X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

যে পাঁচ ঘটনায় বছরটি ছিল পুতিনের জন্য ‘সর্বনাশা’

লুৎফর কবির
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৮:০০আপডেট : ০১ মে ২০২৩, ১১:২০

ইউক্রেনে সর্বাত্মক হামলার শুরুর কয়েক দিনের মাথায় কিয়েভের দিকে অগ্রসর হয় রুশবাহিনী। এমনকি কিয়েভ দখল নিয়ে বিজয়ের স্বপ্ন দেখা শুরু করে ক্রেমলিন। কিয়েভে প্যারেডের জন্য ইউনিফর্মও নিয়ে এসেছিল রুশ যোদ্ধারা। কিন্তু ইউক্রেনের প্রতি পশ্চিমা সহায়তা এবং রুশ বাহিনীর একের পর এক ব্যর্থতায় তা স্বপ্ন হয়েই রয়েছে গেছে মস্কোর।

যুদ্ধের এক বছরে অগ্রগতির চেয়ে ব্যর্থতার পাল্টাই ভারী রাশিয়ার। যদিও এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণে রুশরা অবস্থান ধরে রেখেছে। গত ১২ মাসে পাঁচটি বড় ঘটনায় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে পুতিন ও তার বাহিনী।

কিয়েভ দখল করতে ব্যর্থ হয় রুশবাহিনী। ছবি: রয়টার্স

কিয়েভ দখলে ব্যর্থতা

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন হামলার শুরুতেই ত্বরিত অগ্রসর হতে থাকে রুশবাহিনী। অল্প সময়ে সীমান্তবর্তী গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল খেরসনের আশপাশ এবং খারকিভ ঢুকে পড়ে তারা। খেরসন ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। শঙ্কা ছিল, দ্রুত রাজধানী কিয়েভের পতন ঘটিয়ে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে বন্দি অথবা হত্যা করা হতে পারে। অথবা আত্মসমর্পণ করতে পারেন তিনি ও ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী। যদিও তা ঘটেনি।

এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংস্থা গ্লোবাল গার্ডিয়ানের সিইও ডেল বাকনার নিউজউইককে বলেন, ‘আপনি যদি পেছনে ফিরে তাকান, প্রথম ৩০ দিনে কিয়েভ দখল করতে পারতো তারা। সেই সঙ্গে জেলেনস্কিকে হত্যা অথবা বন্দি করতে পারতো রুশবাহিনী। তা ঘটলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতো।’

মার্কিন সংবাদমাধ্যমটিকে সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, ‘অনেকেই প্রথমদিকে জেলেনস্কির গুরুত্বকে অবমূল্যায়ন করেছেন। আমার মতে, তার গুরুত্ব, বার্তা, ন্যাটো এবং পশ্চিমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করার বিষয়টিকেও ছোট করে দেখেছেন অনেকে।’

আক্রমণের প্রথম দিনগুলোয় রাজধানীর উত্তর-পশ্চিমে ইরপিন এবং বুচা শহরে পৌঁছে যায় রুশ সেনারা। সেখানকার বেসামরিক লোকদের ওপর ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। যার প্রমাণও পেয়েছেন তদন্তকারীরা। যদিও মস্কো বরাবর এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

রুশ সেনাদের অগ্রসরের শুরুর দিকেই প্রতিরোধ গড়ে তোলে ইউক্রেনীয় যোদ্ধারা। থেমে যায় শত্রুদের অগ্রযাত্রা। ফলে কিয়েভের পতন ঘটানো সম্ভব হয়নি।

মস্কোভার ডুবে যাওয়ার ছিল রাশিয়ার জন্য লজ্জাকর। ছবি: রয়টার্স

ফ্ল্যাগশিপ রণতরী মস্কোভার ডুবে যাওয়া

কৃষ্ণ সাগরে নিজেদের ফ্লাগশিপ জাহাজ বলে পরিচিত মস্কোভা মিসাইল ক্রুজার ডুবে যাওয়ার কথা স্বীকার করে রাশিয়া। মস্কোর দাবি, জাহাজে থাকা গোলাবারুদের কারণে বিস্ফোরিত হয়ে ডুবে গেছে। জাহাজটিতে প্রায় পাঁচশ’ নাবিক ছিলেন। মস্কো স্বীকারে করে, একজন নাবিক ও ২৭ জন নিখোঁজ হয়। শেষ পর্যন্ত তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছিল তা স্পষ্ট করেনি মস্কো। পরে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে, ইউক্রেনের ছোড়া দুটি নেপচুন ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়ে ডুবে যায় মস্কোভা।

