ইউক্রেনের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার রাশিয়ার চলমান যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ীতে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এই সংঘাত আরও কয়েক বছর স্থায়ী হতে পারে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বর্তমানে লড়াইয়ের গতি যে শুধু ধীরগতির তা নয়, সংঘাতে জড়িত উভয় পক্ষের কারোরই রাজনৈতিক ও অর্জনযোগ্য লক্ষ্য নেই।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের যুদ্ধের কেন্দ্রীয় লক্ষ্য—রাশিয়ার দখলকৃত ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করা। এটিই তাদের সবচেয়ে স্পষ্ট লক্ষ্য। কিন্তু পশ্চিমা সমর্থনের সীমাবদ্ধতার কারণে এটি একটি দূরবর্তী সম্ভাবনা বলে মনে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির মতো গুরুত্বপূর্ণ ইউরোপীয় মিত্ররা রাশিয়ার যুদ্ধে জয়ী হওয়া থেকে ঠেকাতে চায়, কিন্তু ইউক্রেনকে পূর্ণ বিজয়ে সহযোগিতার ব্যয় ও ঝুঁকি নিয়ে আশঙ্কাও করছে। কিছু পশ্চিমা কর্মকর্তা যুদ্ধের অবসানের জন্য দরকষাকষির বিষয়টি সামনের আনার চেষ্টা করছেন, কিন্তুতা কিয়েভ বা মস্কোর লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘোষিত লক্ষ্যগুলোর মধ্যে উচ্চাভিলাষী সাম্রাজ্যিক পরিকল্পনা থেকে সীমিত আকারে ভূখণ্ড দখল ও রাশিয়ার সামরিক অবস্থার পরিবর্তন। কিন্তু ইউক্রেনকে মস্কোর কর্তৃত্বের অধীনে ফিরিয়ে আনতে তার দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য এখন অবাস্তব বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু ইউক্রেনীয়রা মনে করেন, ছোট ছোট অর্জনকে সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করবেন তিনি, আপাতত ছাড় দিয়ে শান্তি প্রস্তাব মানলেও শেষ পর্যন্ত বিশ্বাসঘাতকতা করবেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ইউক্রেনকে দেওয়া সহযোগিতার লক্ষ্য হলো দেশটিকে আলোচনার টেবিলে শক্তিাশীল অবস্থানে নেওয়া। তবে কোন শর্তে ইউক্রেন আলোচনায় বসবে তা স্পষ্ট করেননি। এই বছরের শুরুর দিকে, ওয়াশিংটন, বার্লিন এবং অপর মিত্ররা আশা করেছিল, পাল্টা আক্রমণে রুশ দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ইউক্রেন উল্লেখযোগ্য সাফল্য পাবে। কিন্তু তা বাস্তবে ঘটেনি।
ব্যক্তিগতভাবে অনেক পশ্চিমা কর্মকর্তারা মনে করেন ইউক্রেনকে একা যুদ্ধের লক্ষ্য সংজ্ঞায়িত করতে দেওয়া ঠিক হবে না। তাদের আশঙ্কা ইউক্রেনের সর্বোচ্চ লক্ষ্য একটি অন্তহীন যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাবে। ন্যাটো বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ বা দীর্ঘমেয়াদী সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতির মতো বিষয়ের বিনিময়ে ইউক্রেনকে কিছু ভূখণ্ডগত ছাড় দিতে আহ্বান জানাতে পারেন তারা।
বার্লিনের কার্নেগি রাশিয়া ইউরেশিয়া সেন্টারের পরিচালক আলেকজান্ডার গাবুয়েভ বলেছেন, ইউক্রেনকে দ্রুত জয় করার জন্য রাশিয়ার একটি পরিকল্পনা ছিল কিন্তু কোনও বিকল্প পরিকল্পনা ছিল না। লক্ষ্য ঘোষণা করা পুতিনের জন্য রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিকর হতে পারে। লক্ষ্য অস্পষ্ট থাকার ফলে কাজ এগিয়ে যাচ্ছে বলতে পারছেন তিনি।
গাবুয়েভ মনে করেন, যুদ্ধ নিয়ে ক্রেমলিনের লক্ষ্যের চেয়ে সময়সীমা নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট। তারা মনে করে যুদ্ধের খরচ বহনযোগ্য এবং রাশিয়ার রাজনৈতিক ব্যবস্থা, জনগণ এবং অর্থনীতির সহনশীলতা পশ্চিমাদের ছাড়িয়ে যেতে পারে।