তুরস্ক ও সিরিয়ায় আঘাত হানা ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের পর বিরূপ আবহাওয়ার কারণে ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধার কাজ। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস)-এর তথ্য অনুসারে, সোমবার ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার গভীরে এই ভূমিকম্প হয়। এর ফলে পুরো অঞ্চলজুড়ে ভবন ধসে পড়ে এবং ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। ভূমিকম্প এতই শক্তিশালী ছিল যে সাইপ্রাস ও লেবাননেও কম্পন অনুভূত হয়েছে।
তুরস্ক ও সিরিয়ায় সম্মিলিতভাবে নিহতের সংখ্যা ১৫০০ ছাড়িয়ে গেছে বলে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।
ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে উদ্ধার কাজ পরিচালনায় বাধা দিচ্ছে বিরূপ আবহাওয়া। তুরস্কের ভাইস-প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতায় বলেছেন, চরম বিরূপ আবহাওয়ার কারণে কর্তৃপক্ষ হিমশিম খাচ্ছে।
সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, আমরা অঞ্চলটিতে যত দ্রুত সম্ভব পৌঁছানোর চেষ্টা করছি।
ইস্তানবুল থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক সিনেম কোসেওগলু বলেছেন, তীব্র শীতল আবহাওয়ার কারণে পরিস্থিতি খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। চারদিকে তুষার এবং বৃষ্টি, সঙ্গে তীব্র শীত। আবহাওয়ার পরিস্থিতি ও জলবায়ু উদ্ধারকর্মী ও বেসামরিকদের জন্য পরিস্থিতি কঠিন করে তুলেছে। মনে হচ্ছে এটিই সবার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
তুর্কি শহর দিয়ারবাকির থেকে পাওয়া টেলিভিশনের ছবিতে দেখা গেছে, শীতের জ্যাকেট পরে এবং তুষারে ঢাকা মুখ নিয়ে ধ্বংসস্তূতে জীবিতদের সন্ধানে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
লেবাননের বৈরুত থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক জেইনা খোদর বলেছেন, উত্তর সিরিয়া বড় ধরনের ঝড় আঘাত হেনেছে। তিনি বলেন, এখানে শীত। অনেক মানুষ তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। তারা উন্মুক্ত স্থানে। এমনিতেই উত্তর সিরিয়ায় লাখো মানুষের বাড়ি তাঁবু। ফলে এটি এমন এক জরুরি পরিস্থিতি তা সহজে মোকাবিলা সম্ভব নয়।
সিরিয়ার ইদলিব শহরের আলা নাফি ভূমিকম্পকে খুব ভয়ঙ্কর এবং আতঙ্কজনক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ঘুম ভাঙার পর পুরো ভবনকে দুলতে দেখা আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ অনুভূতি। এটি ভুলতে পারছি না সহজে।
তিনি আরও বলেন, শীতের মধ্যে মানুষেরা সন্তানদের নিয়ে রাস্তায় কাঁদছে দেখা ছিল হৃদয়বিদারক। আমরা সবাই সব ভবন থেকে একটি জায়গায় জড়ো হয়েছিলাম।
তুর্কি শহর গাজিয়ানতেপ থেকে আল জাজিরার আরেক সাংবাদিক আহমেদ আল-খতিব বলেছেন, ভূমিকম্পের পর হতে শীতের মধ্যে অনেক মানুষ বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। তারা অপেক্ষায় আছেন মসজিদের দরজা খুললে তারা হিমশীতল আবহাওয়া থেকে ভেতরে আশ্রয় নেবেন।
তবে তিনি আরও বলেছেন, অনেক মানুষ ভবনের ভেতরেও নিরাপদবোধ করছেন না। পুরো রাস্তা গাড়িতে ভরে গেছে। মানুষ গাড়ির ভেতর বসে আছেন। এটি একেবারে দুঃস্বপ্নের মতো। এটি অবর্ণনীয়।
কর্তৃপক্ষ বলেছে, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আর বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, আগামী কয়েক দিন বা সপ্তাহগুলোতে ভূমিকম্পের আফটারশক আঘাত হানতে পারে।