ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যা করা ও লাশ থেকে হাড়-মাংস আলাদা করার কাজ আগে থেকে তাদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করা ছিল বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। শুক্রবার (৩১ মে) মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহফুজুর রহমান তিন আসামির আবারও রিমান্ড চেয়ে আবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেন।
তদন্ত কর্মকর্তা মামলায় গ্রেফতার তিন আসামি শিমুল ভুঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভুইঁয়া ওরফে আমান উল্লাহ সাঈদ, তানভীর ভুঁইয়া ও সেলেষ্টি রহমান ওরফে শিলাস্তি রহমানকে ৮ দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করেন। পরে আবারও ৮ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত এই তিন আসামির ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আবারও রিমান্ড আবেদনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন, আট দিনের রিমান্ডে পেয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এসময় জিজ্ঞাসাবাদে শিমুল ভুঁইয়া জানিয়েছে, সে নিষিদ্ধঘোষিত পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল) শীর্ষস্থানীয় একজন নেতা। সে মূলত খুলনা, ঝিনাইদহ, যশোরসহ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে তথা দেশের দক্ষিণাঞ্চলে গোপনে তাদের নিষিদ্ধ দলের কার্যক্রম চালিয়ে থাকে। শিমুল ভুঁইয়া ও তার দলের আদর্শের সঙ্গে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে। অপরদিকে ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী আকতারুজ্জামান শাহীনের সঙ্গে ভুক্তভোগী এমপির ব্যবসায়িক বিরোধ রয়েছে। এজন্য শিমুল ও মূল পরিকল্পনাকারী শাহীন দীর্ঘদিন ধরেই ভিকটিমকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে আসছিল। আসামিরা গত জানুয়ারি ও মার্চ মাসে দুবার ভিকটিমকে হত্যার পরিকল্পনা করে, কিন্তু ব্যর্থ হয়।
এই দফার বিবরণ দিয়ে আবেদনে বলা হয়, আকতারুজ্জামান শাহীন ভারতের কলকাতার নিউ টাউনের অভিজাত এলাকায় গত ২৫ এপ্রিল একটি ফ্লাট ভাড়া নেয়। পরিকল্পনা মোতাবেক ৩০ এপ্রিল শিমুল ও শিলাস্তি রহমান বাংলাদেশ থেকে গিয়ে ওই ফ্লাটে ওঠে। অন্যান্য আসামির সঙ্গে বৈঠক করে ভিকটিমকে হত্যার দায়িত্ব দিয়ে ১০ মে বাংলাদেশে চলে আসে শাহিন। পরে শাহীনের পরামর্শ অনুযায়ী শিমুল ও অন্য আসামিরা এমপি আজীমকে কৌশলে ব্যবসার কথা বলে ওই ফ্ল্যাটে নিয়ে যায়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা এমপিকে হত্যা করে।
আসামি শিমুলকে জিজ্ঞাসাবাদে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তা এরইমধ্যে কলকাতার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি পুলিশকে জানানো হয়েছে বলেও জানান সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই গত ২৯ মে ওই ভবনের সেপটিক ট্যাংক থেকে মাংসসদৃশ বস্তু উদ্ধার করা হয়েছে। যা ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে ভিকটিম আনোয়ারুল আজীম আনারের কিনা নিশ্চিত হওয়া যাবে।
এদিকে ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে শিমুল আরও জানায়, ভিকটিমকে হত্যা করা ও শরীর থেকে হাড়-মাংস আলাদা করার কাজে ফয়সাল, মোস্তাফিজ ও জিহাদ সরাসরি জড়িত ছিল। হাড় ও শরীরের অন্যান্য অংশ দূরে ফেলে দেওয়ার কাজে সিয়ামসহ অজ্ঞাতনামা দু-একজন সরাসরি জড়িত ছিল। আসামি জিহাদকে কলকাতা পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
এ মামলার আসামি তানভীর ঘটনার সময় শিমুলের সঙ্গে কলকাতায় ছিল এবং তাকে সহায়তা করে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরে ডিবি। তদন্ত কর্মকর্তা জানান, শিলাস্তি রহমান ভিকটিমকে হত্যার সময় কলকাতার ওই ফ্ল্যাটে ছিল এবং হত্যার পরিকল্পনার একটি অংশ হিসেবে তাকে রিসিভ করার দায়িত্বে ছিল।
ভিকটিমের লাশের অনেক অংশ এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি এবং ঘটনায় জড়িত পলাতক মূল পরিকল্পনাকারী আকতারুজ্জামান শাহীন, সিয়াম, ফয়সাল ও মোস্তাফিজসহ অজ্ঞাতনামা অন্যান্য আসামিকে শনাক্ত, সঠিক নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি জানিয়ে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, এ অবস্থায় মামলার মূল রহস্য উদঘাটন, মূল পরিকল্পনাকারী আকতারুজ্জামান শাহীনের সঙ্গে আরও কোনও পরিকল্পনাকারী জড়িত কিনা তা জানার জন্য এবং আসামি সিয়াম, ফয়সাল ও মোস্তাফিজসহ অন্য আসামিদের শনাক্ত, সঠিক নাম-ঠিকানা সংগ্রহ ও গ্রেফতার এবং ভিকটিমের লাশের অবশিষ্ট অংশ উদ্ধারের জন্য আসামিদের ৮ দিনের রিমান্ডে নেওয়া দরকার।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ মে এই তিন আসামির ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন আদালত।