X
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫
১৬ আষাঢ় ১৪৩২

ইউক্রেনে সামরিক বিপর্যয়: কী কী করতে পারেন পুতিন?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২০:০৬আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:৫২

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এখনও ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে রুশ সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তবে খারকিভের ইজিউম থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর দেশে জাতীয়তাবাদীদের পক্ষ থেকে তার ওপর চাপ দেওয়া হচ্ছে অঞ্চলটি পুনরায় দখলের জন্য।

পশ্চিমা গোয়েন্দা ও স্বতন্ত্র বিশ্লেষকদের ধারণা সঠিক হলে সম্ভাব্য যেসব পদক্ষেপ তিনি নিতে পারেন সেগুলো দেশে ও ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি থাকতে পারে।

১৯৯৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর চেচনিয়ার ইসলামি জঙ্গি ও উত্তর ককেশাস অঞ্চলে পুতিন কঠিন সশস্ত্র শত্রু মোকাবিলা করেছেন। ওই ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে পুতিন শক্তির প্রয়োগ জোরদার করেছিলেন। ফলে এবার ইউক্রেনে তিনি কেমন পদক্ষেপ নিতে পারেন সেগুলো নিয়ে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়েছে।

 

স্থিতিশীল হওয়া, পুনঃসংগঠিত করা, আক্রমণ

রাশিয়া ও পশ্চিমা সামরিক বিশ্লেষকরা একমত যে, মস্কোর দৃষ্টিকোণ থেকে রুশ সেনাদের রণক্ষেত্রে অবিলম্বে স্থিতিশীল হতে হবে, ইউক্রেনের অগ্রগতি ঠেকাতে হবে, পুনরায় সংগঠিত হবে এবং যদি তাদের পক্ষে সম্ভব হয় নিজেদের পাল্টা আক্রমণ চালাতে হবে। তবে পাল্টা হামলা চালানোর রাশিয়ার পদাতিক বাহিনী বা পর্যাপ্ত সামরিক সরঞ্জাম রয়েছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন পশ্চিমারা। এক্ষেত্রে তারা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে ব্যাপক সেনা ও সরঞ্জাম হারানোর বিষয়টি তুলে ধরছেন। তারা বলছে, রুশ সেনারা অনেক অস্ত্র-গোলাবারুদ ও সরঞ্জাম ফেলে এসেছে।

পোল্যান্ডের রোচান কনসাল্টিংয়ের পরিচালক কনরাড মুজিকা বলেন, তাদের লোকবল নেই। স্বেচ্ছাসেবী ব্যাটালিয়নের শক্তি কম। নতুন সেনা সংগ্রহের অভিযানও প্রত্যাশামতো চলছে না। খুব কম মানুষ বাহিনীতে যোগ দিতে চাওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। মস্কো যদি নতুন সেনা সংগ্রহ করতে চায় তাহলে তাদের সেনা সমাবেশের উদ্যোগ নিতে হবে।

জাতীয়তাবাদীদের সমালোচনা ও দাবির বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে হবে পুতিনকে। ইউক্রেনে সামরিক ব্যর্থতার জন্য তার ঘনিষ্ঠ মিত্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের পদত্যাগের দাবি তুলেছেন জাতীয়তাবাদীরা। অবশ্য, চাপের মুখে এর আগে কখনও অধীনস্তদের বরখাস্ত করেননি পুতিন।

 

সেনা সমাবেশ

রাশিয়ার প্রায় ২০ লাখ সাবেক সেনা রয়েছে। যারা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সামরিক বাহিনীতে যুক্ত ছিল। তাদেরকে সমাবেশিত করার সুযোগ রয়েছে রাশিয়ার সামনে। তবে তাদের প্রশিক্ষণ ও মোতায়েনে সময় লাগতে পারে।

মঙ্গলবার অবশ্য ক্রেমলিন বলেছে, রাশিয়াজুড়ে সেনা সামবেশ ঘটানোর কোনও পরিকল্পনা এই মুহূর্তে নেই।

