তৃতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে রংপুরের চার উপজেলায় ভোট হতে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয়ভাবে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে রংপুরে বিভিন্ন উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলটির নেতাকর্মীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অন্যদিকে অনেক নেতাকর্মী আওয়ামী লীগসহ অন্য প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিচ্ছে। প্রথম দুই ধাপের নির্বাচনেও বিভিন্ন ভূমিকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের দেখা গেছে।
যদিও তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপি রংপুরের চার উপজেলার সাত নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে। কিন্তু এরপরও দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের নির্বাচনি কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখতে পারেনি বলে জেলা ও উপজেলা বিএনপির একাধিক নেতা স্বীকার করেছেন।
অপরদিকে, জামায়াত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার অনেক আগে থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করা শুরু করে। রংপুরের তিনটি উপজেলায় তারা তাদের চেয়ারম্যান প্রার্থী ঘোষণা করে তাদের পক্ষে নেতাকর্মীরা মাঠেও নামেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। তবে পদধারী নেতারা প্রকাশ্য কোনও প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচার-প্রচারণায় অংশ না নিলেও তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যেই বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি কাজ করছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দফায় এই জেলায় পীরগাছা ও কাউনিয়ায় নির্বাচন হয়েছে। সেখানে পীরগাছা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ মো. ফরহাদ হোসেন অনু ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৩৫ হাজারের বেশি ভোটে পরাজিত হন। এই নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।
এদিকে, পীরগাছা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের চার জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে উপজেলা সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মিলন মাত্র দেড় হাজার ভোটে জয়ী হন। তার পক্ষে উপজেলা বিএনপির অনেক বড় বড় নেতা কাজ করেন। নিজেরা সরাসরি অংশ না নিয়ে পরোক্ষভাবে দলের নেতা-কর্মীদের এই আওয়ামী লীগ নেতার পক্ষে কাজ করতে নির্দেশনাও দিয়েছেন।
নির্বাচনের দিন তাদের প্রকাশ্য তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। একইভাবে অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা মনোয়ারুল ইসলাম মাসুদের পক্ষে দুই বিএনপি নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান কোমর বেঁধে নেমে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যার কারণে মাত্র দেড় হাজার ভোটের ব্যবধানে মিলনের কাছে পরাজিত হন মাসুদ। বিষয়টি ওপেন সিক্রেট (সবার জানা গোপনীয়তা)। এ ছাড়াও দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। একই ভাবে জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন।
অন্যদিকে কাউনিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী আওয়ামী লীগের উপজেলা সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম মায়ার পক্ষে হারাগাছ পৌর এলাকার অধিকাংশ বিএনপি নেতাকর্মী কাজ করেছিলেন। যদিও উপজেলা বিএনপির নেতারা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
অন্যদিকে গত দ্বিতীয় দফায় ২১ মে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে রংপুরের মিঠাপুকুর ও পীরগঞ্জে ভোট হয়েছিল। সেখানে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের কেন্দ্রে প্রার্থীদের এজেন্ট হওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশ নিত দেখা গেছে।
এ বিষয়ে মিঠাপুকুর উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি শিমুল ইসলাম দাবি করেন, দল নির্বাচন বর্জন করায় কোনও নেতা নেতাকর্মী অংশ নেননি।
তবে তৃণমূল বিএনপি নেতা আখতার হোসেন, আব্বাস আলী দাবি করেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নিরপেক্ষ থাকাটা সম্ভব নয়। এটা দলের ভুল আর হঠকারী সিদ্ধান্ত। একই কথা বলেন মিঠাপুকুর উপজেলা বিএনপি নেতা মোখতার হোসেন।
এদিকে আগামী ২৯ মে তৃতীয় দফার নির্বাচনে রংপুর সদর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাইয়ুম জাদু, গঙ্গাচড়া উপজেলার আলবিদিতর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মোকাররম হোসেন সুজন চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। গঙ্গাচড়া উপজেলার বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আখতারুজ্জামান মিল্টন ভাইস চেয়ারম্যান পদে অংশ নিয়েছেন। তাদের সঙ্গে গঙ্গাচড়া উপজেলা বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মী কাজ করছেন বলে দাবি ওই দুই নেতার।
এদিকে চতুর্থ দফার নির্বাচন আগামী ৫ জুন হবে। ওই নির্বাচনে তারাগঞ্জ উপজেলা পরিষদে বিএনপির তিন শীর্ষ নেতা ভাইস চেয়ারম্যান পদে অংশ নিচ্ছেন। তারা হলেন- উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক খায়রুল ইসলাম, ইকরচালি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কবিরুল ইসলাম ও যুবদল নেতা আশরাফুল আলম।
তারা তিনজনই দাবি করেছেন, এলাকার জনগণের প্রয়োজনে তারা নির্বাচন করছেন। দলের অনেক নেতাকর্মী তাদের সঙ্গে কাজ করছেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে জামায়াতের জেলা সেক্রেটারি এনামুল হক বলেন, একটা সময় আমি নিজেও মিঠাপুকুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলাম। দলের নির্দেশে নির্বাচনে অংশ নেয়নি। জামায়াতের কোনও নেতাকর্মী নির্বাচনে অংশ নেননি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েক নেতা বলেছেন, সবাইকে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখা সম্ভব হয়নি।
অপরদিকে রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনে দলীয় নির্দেশ অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় রংপুরে সাত নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমরা মনে করি, এ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। তাই নির্বাচন বয়কট করেছি। তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন- এমন অভিযোগ সত্য নয়।