X
সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
২৭ মাঘ ১৪৩১

নতুন উপজেলা চেয়ারম্যানদের চার ভাগের তিন ভাগই ব্যবসায়ী

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট 
০৪ জুলাই ২০২৪, ১৭:৪৫আপডেট : ০৪ জুলাই ২০২৪, ১৭:৪৫

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পাঁচটি ধাপে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত মোট ৪৭০ জন বিজয়ী উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যে ৩৬০ জনই ব্যবসায়ী। আর শতকরা হিসেবে তা ৭৬ দশমিক ৬০। 

এছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা অন্যান্য পেশার মধ্যে ৪৮ জন কৃষিজীবী (১০ দশমিক ২১ শতাংশ), সাত জন চাকরিজীবী (১ দশমিক ৪৯ শতাংশ), ১৯ জন আইনজীবী (৪ দশমিক ০৪ শতাংশ), ১ জন গৃহিণী (শূন্য দশমিক ২১ শতাংশ ) এবং ২৮ জন অন্যান্য পেশার সঙ্গে জড়িত। আর এই অন্যান্য পেশাজীবীদের মধ্যে ১৫ জন অর্থাৎ ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ রয়েছেন শিক্ষক। এছাড়া সাত জন অর্থাৎ ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ পেশার ঘর পূরণ করেননি।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘ভোটার সচেতনতা ও নাগরিক সক্রিয়তা কার্যক্রম: ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থীদের তথ্যের বিশ্লেষণ উপস্থাপন ও নির্বাচন মূল্যায়ন‘ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।

এক্ষেত্রে বিশ্লেষণের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, প্রতিদ্বন্দ্বিতার তুলনায় ব্যবসায়ীদের নির্বাচিত হওয়ার হার বেশি। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৬৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ ব্যবসায়ী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। আর নির্বাচিতদের মধ্যে এই হার ৭৬ দশমিক ৬০ শতাংশ। অর্থাৎ অন্যান্য পেশার তুলনায় ভোটাররা ব্যবসায়ীদের বেছে নিয়েছেন বেশি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা সংক্রান্ত তথ্য, মামলা সংক্রান্ত তথ্য, প্রার্থী ও নির্ভরশীলদের বাৎসরিক আয় সংক্রান্ত তথ্য, সম্পদের তথ্য, দায়-দেনা ও ঋণ সংক্রান্ত তথ্য এবং আয়কর প্রদান সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরেন।

শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্যে বলা হয়, উপজেলা নির্বাচনে নির্বাচিত প্রার্থীদের মধ্যে স্নাতকোত্তর ছিলেন ২১ দশমিক ৯১ শতাংশ আর এইচএসসি'র নিচের ছিলেন ১৪ দশমিক ২৫ শতাংশ।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রার্থীদের মধ্যে বেশিরভাগই উচ্চশিক্ষিত হলেও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রার্থী রয়েছেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি অতিক্রম না করা। 

মামলা সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, নির্বাচিতদের মধ্যে বর্তমানে ৩০২ ধারায় মামলা রয়েছে ৫ দশমিক ৩২ শতাংশের এবং অতীতে ৩০২ ধারায় মামলা ছিল ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশের। আর উভয় সময়ে ৩০২ ধারায় মামলা রয়েছে শূন্য দশমিক ৮৫ শতাংশের। বিশ্লেষণে বলা হয়, বর্তমান ও অতীত মামলার ক্ষেত্রে ধারণা করা হয় যে, অধিকাংশ প্রার্থীই ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় প্রার্থীদের ক্ষেত্রে অতীত মামলা বেশি হলেও বর্তমান মামলার সংশ্লিষ্টতা কম। 