এমন পদক্ষেপ জাতীয়তাবাদীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পাবে। তবে রাশিয়ার শহরগুলো থেকে যে খবর পাওয়া যাচ্ছে তাতে খুব কম মানুষ ইউক্রেনে লড়াইয়ে যোগ দিতে আগ্রহী।

দেশব্যাপী সেনা সমাবেশ করতে হলে রাশিয়াকে ইউক্রেনে আক্রমণকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযানের’ বদলে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। এতে দেশে পুতিনের রাজনৈতিক ঝুঁকি রয়েছে। এর ফলে রাশিয়াকে স্বীকার করতে হবে সাবেক সোভিয়েত দেশের সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধে লিপ্ত রাশিয়া এবং যুদ্ধের অগ্রগতি তাদের পরিকল্পনা মতো হচ্ছে না।  

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘনিষ্ঠ একটি থিংক ট্যাংক আরআইএসি-এর প্রধান আন্দ্রেই কর্তুনভ বলেছেন, কর্তৃপক্ষ সেনা সমাবেশের পক্ষে না। বড় শহরগুলোতে মানুষ ইউক্রেনে গিয়ে যুদ্ধ করতে চায় না। তাদের কাছে বিষয়টি জনপ্রিয়তা পাবে না।

তিনি আরও বলেন, দ্বিতীয়ত আমার কাছে মনে হয় পুতিন পুরো বিষয়টিকে সীমিত অভিযান হিসেবে তুলে ধরতে চাইছেন। বড় কোনও পরিবর্তনের আগে রাষ্ট্র চাইবে এই অবস্থান ধরে রাখতে।

রাশিয়ায় দায়িত্ব পালন করা সাবেক ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত টনি ব্রেন্টন বলেছেন, সেনা সমাবেশের ক্ষেত্রে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। ফলে রাশিয়ার চলমান লড়াইয়ে এর খুব একটা ভূমিকা রাখার সুযোগ কম।

 

শীতকালের ওপর বাজি

ক্রেমলিন ঘনিষ্ঠ দুটি সূত্র গত মাসে জানিয়েছিল, পুতিন আশা করছেন আসন্ন শীতে জ্বালানির আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি এবং ঘাটতির ফলে ইউক্রেনকে রাশিয়ার শর্তে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে বাধ্য করতে পারে ইউরোপ।

তবে কয়েকজন ইউরোপীয় কূটনীতিক মনে করছেন, যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের সাম্প্রতিক সাফল্যের ফলে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তির জন্য ইউক্রেনকে চাপ দেওয়ার বিষয়টি আর সামনে আসবে না হয়ত। রুশ তেলের ওপর নির্ভরশীল জার্মানির মতো দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে।

 

ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বৃদ্ধি

উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনে সামরিক বিপর্যয়ের পর রাশিয়া ইউক্রেনের বিদ্যুৎ অবকাঠামোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চারিয়েছে। এতে খারকিভ ও পাশের পলতোভা ও সুমি অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মোবাইল নেটওয়ার্ক ও পানি সরবরাহ।

এই হামলার পর রুশ জাতীয়তাবাদীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। তারা চান ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে এমন হামলা চালিয়ে স্থায়ীভাবে সেগুলো ধ্বংস করা হোক। এমন হামলার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিন্দার ঝড় উঠতে পারে।

একই জাতীয়তাবাদীরা মস্কোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন কিয়েভসহ ইউক্রেনের বিভিন্নস্থানে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ভবনগুলোতে হামলা চালানোর জন্য। এসব হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

 

খাদ্যশস্য চুক্তি বাতিল

জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রফতানির বিষয়ে চুক্তি নিয়ে অভিযোগ করে আসছেন পুতিন। এই সপ্তাহে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে পুতিনে। ইউক্রেনকে যদি আঘাত করতে চান পুতিন তাহলে তিনি এই চুক্তি বাতিল করতে পারেন। পশ্চিমা এবং আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দরিদ্র দেশগুলো খাদ্য সংকট বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করে আসছে। পুতিন এজন্য ইউক্রেনকে দায়ী করবেন।

 

