বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে শনিবার সাড়ে ৪ ঘণ্টার সহিসংতায় একজন পুলিশ সদস্য নিহতসহ ৪১ জন আহতের ঘটনা ঘটে। এসময় আহত হন সংবাদ সংগ্রহে নিয়োজিত ২৭ জন সাংবাদিকও। সহিংসতার মধ্যেই তড়িঘড়ি কর্মসূচি শেষ করে উল্টো নিজেরাই হরতালের ডাক দেয় বিএনপি। আকস্মিক এই কর্মসূচিতে বিপদে পড়েছেন অনেকে, সন্ধ্যার পরে পথে ছিল না যানবাহন। রাজধানীর পরিস্থিতি ছিল থমথমে।
কাকরাইল মোড়ে সংঘর্ষের কারণে নয়া পল্টনে বিএনপির সমাবেশ পণ্ড হয়ে যাওয়ার পর রবিবার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকে দলটি। শনিবার দুপুরে সমাবেশস্থল থেকে হরতালের এ ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরে গণতন্ত্র মঞ্চ ও জামায়াতে ইসলামীও একইদিন আলাদাভাবে হরতাল ডাকে।
জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম এক বিবৃতিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা দেন। শনিবার সন্ধ্যার পর গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এটিএম মা’ছুম বলেন, রাজধানী ঢাকার শাপলা চত্বরে জামায়াত ঘোষিত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ বানচাল করার হীন উদ্দেশ্যে সরকার দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৩ শতাধিক নেতাকর্মীকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করেছে।
সন্ধ্যায় রাজধানীর রমনা, কাকরাইল, বিজয়নগর, শান্তিনগর, বাড্ডা, গুলশান, সাতরাস্তার মোড় হয়ে মিরপুর সরেজমিনে দেখা যায়, বেশকিছু জায়গায় ব্যারিকেড দিয়েছে পুলিশ। রাস্তার পাশের বেশিরভাগ দোকান বন্ধ, গণপরিবহন তো নেই, ব্যক্তিগত গাড়িও নেই। সমাবেশ-এলাকার সড়কজুড়ে তখনও ইট-পাটকেল, গাছের ডাল, শটগানের গুলির খোসা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল।
সাত রাস্তার মোড়ের চায়ের দোকানদার আবুল হোসেন রাত ৯টায় দোকান বন্ধ করছিলেন। তিনি বলেন, পুলিশের মৌখিক নির্দেশ আছে দোকান তাড়াতাড়ি বন্ধ করার। এটা তিনি শুনেছেন। খদ্দেরও নেই। মূলত এখানকার ট্রাকের চালক-হেলপাররাই তার দোকানে আসেন। তারা যেহেতু নেই, তিনি বাসায় চলে যাচ্ছেন।
রাজধানীর পান্থপথে বাস কাউন্টারগুলোতে ঘুরছিলেন বাদল খান। সপরিবারে ঢাকায় এসেছেন চিকিৎসা করাতে। রবিবারের আগে পঞ্চগড়ে কীভাবে পৌঁছাবেন সেইজন্য তিনি ফাঁকা ঢাকায়ও বাসস্ট্যান্ডে এসেছেন। তিনি বলেন, বিপদ তো বলে-কয়ে আসে না। হোটেলে থাকতে দেবে না বলে এরমধ্যে বেশ হয়রানি পোহাতে হয়েছে। আবার আত্মীয়স্বজনের বাসাও নেই আমার। আমার পরিবার নিয়ে কোথায় যাবো? হরতালের কথা তো ভুলেই গেছিলাম। এরকম কিছু হতে পারে মাথাতে আসবে কোথা থেকে।
গণমাধ্যমকর্মী ধ্রুব হাসান বলেন, বাসায় ফেরার পথে বাসের কর্মীদের সাথে কথা হলো। বাড্ডা-সাভার রুটের বৈশাখী আর কমলাপুর-মিরপুর রুটের আয়াত পরিবহনের বাসের কন্ডাক্টররা বললো ওরা বাস চালাবে না, বা কম চালাবে। কেন বাস চালাবেন না জানতে চাইলে তারা জানিয়েছেন, যেভাবে শনিবার গাড়ি পোড়ানো হয়েছে তাতে মালিকেরা কেউই বাস চালাতে রাজি নন। কোথায় কী দুর্ঘটনা ঘটে এবং কোন দায় নিতে হয় সেই ভয়েই রবিবার তারা বাস চালাবেন না। তবে দিন বাড়ার সাথে সাথে পরিস্থিতি বুঝে কিছু গাড়ি চালাতে পারেন।
রাজধানীর পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম শাখার উপ-কমিশনার ফারুক হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রাজধানীর নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রাতেও কাজ করে যাচ্ছেন। শনিবার (২৮ অক্টোবর) বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, একজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছে। তারপরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ডিউটি অনুযায়ী বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্ব পালন করছেন।