প্রার্থী ও নির্ভরশীলদের বাৎসরিক আয় সংক্রান্ত তথ্যে বলা হয় বিজয়ী সর্বমোট ৪৭০ জন প্রার্থীর মধ্যে ১ দশমিক ৭০ শতাংশ প্রার্থীর বার্ষিক আয় ২ লাখ টাকার কম, ২৬ দশমিক ৩৮ শতাংশের আয় ২ লাখ ১ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা, ৪৩ দশমিক ৪০শতাংশের আয় ৫ লাখ ১ টাকা থেকে ২৫ লাখ টাকা, ১০ দশমিক ৮৫ শতাংশের আয় ২৫ লাখ ১ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা, ৭দশমিক ৬৬ শতাংশের আয় ৫০ লাখ ১ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা এবং ৮ দশমিক ৯৪ শতাংশের আয় ১ কোটি টাকার অধিক।

সংবাদ সম্মেলনে বিজয়ী প্রার্থীদের দায়-দেনা ও ঋণ সংক্রান্ত তথ্য সম্পর্কে বলা হয়, ৪৭০ জন বিজয়ী প্রার্থীর মধ্যে ৩৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ ঋণ গ্রহীতা। এর মধ্যে কোটি টাকারও বেশি ঋণ নিয়েছেন ৩৬ দশমিক ৩১ শতাংশ। ঋণ গ্রহীতাদের নির্বাচিত হওয়ার হার প্রতিদ্বন্দ্বিতার তুলনায় বেশি।

নির্বাচিতদের আয়কর প্রদান সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের মধ্যে ৭৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ আয়কর দেন। এর মধ্যে ১৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ প্রার্থী ৫ হাজার টাকার নিচে কর দেন। লক্ষাধিক টাকার বেশি আয়কর দেন ৩৩ দশমিক ৬২ শতাংশ চেয়ারম্যান। প্রতিদ্বন্দ্বিতার তুলনায় নির্বাচিতদের মধ্যেও আয়কর প্রদানকারীদের হার বেশি।

দেশের গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে নির্বাচন ব্যবস্থাকে পরিশুদ্ধকরণের কোনও বিকল্প নেই বলে মনে করে সুজন। এজন্য বেশকিছু সুপারিশও করে সংস্থাটি। তাদের সুপারিশগুলো হলো- 

নির্বাচন ব্যবস্থাকে পরিশুদ্ধকরণ এবং স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালীকরণের জন্য প্রয়োজন বড় ধরনের রাজনৈতিক সংস্কার। রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যমত্য ও সমঝোতা। আর এই সমঝোতার জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আলোচনা ও সংলাপ; নির্বাচনি ব্যবস্থার সংস্কারের লক্ষ্যে নির্বাচনকালীন সরকারের ভূমিকা নির্ধারণের বিষয়ে ঐক্যমতে আসতে হবে; আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তনের বিষয়টি সংস্কারের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে; সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে দলীয়করণমুক্ত করতে হবে।

সুপারিশে আরও বলা হয়, এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে তারা মনে করে, ‘রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ”; সাংবিধানিক আকাঙ্ক্ষার আলোকে আমাদের দেশের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আইনগুলো সংশোধন করতে হবে এবং প্রতিষ্ঠানসমূহকে স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। একইসঙ্গে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচনগুলো নির্দলীয় ভিত্তিতে সংসদীয় পদ্ধতিতে করতে হবে; উপজেলা পরিষদকে দ্বৈত-শাসনমুক্ত করতে হবে এবং উপজেলা পরিষদের নির্বাহী ক্ষমতা চেয়ারম্যানের হাতে ন্যস্ত করতে হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সদস্য সচিব হিসেবে পরিষদের সার্বিক কর্মকাণ্ডের সমন্বয় করবেন; সংসদ সদস্যদের উপজেলা পরিষদের উপদেষ্টার পদ থেকে অব্যাহতি দিতে হবে এবং স্থানীয় সরকারের কর্মকাণ্ডে তাদের হস্তক্ষেপ নিষিদ্ধ করতে হবে; উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য জামানতের টাকা আগের মতো ১০ হাজার ও ৫ হাজার টাকা করতে হবে; জেলা পরিষদ নির্বাচন মৌলিক গণতন্ত্রের আদলে না করে সাধারণ ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটে আয়োজন করতে হবে; সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি একীভূত আইন (আমব্রেলা অ্যাক্ট) করতে হবে এবং ব্যয় সংকোচনসহ অনেক ধরনের জটিলতা পরিহারের জন্য একইসঙ্গে সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আপনারাও জানেন আমরাও জানি, নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানদের মধ্যে ব্যবসায়ীর মূল সংখ্যাটা আরও বেশি। ব্যবসায়ী হতে পারেন, তাতে সমস্যা নেই। তবে এখানে টাকার খেলা থাকলে সমস্যা। যদি টাকা দিয়ে মনোনয়ন কেনে, ভোট কেনে।’

