ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে খুলনার আকাশ সকাল থেকেই মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। সেই সঙ্গে বইছে দমকা হাওয়া। মাঝে মাঝে ঝিরিঝিরি বৃষ্টিও পড়ছে। খুলনার সর্বদক্ষিণের উপজেলা কয়রা আর বাগেরহাটের শরণখোলাতেও একই রকম অবস্থা। শরণখোলার নির্মাণাধীন একটি স্লুইস গেট দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে। শরণখোলা ও কয়রায় ঝুকিপূর্ণ এলাকার মানুষ, বিশেষ করে, নারী ও শিশুরা আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে শুরু করেছেন।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ বলেন, ‘মোংলা বন্দরের পাশাপাশি খুলনায়ও ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেওয়া হয়েছে। সকাল থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। বইছে দমকা হাওয়া। থেকে থেকে বৃষ্টি শুরু হচ্ছে। সন্ধ্যায় উপকূলে আঘাত হানতে পারে রিমাল। এ সময় বৃষ্টি আরও বাড়বে। বাতাসের গতিবেগ ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।’
বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুদীপ্ত কুমার সিংহ বলেন, ‘বেলা ১টা থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজন আসতে শুরু করেছেন। উপজেলায় ৯১টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ১৬০০ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছে।’
কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, ‘কয়রায় ঝড়ের প্রভাবে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, দমকা হাওয়া ও হালকা বৃষ্টি রয়েছে। তারপরও উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে শুরু করেছেন। কয়রার আশ্রয়কেন্দ্রে বেলা ২টার পর মানুষ আসতে শুরু করেছে।’
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে খুলনা জেলা প্রশাসন। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৬০৪টি আশ্রয়কেন্দ্র। এ ছাড়া তিনটি মুজিব কিল্লা এবং ৫ সহস্রাধিক স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছেন। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৩ লাখ ১৫ হাজার মানুষ থাকতে পারবেন। খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায় প্রস্তুত রয়েছে ফায়ার সার্ভিসের ৩০টি টিম। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।
খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার জন্য বলা হয়েছে। সতর্ক থাকার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিপদ সংকেত জারি হলে তারা এলাকায় মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করবেন। শুকনো খাবার, ওষুধ, ঢেউটিন ও নগদ টাকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রস্তুতিতে কোনও ঘাটতি নেই।
খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য ৬০৪টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যাতে পরিস্থিতি অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজন সেখানে আশ্রয় নিতে পারেন। এসব সাইক্লোন শেল্টারে মোট ৩ লাখ ১৫ হাজার ১৮০ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। এ ছাড়া ৩টি মুজিব কিল্লায় ৪৩০ জন মানুষের আশ্রয়ের পাশাপাশি ৫৬০টি গবাদিপশু রাখা যাবে। কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলায় ৫ হাজার ২৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স খুলনার উপপরিচালক মামুন মাহমুদ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের ৩০টি টিম শনিবার সকাল ৬টা থেকে কাজ শুরু করেছে। এর মধ্যে খুলনায় ১৪টি ফায়ার স্টেশন রয়েছে। যার মধ্যে একটি রিভার ফায়ার স্টেশন আছে। এ ছাড়া বাগেরহাটে ১০টি এবং সাতক্ষীরায় ৬টি ফায়ার স্টেশনের টিম কাজ করছে। টিমের সদস্যরা মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি রেসকিউ, বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা, নিরাপদে আশ্রয়কেন্দ্রে আনাসহ যাবতীয় কাজ করবে। জল ও স্থল উভয় পথে ফায়ার সার্ভিসের টিম এবং যাবতীয় সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। খুলনা সদর দফতরে স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে ২০ সদস্যের স্পেশাল টিম। খোলা হয়েছে মনিটরিং সেল।’
তিনি জানান, ফায়ার সার্ভিসের মনিটরিং সেল ও বিভাগীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সারাক্ষণ সংবাদ সংগ্রহে নিয়োজিত থাকবে।