X
বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫
১৭ আষাঢ় ১৪৩২

যুক্তরাষ্ট্র প্রশিক্ষিত আফগান কমান্ডোদের ইউক্রেন পাঠাচ্ছে রাশিয়া?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
০১ নভেম্বর ২০২২, ১৮:২৮আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২২, ১৮:৫৫

মার্কিন সেনাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করা আফগানিস্তানের স্পেশাল ফোর্সের সদস্যদের মধ্যে যারা গত বছর ইরানে আশ্রয় নিয়েছিল তাদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দিচ্ছে রাশিয়া। তাদের ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। মার্কিন বার্তা সংস্থা এপিকে তিন সাবেক আফগান জেনারেল এসব কথা বলেছেন।

সাবেক আফগান সেনা কর্মকর্তারা বলছেন, কয়েক হাজার সাবেক অভিজাত আফগান কমান্ডোকে নিয়োগ দিতে চাইছে রাশিয়া। এজন্য ‘ফরেন লিজন’ নামের একটি বাহিনী গঠন ও প্রতিমাসে দেড় হাজার ডলার মজুরি এবং তাদের ও তাদের পরিবারের জন্য আশ্রয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আকৃষ্ট করছে চাইছে মস্কো। মূলত তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের পর পালানো এসব কমান্ডো যাতে দেশে ফেরা এড়াতে পারেন, সেই সুযোগ তাদের সামনে হাজির করছে ক্রেমলিন।

সাবেক জেনারেল আবদুল রাউফ আরঘানিদিওয়াল বলেন, তারা (আফগান কমান্ডো) লড়াই করতে চায় না। কিন্তু তাদের সামনে কোনও বিকল্প নেই।

তিনি জানান, ইরানে চলে যাওয়া এক ডজনের মতো কমান্ডোর সঙ্গে খুদেবার্তা বিনিময় হয়েছে তারা। এসব কমান্ডো ভয় পাচ্ছেন তাদের আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানো হবে।

আবদুল রাউফ বলেন, তারা আমার কাছে সমাধান চাইছে। তার জিজ্ঞেস করছে আমরা কী করবো? যদি আফগানিস্তানে ফিরে আসি তাহলে তালেবান আমাদের হত্যা করবে।

সাবেক এই আফগান জেনারেল জানান, এই কমান্ডোদের রিক্রুট করছে রুশ ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপ।

তালেবান ক্ষমতা দখলের আগে সেনাপ্রধানের দায়িত্বে ছিলেন আরেক সাবেক আফগান জেনারেল হিবাতুল্লাহ আলিজাই। তিনি বলেছেন, ওয়াগনার গ্রুপকে সহযোগিতা করছেন একজন সাবেক আফগান স্পেশাল ফোর্স কমান্ডার। তিনি এখন রাশিয়ায় বসবাস করছেন এবং রুশ ভাষায় কথা বলেন।

মার্কিন সেনাদের পক্ষ থেকে কয়েক মাস ধরে সতর্ক বার্তার পর রাশিয়ার পক্ষ থেকে সাবেক আফগান কমান্ডোদের রিক্রুট করার খবর সামনে এলো। সতর্ক বার্তায় বলা হচ্ছিল, যেসব আফগান স্পেশাল ফোর্স কমান্ডো মার্কিন সেনাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছে তাদের হত্যা করতে পারে তালেবান। এবং তারা বেঁচে থাকার জন্য বা সাবেক মিত্রদের ওপর প্রতিশোধ নিতে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী শক্তির সঙ্গে যোগ দিতে পারে।

আগস্টে রিপাবলিকান পার্টির একটি কংগ্রেসনাল প্রতিবেদনে আফগান কমান্ডোদের নিয়ে বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে। এই কমান্ডোদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে মার্কিন নেভি সিল ও আর্মি গ্রিন বেরেটস। যুক্তরাষ্ট্র আশঙ্কা করছে, তারা আইএসবিরোধী লড়াইয়ে মার্কিন কৌশল ইরান বা রাশিয়াকে দিতে পারে অথবা দেশ দুটির হয়ে লড়াই করতে পারে।

আফগানিস্তানে দায়িত্ব পালন করা অবসরপ্রাপ্ত সিআইএ কর্মকর্তা মাইকেল মুলরয় বলেন, প্রতিশ্রুতি অনুসারে আমরা আফগান কমান্ডোদের আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে আনতে পারিনি। এরা দক্ষ ও লড়াকু যোদ্ধা। আমি তাদের রণক্ষেত্রে দেখতে চাই না। বিশেষ করে তারা ইউক্রেনীয়দের বিরুদ্ধে লড়াই করুক, তা একেবারে চাই না।

