বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ এবং পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে কক্সবাজারে। সকাল থেকে কক্সবাজারে সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে।
সাগরে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে দুই-তিন ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে সাগর। এ কারণে সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে। সৈকতে নিয়োজিত বিচকর্মী ও লাইফগার্ড কর্মীরা পর্যটকদের সতর্ক করে মাইকিং করেছেন। সৈকতে পর্যটকদের গোসল করতে নিষেধ করা হয়েছে।
অপরদিকে, জেলার উপকূল ও নিম্নাঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যেতে স্বেচ্ছাসেবকেরা মাইকিং করছেন।
শনিবার (২৫ মে) রাত থেকে কক্সবাজারে বাতাসের গতিবেগ বৃদ্ধি পেয়েছে। রাত থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। সাগরে মাছ ধরার ট্রলারসমূহকে উপকূলে নিরাপদে চলে আসতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় কক্সবাজারে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির উদ্যোগে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরানের সভাপতিত্বে শহীদ জাফর আলম সিএসপি সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি হোটেল-মোটেল জোনও যেন প্রয়োজন মোতাবেক দুর্যোগে সহযোগিতার হাত বাড়ায় সেই অনুরোধ করেন। রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে, ফায়ার সার্ভিসকে জরুরি রেসকিউর জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাহাড়ধস এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা থেকে মানুষজনকে সরিয়ে আনার জন্য পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও খাবার এবং খিচুড়ির ব্যবস্থা করতে পৌরসভাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় উপকূলের প্রান্তিক মানুষদের সচেতন ও আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে এসে নিরাপদে রাখার জন্য সকলকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সভায় উল্লেখ করা হয়, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় উপকূল এলাকাসহ জেলায় ৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে। এক হাজার ৩০০ স্বেচ্ছাসেবক কক্সবাজারে রয়েছে। এ ছাড়া রেড ক্রিসেন্টের ৮৮০ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে। প্রতি উপজেলায় ৫০ জন করে কর্মী রয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় ৬৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এ ছাড়া ৮ হাজার ৬০০ স্বেচ্ছাসেবক এবং দুই হাজার ২০০ সিপিপি প্রস্তুত রাখা হয়েছে জরুরি কাজে অংশগ্রহণের জন্য।
দুর্যোগ মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বলে জানিয়েছে। জেলা প্রশাসনের কাছে ৪৮৬ মেট্রিক টন চাল, ২ লাখ ৭৫ হাজার নগদ টাকা, ২৩ বান্ডিল ঢেউটিন, টিনের সাথে গৃহনির্মাণ মঞ্জুরির অর্থ ৬৯ হাজার মজুত রয়েছে। প্রয়োজনে শুকনো খাবার মজুত করা হবে।