X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ থামাতে মধ্যস্থতায় নামছেন শি জিনপিং?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৭ মার্চ ২০২৩, ১৮:২৪আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২৩, ২০:০২

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নিজেকে বৈশ্বিক রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে সামনে তুলে ধরছেন। দুই আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরব ও ইরানের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চুক্তিতে তার দেশ মধ্যস্থতা করেছে। একই সঙ্গে বিশ্বের বৃহত্তম নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জগুলোর অবসানে চীনা সমাধান ও জ্ঞানের মহিমা ঊর্ধ্বে তুলে ধরছেন তিনি। এবার শি জিনপিং নিজেকে ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছেন। দীর্ঘ লড়াই অবসানে সম্ভবত তিনি মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নেবেন।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আমন্ত্রণে ২০ থেকে ২২ মার্চ রাশিয়া সফর করবেন চীনা প্রেসিডেন্ট। মস্কো সফরের পর তিনি ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনালাপ করবেন। ইতোমধ্যে চীন একটি শান্তি প্রস্তাব হাজির করেছে। যদিও এতে সংঘাতের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়নি। যেমন, আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার আহ্বান থাকলেও রুশ সেনারা ইউক্রেনের দখলকৃত ভূখণ্ড ছাড়বে কিনা তা স্পষ্ট করা হয়নি। শুক্রবার এক চীনা কর্মকর্তা বলেছেন, শি জিনপিংয়ের রাশিয়া সফর ‘শান্তির স্বার্থে ’।

চীনকে সম্ভাব্য রূপান্তরকারী শক্তি হিসেবে বিবেচনা করে রাশিয়া ও ইউক্রেন। উভয় দেশ ভালো করেই জানে, যুদ্ধে যদি দেশটি সরাসরি ভূমিকা রাখতে শুরু করে তাহলে পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। বিশেষ করে রাশিয়ার গোলাবারুদের ঘাটতি পুষিয়ে দিতে যদি অস্ত্র সরবরাহ শুরু করে বেইজিং।

বেইজিংয়ের রেনমিন ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এক অধ্যাপক শি ইয়িনহং বলেন, অতীতের যেকোনও সময়ের তুলনায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বড় শক্তি হিসেবে চীনের আন্তর্জাতিক প্রভাব প্রয়োজনীয়।

রিয়াদ ও তেহরানের মধ্যে চুক্তির মধ্যস্থতা করার পর চীনের বৈশ্বিক গুরুত্ব যে বাড়ছে সেটি অনুধাবনে বেইজিংয়ের মনোভাব প্রতিফলিত হচ্ছে এই মন্তব্যে।

যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগে যদি শি জিনপিং গতি আনতে পারেন তাহলে এটি তার আরেকটি প্রয়োজনীয়তা পূরণ করবে: ইউরোপের সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্ক জোড়া লাগানো। দেশের অর্থনীতি যখন সংকটে তখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ একটি অঞ্চলের কাছ থেকে চীনকে লক্ষ্য করে বাণিজ্য ও বিনিয়োগে নিষেধাজ্ঞা চান না তিনি।

বিশ্লেষকদের মতে, নিষেধাজ্ঞা এড়াতে হলে শি জিনপিংকে রাশিয়ার যুদ্ধ বন্ধে একটি দৃঢ় পদক্ষেপ দেখাতে হবে। এমন কিছু হলে চীনকে মোকাবিলায় মার্কিন চাপে ইউরোপীয় ইউনিয়নে বিভক্তি দেখা দিতে পারে। তিনি যদি এটি করতে সক্ষম হন তাহলে জার্মানি ও ফ্রান্সের মতো শক্তিগুলো বেইজিংয়ের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করবে।

এশিয়ার সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাবেক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড্যানি রাসেল বলেন, শি জিনপিংয়ের নিশানা রাশিয়া বা ইউক্রেন নয়, তার মূল লক্ষ্য হলো পশ্চিম ইউরোপ।

মস্কোর জন্য শান্তি আলোচনার বাধাগুলো অনেক বড়। পশ্চিমারা শান্তি আলোচনার শর্ত হিসেবে ইউক্রেন থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহারের দাবি প্রত্যাখ্যান করে আসছেন পুতিন। শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে পুতিন সামরিক-মানের উপাদান ও চীনে রফতানি বাড়ানোর আহ্বান জানাতে পারেন। এর ফলে রাশিয়া জোর দিয়ে বলতে পারবে বৈশ্বিক সম্প্রদায় থেকে তারা একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়নি।