জাহাজটির মূল্য ছিল প্রায় ৭৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা ছিল রুশ নৌবাহিনীর জন্য বড় একটা ধাক্কা এবং রাশিয়ার জন্য লজ্জার।

গুরুত্বপূর্ণ কার্চ সেতু বিস্ফোরণে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন পুতিন। ছবি: রয়টার্স

কার্চ সেতুতে বিস্ফোরণ

ক্রিমিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার একমাত্র সংযোগ স্থাপনকারী সেতু ক্রিমিয়ার কার্চ ব্রিজে গত ৮ অক্টোবর ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় ইউক্রেনীয় বাহিনীকে হামলার কোনও নির্দেশ দেয়নি বলে দাবি করেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। কিন্তু এ ঘটনার সঙ্গে কিয়েভ জড়িত বলে অভিযোগ তোলেন পুতিন। পরে রাশিয়ার এফএসবি সিকিউরিটি সার্ভিস জানায়, বিস্ফোরণের ঘটনায় পাঁচ রুশসহ আট জনকে গ্রেফতার করে তারা। কার্চ সেতুটি রাশিয়ার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা পুতিনের প্রতিক্রিয়াতে দৃশ্যমান হয়েছে। কার্চ সেতু ব্যবহার করে ক্রিমিয়া ভূখণ্ডে সেনা, অস্ত্র পাঠায় মস্কো।

এ ঘটনায় বাকনার আরও বলেন, কার্চ সেতু ও মস্কোভায় হামলাগুলো তাৎক্ষণিক কৌশলগত সুবিধা না দিলেও তা ছিল উল্লেখযোগ্য। আপনি ইউক্রেনের আকাশসীমা ও তাদের ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছেন, প্রতিশোধ নিতে কিয়েভও যে কিছু করতে পারে, তারা তা দেখিয়ে দিয়েছে। ইউক্রেনীয়রা সেই সক্ষমতাও রাখে।

বিপুল ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে রুশবাহিনী। ছবি: রয়টার্স

বিপুল সেনা হারানো

এই যুদ্ধে রাশিয়ার ব্যাপক মাত্রায় সামরিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করে আসছে পশ্চিমা গোয়েন্দারা। কিয়েভের তথ্য মতে, হামলার শুরু থেকে চলতি মাসে সবচেয় বেশি ১ হাজার সেনা সেনা হারিয়েছে রাশিয়া। রুশবাহিনী যখন ইউক্রেনের বাখমুত দখলে নিতে প্রবল লড়াই  চালিয়ে যাচ্ছে, তখনই হতাহতের বিষয়টি সামনে আসছে। গত বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত ইউক্রেনে রাশিয়ার ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যা ১ লাখ ৪৪ হাজার ৪০ জনে পৌঁছেছে।

ইউক্রেন যুদ্ধে পুতিন তার শীর্ষ পর্যায়ের অনেক সামরিক কমান্ডারকে হারিয়ে বেশ বিপদেই আছেন। জাপানের গোয়েন্দাদের তথ্যমতে, ইউক্রেন যুদ্ধে ২০ জন রুশ জেনারেল নিহত হয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট পুতিন এখন পর্যন্ত চারবার ইউক্রেন যুদ্ধের সামরিক নেতৃত্বে পরিবর্তন এনেছেন। গত জানুয়ারিতেই সের্গেই সুরোভিকিনের জায়গায় জেনারেল স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভকে দায়িত্ব দেন।

এ প্রসঙ্গে মার্কিন নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ভাইস অ্যাডমিরাল রবার্ট মুরেট বলেন, এই ক্ষতি পুতিনের জন্য সবচেয়ে বড় সামরিক ধাক্কা।