শান্তিচুক্তি

ক্রেমলিন বলেছে, সময় আসলে শান্তিচুক্তির জন্য কিয়েভকে শর্ত দেবে রাশিয়া। তবে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, দখলকৃত অঞ্চল মুক্ত করতে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করা হবে। ২০১৪ সালে রাশিয়ার দখল করা ক্রিমিয়াকেও মুক্ত করতে চায় কিয়েভ। মস্কো বারবার দাবি করে আসছে, ক্রিমিয়া নিয়ে আলোচনা শেষ হয়ে গেছে চিরতরে।

আনুষ্ঠানিকভাবে লুহানস্ক ও ডনেস্ককে স্বাধীনত হিসেবে ঘোষণা করার ফলে এসব ভূখণ্ডকে ইউক্রেনের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগ রাশিয়ার খুব কম রয়েছে।

 

পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার

ইউক্রেনে মস্কো কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে বলে পশ্চিমাদের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন রাশিয়ার কর্মকর্তারা। তবু পশ্চিমাদের মনে এই বিষয়ে এক ধরনের উদ্বেগ রয়েছে।

এমন কিছু ঘটলে শুধু যে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ হবে তা নয়, এতে বিপজ্জনক মাত্রায় সংঘাত পৌঁছাবে এবং পশ্চিমা দেশগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার সঙ্গে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে।

সাবেক ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ব্রেন্টন সতর্ক করে ভলেছেন, পুতিন যদি পরাজয় আসন্ন দেখেন এবং লজ্জাজনক অবস্থায় তাকে পড়তে হয় তখন মুখ রক্ষার জন্য পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন।

ইউরোপে মার্কিন সেনাবাহিনীর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন জেনারেল বেন হজেস স্বীকার করেন যে এমন ঝুঁকি রয়েছে। তবে তিনি মনে করেন এমনটি ঘটার আশঙ্কা কম।

সূত্র: রয়টার্স

 

/এএ/
টাইমলাইন: ইউক্রেন সংকট
সম্পর্কিত
মার্কিন শুল্কনীতিকে ব্ল্যাকমেইলের সঙ্গে তুলনা করলেন ম্যাক্রোঁ
হার্ভার্ডে ইহুদি ও ইসরায়েলি শিক্ষার্থীদের অধিকার লঙ্ঘনের আলামত পেয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন: প্রতিবেদন
ইসরায়েলি হামলায় নিহত বেড়ে ৯৩৫: ইরান
সর্বশেষ খবর
জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের মেয়াদ বাড়লো
জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের মেয়াদ বাড়লো
এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ আজ থেকে শুরু
এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ আজ থেকে শুরু
৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ
৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ
ভোটকেন্দ্র নীতিমালার গেজেট প্রকাশ, বাদ পড়লো ডিসি-এসপির কমিটি ও ইভিএম
ভোটকেন্দ্র নীতিমালার গেজেট প্রকাশ, বাদ পড়লো ডিসি-এসপির কমিটি ও ইভিএম
সর্বাধিক পঠিত
তিন বিমানবন্দরে ১৬ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে
তিন বিমানবন্দরে ১৬ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে
এইচএসসি পরীক্ষা দিতে গিয়ে নিখোঁজ ছাত্রী সাভারে উদ্ধার
এইচএসসি পরীক্ষা দিতে গিয়ে নিখোঁজ ছাত্রী সাভারে উদ্ধার
রূপপুর প্রকল্পের ১৮ প্রকৌশলী অপসারণ: হাইকোর্টের রুল
রূপপুর প্রকল্পের ১৮ প্রকৌশলী অপসারণ: হাইকোর্টের রুল
‘ইউ আর পেইড বাই দ্য গভর্নমেন্ট’
এনবিআর কর্মকর্তাদের উদ্দেশে অর্থ উপদেষ্টা          ‘ইউ আর পেইড বাই দ্য গভর্নমেন্ট’
ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি স্ট্যাটাস উপদেষ্টা আসিফ ও সাংবাদিক জুলকারনাইনের
ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি স্ট্যাটাস উপদেষ্টা আসিফ ও সাংবাদিক জুলকারনাইনের