ইউক্রেনের জন্য চীন দীর্ঘদিন ধরে সম্ভাব্য লাইফলাইন হিসেবে ছিল। রাশিয়াকে যুদ্ধ থেকে বিরত রাখার মতো ক্ষমতা দেশটির আছে বলে মনে করে কিয়েভ। ওয়াশিংটনের উৎসাহে জেলেনস্কি সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনীতি ফোরামের মিটিং স্ত্রী ওলেনা জেলেনস্কাকে পাঠিয়েছিলেন চীনা প্রতিনিধি দলের কাছে একটি চিঠি তুলে দেওয়ার জন্য।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে চীনের ভূমিকা জটিল। চীন নিজেকে নিরপেক্ষ হিসেবে হাজির করার চেষ্টা করছে। কিন্তু একই সঙ্গে তারা রাশিয়াকে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রদান করছে।

গত মাসে ওয়াশিংটন সতর্ক করে বলেছিল, রাশিয়াকে প্রাণঘাতী অস্ত্র সরবরাহের প্রস্তুতি নিচ্ছে চীন। এমন উদ্যোগ নিলে চীনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারিরও হুমকি দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। বেইজিং অবশ্য এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে উল্টো বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রই দুই দেশকে সংঘাত ও সংঘর্ষের দিকে চালিত করছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মস্কোকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করার ঝুঁকি চীনের নেওয়ার সম্ভাবনা কম। শুধু রুশ সেনারা একেবারে বিপর্যয়ে পড়লে হয়তো তা বিবেচনা করতে পারে বেইজিং। পুতিনের ক্ষমতায় টিকে থাকা এবং পশ্চিমের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট জারি রাখা পর্যন্ত মস্কোকে সহযোগিতায় প্রস্তুত আছে চীন।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান কার্নেগি এনডোমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস-এর এশিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আলেক্সান্ডার গাবুয়েভ বলেন, বেইজিং সংঘাত বিষয়ে অজ্ঞেয়বাদী। তারা চায় পুতিনকে হুমকির মুখে ফেলে রাশিয়ার এমন বিপর্যয়কর কিছু এড়াতে।

শি জিনপিংয়ের সাংঘর্ষিক লক্ষ্য ও স্বার্থের কারণে যুদ্ধ বিষয়ে তার অভিপ্রায় নিয়ে সন্দেহপ্রবণ পশ্চিমারা।

গাবুয়েভ বলেন, রাশিয়ার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনও সম্পর্ক নেই চীনের।

চীন কিংবা ইউক্রেন কোনও পক্ষ থেকে দুই দেশের নেতাদের মধ্যে ফোনালাপের বিষয়টি ঘোষণা করা হয়নি। সফরে শান্তির জন্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়ে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সফল চুক্তি করার মোমেন্টাম তিনি ধরে রাখতে পারবেন কিনা তা সফর শেষে জানা যাবে।

সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস

/এএ/এমওএফ/
টাইমলাইন: ইউক্রেন সংকট
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:৩০
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:০২
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:০৪
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:০১
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:০৪
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২৩:০১
সম্পর্কিত
মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধে জাতিসংঘের ভোটে রাশিয়ার ভেটো
নাইজেরিয়ায় বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত কারাগার, পালালো শতাধিক বন্দি
গাজার গণকবরের ৮৫ শতাংশ মরদেহই অজ্ঞাত
সর্বশেষ খবর
উপজেলা নির্বাচনে পলকের হস্তক্ষেপ ঠেকাতে হাইকোর্টে রিট
উপজেলা নির্বাচনে পলকের হস্তক্ষেপ ঠেকাতে হাইকোর্টে রিট
নাগরিক জীবনের সব ক্ষেত্রে পুলিশের অবস্থান রয়েছে: ডিএমপি কমিশনার
নাগরিক জীবনের সব ক্ষেত্রে পুলিশের অবস্থান রয়েছে: ডিএমপি কমিশনার
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধে জাতিসংঘের ভোটে রাশিয়ার ভেটো
মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধে জাতিসংঘের ভোটে রাশিয়ার ভেটো
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না