রাশিয়া অনেক বেশি আফগান কমান্ডোকে দলে ভিড়াতে পারবে বলে মনে করেন না মুলরয়। তিনি মনে করেন, এদের অনেকেই নিজের দেশে গণতন্ত্র কার্যকর করতে চান, ভাড়াটে বন্দুক হিসেবে কাজ করার লক্ষ্য তাদের ছিল না।

এই বিষয়ে এপির পক্ষ থেকে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলেও কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি। ওয়াগনার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে হিসেবে সম্প্রতি স্বীকারোক্তি দেওয়া ইয়েভগেনি প্রিগোজিন সাবেক আফগান সেনাদের রিক্রুট করার বিষয়টিকে ‘পাগলামি’ হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছেন।  

মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও এপির মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। তবে এক সিনিয়র কর্মকর্তা ইঙ্গিত দিয়েছেন, রুশ বাহিনীর এই রিক্রুটে অবাক হওয়ার কিছু নাই। কারণ, ওয়াগনার গ্রুপ বিভিন্ন দেশের সেনাদের দলে ভিড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে।

এখন পর্যন্ত ইরানে অবস্থানকারী কতজন সাবেক আফগান কমান্ডো রুশ বাহিনীতে যোগ দিতে সম্মত হয়েছেন তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি। তবে রাশিয়ার হয়ে লড়াই করতে সম্মত হওয়া এক কমান্ডো জানিয়েছেন, অন্তত ৪০০ কমান্ডো যোগদানের বিষয়টি বিবেচনা করছে। তিনি বলেছেন, তার মতো অনেকেই আফগানিস্তানে ফিরতে ভয় পাচ্ছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র তাদের দেশ থেকে না সরানোর কারণে ক্ষুব্ধ।

ধারণা করা হয়, প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার আফগান স্পেশাল ফোর্স মার্কিন সেনাদের পক্ষে দুই দশক ধরে লড়াই করেছে। গত বছর আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের প্রত্যাহারের সময় অল্প কয়েকজন সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এরপর মার্কিন সেনাবাহিনীর হয়ে সরাসরি কাজে না থাকা অনেক আফগান কমান্ডো যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ ভিসার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হননি।

সূত্র: এপি

/এএ/এমওএফ/
টাইমলাইন: ইউক্রেন সংকট
সম্পর্কিত
চীনের প্রভাব মোকাবিলায় ওয়াশিংটনে কোয়াড বৈঠক, প্রশ্নের মুখে ঐক্য
তীব্র তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত ইউরোপস্কুল বন্ধ ফ্রান্সে, ইতালিতে নিষিদ্ধ বাইরের কাজ
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় গাজার ব্যস্ত ক্যাফেতে ইসরায়েলি হামলার নৃশংসতা
সর্বশেষ খবর
ক্লাব বিশ্বকাপে এমবাপ্পের অভিষেক, জুভেন্টাসকে হারিয়ে শেষ আটে রিয়াল
ক্লাব বিশ্বকাপে এমবাপ্পের অভিষেক, জুভেন্টাসকে হারিয়ে শেষ আটে রিয়াল
জুলাই নিয়ে পুলিশ সদস্যের ‘আপত্তিকর’ পোস্ট, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
জুলাই নিয়ে পুলিশ সদস্যের ‘আপত্তিকর’ পোস্ট, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
রংপুরে নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে এনসিপির বিশাল পদযাত্রা
রংপুরে নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে এনসিপির বিশাল পদযাত্রা
মেহেরপুরে রাতে সড়কে ককটেল ফাটিয়ে ডাকাতি
মেহেরপুরে রাতে সড়কে ককটেল ফাটিয়ে ডাকাতি
সর্বাধিক পঠিত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি
যারা ফেসবুক লাল করেছিল, তাদের জীবন লাল করে দেবে আ.লীগ: পার্থ
যারা ফেসবুক লাল করেছিল, তাদের জীবন লাল করে দেবে আ.লীগ: পার্থ
বেসরকারি শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা যোগদানের দিন থেকে শুরু করতে হাইকোর্টের রুল
বেসরকারি শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা যোগদানের দিন থেকে শুরু করতে হাইকোর্টের রুল
যশোরে নির্মাণাধীন ভবনের বারান্দা ভেঙে দুই প্রকৌশলীসহ ৩ জনের মৃত্যু
যশোরে নির্মাণাধীন ভবনের বারান্দা ভেঙে দুই প্রকৌশলীসহ ৩ জনের মৃত্যু
এনবিআরের আরও ৫ শীর্ষ কর্মকর্তার দুর্নীতি অনুসন্ধান করছে দুদক
এনবিআরের আরও ৫ শীর্ষ কর্মকর্তার দুর্নীতি অনুসন্ধান করছে দুদক