ভোটার উপস্থিতির হার নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘যা (ভোটারের হার) দেখানো হয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে, প্রশ্ন আছে? তাও সন্তোষজনক না। ৫০ শতাংশ পার হয়নি।’

নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি যা বলা হয়েছে, তা ছিল কি না বলে সংশয় প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনে ভোটারদের অনীহা ছিল। রাজনৈতিক দলগুলো ভোট বর্জন করছে। এটা একই সুতোয় গাথা। মূল কারণ হলো আস্থাহীনতা... জনগণের আস্থাহীনতা নির্বাচন কমিশনের ওপর।‘

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও সুজনের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘কৌশলগত দিক ছিল আওয়ামী লীগের। সেখানে তারা কিছুটা হলেও সাকসেসফুল।’

তবে বিরোধী দলের স্থানীয় সরকারের ভোটে অংশ নেওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন তিনি। তার মতে, নির্দলীয় হিসেবে ব্যক্তি হিসেবে এসে তারা নিজের জনপ্রিয়তা যাচাই করে নিতে পারতেন।

এ সময় সুজনের জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

/এএজে/ইউএস/
টাইমলাইন: উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২০২৪
০৪ জুলাই ২০২৪, ১৭:৪৫
নতুন উপজেলা চেয়ারম্যানদের চার ভাগের তিন ভাগই ব্যবসায়ী
সম্পর্কিত
মে-জুনের মধ্যে নির্বাচনের জন্য ইসি প্রস্তুত হবে, আশা বিএনপির
কোনও দলের পক্ষে-বিপক্ষে দাঁড়াতে চাই না: সিইসি
ইসির সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধি দলের বৈঠক
সর্বশেষ খবর
বইমেলায় তসলিমা নাসরিনের বই নিয়ে উত্তেজনা, তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ বাম ছাত্র সংগঠনের
বইমেলায় তসলিমা নাসরিনের বই নিয়ে উত্তেজনা, তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ বাম ছাত্র সংগঠনের
সরকার ব্যবস্থা নেওয়ায় আজ-কালের মধ্যে কোনও ঘটনা ঘটেনি: প্রেস সচিব
সরকার ব্যবস্থা নেওয়ায় আজ-কালের মধ্যে কোনও ঘটনা ঘটেনি: প্রেস সচিব
দীর্ঘ সময় পর পর্যটক‌দের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে দেবতাখুম
দীর্ঘ সময় পর পর্যটক‌দের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে দেবতাখুম
সমাজবিরোধীরা কোনও ব্যক্তিকে হুমকি দিলে কঠোর ব্যবস্থা
সমাজবিরোধীরা কোনও ব্যক্তিকে হুমকি দিলে কঠোর ব্যবস্থা
সর্বাধিক পঠিত
রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনে আল্টিমেটাম, না করলে শাটডাউন
রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনে আল্টিমেটাম, না করলে শাটডাউন
‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
সমীক্ষাতেই ব্যয় ১৩৬ কোটি টাকা‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
ভাঙছে সাইফ-কারিনার সংসার?
ভাঙছে সাইফ-কারিনার সংসার?
চট্টগ্রামে দুই থানার ওসিকে বদলি
চট্টগ্রামে দুই থানার ওসিকে বদলি
৩২ নম্বরে মিলেছে হাড়গোড়, পরীক্ষা হবে ল্যাবে
৩২ নম্বরে মিলেছে হাড়গোড়, পরীক্ষা হবে ল্যাবে