‘ভারত যাওয়ার আগে এমপির সঙ্গে শেষ কথা হয়। সে সময় তিনি বলেছিলেন চেকগুলো তুলে রাখো। গরিব মানুষের চেকগুলো তুলে রাখো। আমি ফিরে এসে এগুলো সব একসঙ্গে বিতরণ করবো।’ বুধবার দুপুরে সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনারের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সিড়িতে বসে এসব বলতে বলতে বিলাপ করছিলেন এমপি আনারের সহযোগী রুবেল হোসেন।
পাশেই এমপির বাস ভবনের নিচে আহাজারি করছিলেন নিহত এমপির আত্মীয় কালীগঞ্জ পৌরসভার সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর বিনা খাতুন। তিনি বলছিলেন, ‘আমাদের সোনার জামাই কীভাবে চলে গেলো। সে তো কারও ক্ষতি করেনি। তাকে কেন মেরে ফেলা হলো। আমরা এর বিচার চাই।’
এই সংসদ সদস্যের আকস্মিক মৃত্যুতে স্বজন ও রাজনৈতিক সহকর্মীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
ভারতে যাওয়ার ১০ দিন পর বুধবার (২২ মে) সকালে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। কলকাতার নিউটাউন এলাকার আবাসন সঞ্জিভা গার্ডেন থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে সে দেশের পুলিশ। তার ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) আব্দুর রউফ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ১২ মে দুপুরে এমপি আনার চিকিৎসার জন্য দর্শনার গেদে বন্দর দিয়ে ভারতের কলকাতায় যান। তিনি ভারতীয় সীমান্ত এলাকা ঝিনাইদহ-৪ আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য (এমপি) এবং কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।
ভারতে তার মরদেহ উদ্ধারের সংবাদ পাওয়ার পর তার দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত শত শত মানুষ কান্নায় ভেঙে পড়েন। এমপি আনার জেলার কালীগঞ্জ শহরের ভূষণ রোডের বাড়িতে বসবাস করতেন। তার দুই মেয়ে ও স্ত্রী রয়েছে।
এমপির নির্বাচনি এলাকা কালীগঞ্জ উপজেলার ১নং সুন্দরপুর দূর্গাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওহিদুজ্জামান ওদু বলেন, ‘আমরা তার মৃত্যু সংবাদ শুনে রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে এসেছি। তার মরদেহ ভারতে পাওয়া গেছে। কীভাবে মৃত্যু হয়েছে তা বলতে পারছি না। এমপির সঙ্গে কারও কোনও বিরোধ ছিল না। যা ছিল তা খুবই সামান্য, কিন্তু তার জনপ্রিয়তা ছিল অনেক।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিহতের পরিবার ঢাকায় অবস্থান করছে। তারা ঝিনাইদহের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। তারা আসলে আরও কিছু জানা যাবে।
‘রাষ্ট্রীয়ভাবে এমপির মরদেহ দেশে আনা হবে। আমরা এখন মরদেহের জন্য অপেক্ষা করছি।’
উল্লেখ্য, আনোয়ারুল আজীম আনার ঝিনাইদহ-৪ (সদর ও কালীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য। তিনি ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে টানা তিন বার আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন তিনি।
গত ১২ মে তিনি চিকিৎসার কথা বলে ভারতে যান। কিন্তু ১৪ মে থেকে পরিবার ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। তার ব্যবহৃত হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরটিও বন্ধ ছিল। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে থেকে দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাস ও কলকাতায় উপদূতাবাসে যোগাযোগ করে খোঁজ নিতে বলা হয়।
বুধবার (২২ মে) কলকাতা পুলিশ জানায়, দিল্লি ও কলকাতা দূতাবাসের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার পরই আনোয়ারুল আজীমের খোঁজে তৎপরতা শুরু করে তারা। কলকাতায় এসে এমপি আনোয়ারুল আজীম তার কথিত বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে উঠেছিলেন। ১৮ মে গোপাল স্থানীয় বরাহনগর থানায় আজীম ‘নিখোঁজ’ দাবি করে জিডি করেন।
বুধবার সকালে গোপাল বিশ্বাস স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান, এমপি আজীমকে হত্যা করা হয়েছে বলে কলকাতা পুলিশ তাকে জানিয়েছে। কলকাতার নিউ টাউনের বিলাসবহুল আবাসন ‘সঞ্জিভা গার্ডেনে’ এই এমপি হত্যার শিকার হন।
তবে ওই ফ্ল্যাটে আজীমের লাশ পাওয়া যায়নি বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
ঘটনাটিকে ‘পরিকল্পিত খুন’ উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘এমপি আনার খুনের ঘটনায় তিন জনকে আটক করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এর বেশি কিছু বলা যাবে না।’
এর আগে মঙ্গলবার (২১ মে) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের ও ভারতের ইমিগ্রেশন পার হয়ে যথাযথভাবেই আনোয়ারুল আজীম ভারতে যান। পরিবার থেকে আমাদের জানানো হয়েছিল, তার কোনও খোঁজখবর পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি সব সংস্থা এটি নিয়ে কাজ করছে। আমাদের এনএসআই, এসবি ও পুলিশ কাজ করছে। ভারতীয় পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে এ নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।’