ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’র প্রভাবে উপকূলের বহু এলাকা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। মানুষের জীবন রক্ষায় উপকূলের বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের পিবিএসগুলোর (সমিতি) জেনারেল ম্যানেজারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় উপকূলীয় এলাকায় প্রস্তুতি নিচ্ছে সমিতিগুলো।
ইতোমধ্যে সাতক্ষীরা উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে ঝোড়ো বাতাসে গাছ পড়ে দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে, সেজন্য এরইমধ্যে অনেক এলাকায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। অনেক এলাকায় লাইন চালু করার পর তা বারবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
জানা যায়, সম্ভাব্য ঝড়ে আক্রান্ত জেলাগুলোর বিদ্যুৎকর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ঝড় চলে যাওয়ার পর দ্রুত যাতে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যায়, সে লক্ষ্যে সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
বাগেরহাটের পিবিএস-এর জেনারেল ম্যানেজার সুশান্ত রায় বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সবাইকে স্ট্যান্ডবাই থাকতে বলা হয়েছে। এদিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে যাতে তা ঠিক করা যায়, এজন্য প্রয়োজনীয় মালামাল বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়েছে। তিনি জানান, তাদের লাইনম্যান আছে প্রায় ২৩২ জন, ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্ট আরও ১৫০ জন জনবল প্রস্তুত রয়েছে। তিনি আরও জানান, তাদের অধীন এলাকায় মোট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয় ১০৯ মেগাওয়াট। গ্রাহক আছে প্রায় ৪ লাখ ৮৫ হাজার। কিন্তু এখন মাত্র ২০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ পাচ্ছে। ঝোড়ো বাতাসের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা যাচ্ছে না বলে তিনি জানান।
এদিকে পটুয়াখালী সমিতির জেনারেল ম্যানেজার তুষার কান্তি মণ্ডল জানান, ঝড়ের জন্য যা যা প্রয়োজন, সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জনবল ও মালামাল সব ঠিক করা হয়েছে। ঠিকাদারদেরও স্ট্যান্ডবাই থাকতে বলা হয়েছে।
সাতক্ষীরা পিবিএস-এর জেনারেল ম্যানেজার জিয়াউর রহমান জানান, আমরা জুম মিটিং করে প্রতিটি অফিসে প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছি। আমরা সাধারণত তিন ধরনের প্রস্তুতি নিই—ঝড় আসার আগে, ঝড়ের সময় এবং ঝড় পরবর্তী সময়ে করণীয়। ঝড় আসার আগে আমরা মোবাইলে চার্জ দিয়ে রাখতে বলি সবাইকে, মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় মালামাল সংগ্রহ করে রাখা হয়, যারা স্ট্যান্ডবাই থাকবেন, তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। এদিকে ঝড়ের সময় যাতে কেউ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট না হয়, সেজন্য মাইকিং করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি আমরা চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে রাখছি। যাতে তাদের এলাকায় বিদ্যুতের তারের ওপরে গাছ পড়লে সরাসরি যোগাযোগ করা যায়।
এদিকে আবহাওয়া অধিদফতরের সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাবে বৃষ্টিসহ দমকা ও ঝোড়ো হাওয়া অব্যাহত রয়েছে। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে রবিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যে মোংলার কাছ দিয়ে সাগর আইল্যান্ড (পশ্চিমবঙ্গ) খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম করতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র অতিক্রমের পর এর নিম্নভাগ অতিক্রম অব্যাহত থাকবে। ঝড়ে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন জানান, ঝড়ের অগ্রভাগ উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করেছে। সন্ধ্যায় ৬টা থেকে ৩/৪ ঘণ্টার মধ্যে ঝড়ের কেন্দ্র উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। উপকূলীয় প্রায় সব এলাকায় এখন ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হচ্ছে।