শেষ হলো বিশ্বের বৃহত্তম সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশ ভারতের সাধারণ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ পর্ব। সাত দফায় অনুষ্ঠিত হলো এবারের ভোটগ্রহণ। ৪ জুন ফলাফল প্রকাশ করা হবে। সেদিনই জানা যাবে কেন্দ্রের গদিতে কোন দলকে বসালো জনগণ—আবারও বিজেপির নেতৃত্বে থাকা এনডিএ জোট নাকি ইন্ডিয়া জোট। তবে ভোট গণনার আগেই স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ও বিভিন্ন সমীক্ষা সংস্থাগুলোর তরফ থেকে বুথফেরত সমীক্ষা বা এক্সিট পোল প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিটি এক্সিট পোলেই আভাস মিলেছে, আবারও কেন্দ্রের ক্ষমতায় আসছে বিজেপি। একইসঙ্গে তাদের নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার ৪০০ আসন পারের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ করতে পারে।
এখন পর্যন্ত বুথ ফেরত সমীক্ষাগুলোতে দেখা যাচ্ছে, ‘ইন্ডিয়া টুডে-অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়া’-এর এক্সিট পোল অনুসারে, এনডিএ ৩৮১টি আসন, ইন্ডিয়া জোট ১৪৮টি এবং অন্যরা ১৪টি আসন পেতে পারে। একই সময়ে ‘সি ভোটার’-এর সমীক্ষা অনুসারে, চলতি লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ ৩৬৮টি আসন পেতে পারে। আর ইন্ডিয়া জোট ১৬৭টি এবং অন্যরা পেতে পারে ৮টি আসন।
‘চাণক্য’-এর এক্সিট পোল অনুসারে, বিজেপি ৪০০টি আসন পেতে পারে। ইন্ডিয়া জোট পেতে পারে ১০৭টি এবং অন্যরা ৩৬টি আসন। ‘জন কি বাত’ এক্সিট পোল অনুসারে, এনডিএ ৩৬২ থেকে ৩৯২টি আসন পেতে পারে। ইন্ডিয়া জোট ১৪১ থেকে ১৬১টি এবং অন্যরা পেতে পারে ১০ থেকে ২০টি আসন। ‘ইন্ডিয়া নিউজ ডায়নামিক্স’-এর এক্সিট পোলে, ৩৭১টি লোকসভা আসন পেতে চলেছে এনডিএ। ইন্ডিয়া জোট পাবে ১২৫টি এবং অন্যরা ৪৭টি আসন।
রিপাবলিক টিভির ম্যাট্রিজ এক্সিট পোলের সমীক্ষা অনুযায়ী, এনডিএ ৩৫৩ থেকে ৩৬৮টি আসন পেতে পারে। যেখানে ইন্ডিয়া জোট ১১৮ থেকে ১৩৩টি এবং অন্যরা পেতে পারে ৪৩ থেকে ৪৮টি আসন। একই সময়ে, ‘রিপাবলিক টিভির পিএমএআরকিউ এক্সিট পোল’-এর তথ্যমতে, এই নির্বাচনে এনডিএ ৩৫৯টি, ইন্ডিয়া জোট ১৫৪টি এবং অন্যরা ৩০টি আসন পেতে পারে।
টিভি৯ নেটওয়ার্ক, পোলস্ট্র্যাট পিপলস ইনসাইট-এর এক্সিট পোল অনুযায়ী, জয়ের হাটট্রিক করতে চলেছে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ। আর তৃতীয়বারের মতো কেন্দ্রের ক্ষমতায় ফিরতে চলেছে বিজেপি এবং ফের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদি। এক কোটি জনগণের মতামতের ওপর ভিত্তি করে তৈরি বুথফেরত সমীক্ষা অনুযায়ী, লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ পেতে যাচ্ছে ৩৪৬টি আসন। আর ইন্ডিয়া জোট ও অন্য দলগুলো যথাক্রমে পেতে যাচ্ছে ১৬২টি ও ৩৫টি আসন।
এবার পশ্চিমবঙ্গেও চমকপ্রদ ফল করতে চলেছে বিজেপি। এমনই আভাস মিলেছে বুথফেরত সমীক্ষায়। পশ্চিমবঙ্গের ৪২ আসনের মধ্যে অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়ার এক্সিট পোলে দেখা গেছে, বিজেপি ২৬ থেকে ৩১ এবং তৃণমূল ১১ থেকে ১৪টি আসন পেতে পারে। সি ভোটারের বুথফেরত সমীক্ষায় বলছে, ১৩ থেকে ১৭টি আসন পেতে পারে তৃণমূল, বিজেপি পেতে পারে ২৩ থেকে ২৭ আসন আর বাম-কংগ্রেস ১ থেকে তিনটি।
তবে বুথফেরত সমীক্ষাগুলো ‘ধ্রুব সত্য’ নয়। অনেক সময় তা শতভাগই বিপরীত হতে দেখা গেছে। জান কি বাত-এর সমীক্ষা অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল ১৬ থেকে ১৮টি, বিজেপি ২১ থেকে ২৬টি এবং বাম কংগ্রেস জোট ৩টি আসন পেতে পারে। নিউজ ১৮ মেগা এক্সিট পোলের সমীক্ষায় পশ্চিমবঙ্গের ৪২ আসনে বিজেপি পেতে পারে ২১ থেকে ২৪টি।
কেন এই জয়ের আভাস, এ নিয়ে বলতে গিয়ে দিল্লিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের (সিপিআর) জ্যেষ্ঠ ফেলো নীলাঞ্জন সরকার বলেন, মোদি বিপুল জনপ্রিয়। আর এ কারণেই বিজেপির সব প্রচারের কেন্দ্রে ছিলেন তিনি। বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোট দেশটির দক্ষিণের রাজ্যগুলোয় ভালো করবে বলে অনুমান করা হচ্ছিল। কিন্তু বেশিরভাগ বুথফেরত জরিপে দক্ষিণের রাজ্যগুলোয় বিজেপি অত্যাশ্চর্য সাফল্য অর্জন করতে যাচ্ছে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
কী কারণে বিজেপি হ্যাটট্রিক করবে তা ব্যাখ্যা করেছেন সাবেক ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর। নরেন্দ্র মোদি বা বিজেপির বিকল্প নেই বলে যে একটা তত্ত্ব উঠে আসছে, এটির সঙ্গেও একমত নন তিনি। তার কথায়, ‘মূল ব্যাপারটার ওপর নজর দিতে হবে আমাদের। কোনও সরকার এবং সেই সরকারের নেতার বিরুদ্ধে যদি ক্ষোভ তৈরি হয়, তাহলে বিকল্প থাকুক না বা থাকুক মানুষ সেই সরকারকে হারিয়ে দিতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা মোদিজির বিরুদ্ধে সার্বিক জনরোষের কথা শুনিনি। প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় হতাশা থাকতে পারে। কিন্তু জনরোষ তৈরি হয়নি।’
এ বিষয়টি পরিষ্কার, বুথফেরত সমীক্ষা যদি মিলে যায় তবে বুঝতে হবে বিরোধীদের অনৈক্য, নেতৃত্বহীনতায় ভারতের জনগণ অসন্তুষ্ট। পাশাপাশি বিজেপির মোদির নেতৃত্বে নতুন ভারতের ডাকেই সাড়া দিয়েছেন তারা।