৌধ নেই। এমন অনেক জেলা অথবা থানা আছে যেখানে একটি স্মৃতিসৌধ খুঁজে পাওয়া যাবে না। দেশের প্রায় শতভাগ স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়েরও একই অবস্থা। সেখানেও নেই কোনও স্মৃতিসৌধ। ফলে শহীদ মিনারই শেষ ভরসা। তাই একুশে ফেব্রুয়ারির মতো বুদ্ধিজীবী অথবা বিজয় দিবসে শহীদদের স্মৃতিতে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া যেন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতা লাভের এত বছরেও সারা দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেন স্থায়ীভাবে স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়নি ওই প্রশ্ন উত্থাপন করা দরকার।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলা হয় বাংলাদেশের প্রগতিশীল আন্দোলনের সূতিকাগার। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ছেষট্টির ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি গণআন্দোলনের পবিত্র ভূমি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য এখনও প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়নি। তাই অবিলম্বে স্কুল কলেজ মাদ্রাসার পাশাপাশি প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েও স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা দরকার। বিশ্ববিদ্যালয় হলগুলোয়ও শহীদ মিনারের পাশাপাশি স্মৃতিসৌধ চাই।

বাংলাদেশের অনেক জেলায় স্মৃতিসৌধ নির্মিত আছে সত্য। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দক্ষিণের জনপদ খুলনায় ২০১৪ সালে স্মৃতিসৌধের উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু প্রতিটি জেলায় দুই একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ যথেষ্ট নয়। প্রতিটি স্কুল কলেজ মাদ্রাসা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা শহীদ মিনারের পাশাপাশি স্মৃতিসৌধ চাই, যাতে ওই স্মৃতিসৌধে প্রতি বছর বিজয় দিবসে একাত্তরের শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশে আম-জনতা ফুল দিতে পারে। আর এমনটি সম্ভব হলেই শিক্ষার্থীরাসহ সাধারণ মানুষ শহীদ মিনার ও স্মৃতিসৌধের পার্থক্য জানতে পারবে। কোনও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও তারা ভাষা আন্দোলন থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের ধারাবাহিকতা বুঝতে পারবে।

এক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে যেমন স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে; তেমনি আর একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিজয় দিবসের উৎসব স্মৃতিসৌধে উদযাপনের নির্দেশ দিতে পারে। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্মৃতিসৌধ নেই তারা অস্থায়ী ভিত্তিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে বিজয় দিবসের উদযাপন করবে তার প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান এখন সময়ের দাবি।

শহীদ মিনার শোকের স্মৃতি বহন করে। অন্যদিকে স্মৃতিসৌধ বিজয়ের স্মারক হিসেবে ধরে নেওয়া যায়। এটিও শহীদদের স্মারক। তাই সরকারের কাছে দাবি থাকবে সরকারি উদ্যোগে সারা দেশে মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স নির্মাণের পাশাপাশি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হোক। আশা করি প্রতিটি স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় স্মৃতিসৌধ নির্মাণের স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতিবিদরাও উদ্যোগ নেবেন।

বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত করাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনারের পাশাপাশি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা প্রয়োজন। আর প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনারের পাশাপাশি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা সম্ভব হলে প্রতিটি বিজয় দিবস পালন করা যাবে স্মৃতিসৌধে। এবার যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্মৃতিসৌধ নেই আমাদের দাবি থাকবে তারা যেন অস্থায়ী ভিত্তিতে হলেও স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে বিজয় উৎসব পালন করে। এ বিষয়ে নির্দেশনা সরকার থেকে প্রদান করা হোক।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

[email protected]

 
 
/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
টেকনাফে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেফতার ৬
টেকনাফে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেফতার ৬
সিলেটে ভবন থেকে পড়ে যুবকের মৃত্যু
সিলেটে ভবন থেকে পড়ে যুবকের মৃত্যু
এক ফ্রেমে এত ‘সুন্দরী’, স্মৃতিকাতর সকলেই!
এক ফ্রেমে এত ‘সুন্দরী’, স্মৃতিকাতর সকলেই!
ফোরাম থেকে ব্যারিস্টার খোকনের অব্যাহতির আদেশ প্রত্যাহার
ফোরাম থেকে ব্যারিস্টার খোকনের অব্যাহতির আদেশ প্রত্যাহার
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