নিউজউইককে তিনি আরও বলেন, রুশ বাহিনী তাদের কমান্ড কাঠামোতে দুর্বলতা দেখিয়েছে এবং বিশেষ করে তাদের স্থল বাহিনীর প্রশিক্ষণ ও কার্যকারিতারও অভাব রয়েছে। যুদ্ধে রুশদের দুর্বল কর্মক্ষমতা কিয়েভ শিবিরে কিছুটা স্বস্তিও এনে দেয়।

খেরসনে ইউক্রেনীয় পাল্টা আক্রমণে পিছু হটে রাশিয়া। ছবি: রয়টার্স

খেরসন থেকে পিছু হটা

যুদ্ধে খেরসনকে প্রথম দিকে কব্জায় নিতে সক্ষম হয়। ইউক্রেনীয় যোদ্ধারা তাদের একমাত্র আঞ্চলিক রাজধানী খেরসনে পুনরুদ্ধারে পাল্টা আক্রমণে নামলে পিছু হটতে শুরু করে রাশিয়া। একপর্যায়ে ঘোষণা দিয়েই খেরসনের বড় একটা অংশ থেকে রুশবাহিনী প্রত্যাহার করে নেয় ক্রেমলিন।

ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের হামলার মুখে রাশিয়ার সাবেক কমান্ডার জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিন নভেম্বরে বলেছিলেন, শহরটিতে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করা আর সম্ভব নয়। খেরসনে এমন ব্যর্থতায় রাশিয়ার অবস্থান পুরোপুরি পরিষ্কার হয়ে যায়।

এ প্রসঙ্গে বাকনার মনে করেন, যদি খেরসনে রুশ সেনাদের জন্য খাবার, পানি, গোলাবারুদ, জ্বালানি সঠিক সময়ে সরবরাহ করা যেতো, তাহলে অঞ্চলটি ধরে রাখতে পারতো মস্কো। কিন্তু তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

এখন ইউক্রেন-রাশিয়ায় প্রচণ্ড শীত। ঠান্ডা এবং যুদ্ধের একবছর পূর্তিকে কেন্দ্র করে নতুন করে হামলা জোরদার করেছে রুশ বাহিনী। ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অবকাঠামোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।

ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর হ্যারিস স্কুল অব পাবলিক পলিসির রুশ বংশোদ্ভূত সোনিন বলেন, পুতিন একটি বড় ভুলের মধ্য দিয়ে যুদ্ধে নামেন। গত ১২ মাসের বিপর্যয় থেকেই পরিষ্কার, তিনি এই যুদ্ধে এখনও মানিয়ে নিতে পারেননি। আর এটাই বাস্তবতা।

নিউজউইক অবলম্বনে।

 

/এলকে/এএ/এমওএফ/
টাইমলাইন: ইউক্রেন সংকট
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:৩০
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:০২
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:০৪
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:০১
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:০৪
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২৩:০১
সম্পর্কিত
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার হুমকি আব্বাসের
ইরাকি ঘাঁটিতে হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার যুক্তরাষ্ট্রের
রুশ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইউক্রেনের হামলা, ৫০টি ড্রোন ভূপাতিতের দাবি মস্কোর
সর্বশেষ খবর
মননের প্রথম আইএম নর্ম, হাতছানি জিএম নর্মের
মননের প্রথম আইএম নর্ম, হাতছানি জিএম নর্মের
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার হুমকি আব্বাসের
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার হুমকি আব্বাসের
টি-টোয়েন্টির পাওয়ার প্লেতে ১২৫ রান করে হায়দরাবাদের বিশ্ব রেকর্ড!
টি-টোয়েন্টির পাওয়ার প্লেতে ১২৫ রান করে হায়দরাবাদের বিশ্ব রেকর্ড!
জানা গেলো বেইলি রোডে আগুনের ‘আসল কারণ’
জানা গেলো বেইলি রোডে আগুনের ‘আসল কারণ’
সর্বাধিক পঠিত
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: সভাপতি মিশা, সম্পাদক ডিপজল
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: সভাপতি মিশা, সম্পাদক ডিপজল
সোনার দাম কমেছে, আজ থেকেই কার্যকর
সোনার দাম কমেছে, আজ থেকেই কার্যকর
দেশের ৯ অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি, পারদ উঠতে পারে আরও
দেশের ৯ অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি, পারদ উঠতে পারে আরও