ভারতের লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা তৃতীয়বার ক্ষমতা যাওয়া প্রায় নিশ্চিত ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট প্রায় ৩০০ আসনে জয়ী হতে যাচ্ছে। কিন্তু মঙ্গলবার ভোট গণনায় দেশটিতে বিরোধী দলগুলোর ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়টি ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। বুথ ফেরত জরিপগুলোর পূর্বাভাসের তুলনায় অনেক ভালো অবস্থায় রয়েছে বিরোধীদের ইন্ডিয়া জোট। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
এবারের লোকসভা নির্বাচনে মোদির বিজেপির টার্গেট ছিল ৩৭০ আসনে জয়ী হওয়া। এনডিএ জোট ৪ শতাধিক আসনে জয়ী হবে বলে দাবি করেছিলেন মোদি। কিন্তু এখন পর্যন্ত পাওয়া ফলাফলে বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে বলে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেছে। ভারতীয় সময় বিকাল ৫টা পর্যন্ত এনডিএ জোট ২৯৬ আসনে এগিয়ে রয়েছে। জোটের প্রধান দল বিজেপি এগিয়ে রয়েছে ২৪১ আসনে। আর বিরোধীদের ইন্ডিয়া জোট এগিয়ে আছে ২২৮ আসনে। জোটের বড় দল কংগ্রেস ১০০ আসনে এগিয়ে।
ভারতের বৃহত্তম রাজ্য উত্তরপ্রদেশে সুবিধা করতে পারেনি বিজেপি। এখানে ইন্ডিয়া জোটের সমাজবাদী পার্টি ও কংগ্রেস ৪০টির বেশি আসনে এগিয়ে রয়েছে। এনডিএ জোট ত্রিশের কোটায় রয়েছে। ২০১৪ সালে উত্তর প্রদেশে বিপুল জয় পেয়েছিল বিজেপি এবং ২০১৯ সালেও সেই ধারা ধরে রেখেছিল দলটি।
অপর দুটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ রাজ্যও বিজেপির পক্ষে যায়নি। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির প্রত্যাশা ছিল অনেক। কিন্তু এবার রাজ্যটিতে তাদের ফলাফল ২০১৯ সালের চেয়ে খারাপ হতে পারে। বিকাল ৩টা পর্যন্ত বিজেপি ১১টি আসনে এগিয়ে চিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস ৩১ আসনে এগিয়ে রয়েছে।
মহারাষ্ট্রে শিব সেনা ও ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি) ভালো করছে। উদ্ভব থ্যাকারের শিব সেনা ১১টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। শিন্ডের সেনা অংশ এগিয়ে ছিল ৫টি আসনে। অজিত পাওয়ারের এনসিপি মাত্র একটি আসনে এগিয়ে, তারা চাচা শারদ পাওয়ারের এনসিপি ৭টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। বিজেপি ও কংগ্রেস যথাক্রমে ১২ ও ১১ আসনে এগিয়ে রয়েছে।
উড়িষ্যা, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানাতে আসন হারাতে পারে বিজেপি।
এবারের নির্বাচনে প্রচারণা ছিল উত্তেজনাপূর্ণ। ভোটারদের মনোভাব বুঝতে পারেনি বিভিন্ন জরিপ সংস্থা। বুথ ফেরত জরিপে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট চার শতাধিক আসন পাবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, বিরোধীদের একেবারে ধ্বস নামবে। অবশ্য ভারতে বুথ ফেরত জরিপগুলোর পূর্বাভাস ভুল প্রমাণিত হওয়ার অতীত ইতিহাস রয়েছে।
প্রতিটি নির্বাচনের মতো বিজেপি নিজের শক্তিশালী নির্বাচনি মেকানিজমকে আগেভাগেই মাঠে নামিয়েছিল। তারকাখতিচ প্রচারণায় উন্নয়ন, অর্থনীতি ও স্বাধীনতার শতবর্ষপূর্তিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। আগের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি– ৩৭০ ধারা বাতিল ও অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের সফলতা– তুলে ধরা হয়েছিল জোরেশোরে।
এবারের প্রচারণায় বড় পার্থক্য ছিল ক্ষমতাসীন জোটের বিরুদ্ধে বিরোধীদের আক্রমণাত্মক মনোভাব। যা ২০১৯ সালের নির্বাচনের পূর্বে ছিল না। বিরোধী জোট শুরুতে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস বনাম তৃণমূল, পাঞ্জাবে কংগ্রেস বনাম আম আদমি পার্টি বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। কিন্তু বিজেপির বিরুদ্ধে সংবিধান পাল্টে দেওয়া ও কোটা বাতিলের যে আখ্যান তারা তুলে ধরেছে, শেষ পর্যন্ত তা ভোটে বড় প্রভাব ফেলেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয়েছে সাত ধাপে। শনিবার শেষ হয় ভোটগ্রহণ। সরকার গঠন করতে ২৭২টি আসনের প্রয়োজন হয়।