X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

যত বাধা পেরিয়ে

এমরান হোসাইন শেখ
২৫ জুন ২০২২, ০০:০৫আপডেট : ২৫ জুন ২০২২, ১৩:৪৫

নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত দেশের বৃহৎ প্রকল্প পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে রবিবার (২৬ জুন) যান চলাচল শুরু হবে। শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। এ সেতু চালুর মধ্য দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার অবসান ঘটছে। তবে, শেখ হাসিনা সরকারের জন্য উন্মত্ত পদ্মার বুকে স্বপ্ন বুননের পথটি মসৃণ ছিল না।

শেখ হাসিনার অসীম সাহস ও দৃঢ় নেতৃত্বের প্রতিফলন পদ্মা সেতু আজ বাস্তবতা। জাতীয়-আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে এ সেতু নির্মাণে ছিল অজস্র চ্যালেঞ্জ। পদ্মা সেতুকে বাস্তবে রূপ দিয়ে বিদেশিদের অপমানের জবাবও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

 

দিন বদলের সনদ

নবম সংসদ নির্বাচনের (২০০৮) আগে ‘দিন বদলের সনদ’ নামে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যে নির্বাচনি ইশতেহার দেওয়া হয় সেখানে প্রতিশ্রুতি ছিল পদ্মা সেতু নির্মাণের। ক্ষমতায় এসে সেই অনুযায়ী কাজও শুরু করেছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু শুরুতেই হোঁচট খেতে হয় সরকারকে। দুর্নীতির কথিত অভিযোগসহ আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধকতার মুখেও পড়ে সরকার।

বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ এ সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকসহ বিদেশি অর্থায়ন নিয়ে চলে নানা জটিলতা। উঠে আসে ষড়যন্ত্রের নানা তথ্য। অনিশ্চিত হয়ে পড়ে সেতু নির্মাণ।

২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর মূল কাঠামো নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে ২০১৪ সালের ১৮ জুন সেতু নির্মাণে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সই করে সরকার।

 

সেতু হলো দৃশ্যমান

নির্মাণ শুরুর দুই বছরের মাথায় ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে ১৫০ মিটার স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হতে শুরু করে পদ্মা সেতু। একে একে বসতে থাকতে স্প্যান। ১৫০ মিটার করে বাড়তে থাকে সেতু।

প্রথম স্প্যান বসার তিন বছরের মাথায় ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর ৪১তম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে পূর্ণাঙ্গ রূপ পায় সেতুটি। এতে দৃশ্যমান ছয় হাজার ১৫০ মিটারের পুরো সেতু। সংযোগ ঘটে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের।

এর পর ধাপে ধাপে এগুতে থাতে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ। মূল সেতুর পাশাপাশি সংযোগ সড়ক, নদীশাসনের কাজ চলতে থাকে সমান তালে।

এদিকে স্প্যানের ওপর কংক্রিটের স্ল্যাব বসানোর মাধ্যমে পদ্মা সেতু সড়কপথ দিয়ে যুক্ত হয় ২০২১ সালের ২৩ আগস্ট। ২২ মিটার লম্বা এবং দুই মিটারের কিছু বেশি চওড়া ২ হাজার ৯১৭টি কংক্রিটের স্ল্যাব জোড়া দিয়ে মূল সেতুর যানবাহনের পথ তৈরি করা হয়।

যান চলাচল উপযোগী করে তুলতে সেতুতে পিচ ঢালাইয়ের কাজ শুরু হয়েছিল ২০২১ সালের ১০ নভেম্বর। মূল সেতুর ঢালাই কাজ শেষ হয় গত ২৯ এপ্রিল। সংযোগ সড়কসহ পুরো পিচ ঢালাই শেষ হয় ২৩ মে।

এরপর ল্যাম্পপোস্ট বসানোসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ২২ জুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতু বিভাগের কাছে পদ্মা সেতু বুঝিয়ে দেয়।

 

টালবাহানা ও অপতৎপরতা

পদ্ম সেতু নির্মাণে বাধা-বিপত্তির জন্য সরকারের তরফ থেকে আগাগোড়াই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকে দায়ী করা হয়। এক্ষেত্রে বেশি দোষারোপ করা হয়েছে দাতাসংস্থা বিশ্বব্যাংক ও একে ঘিরে থাকা পশ্চিমা বিশ্বকে।

এছাড়া দেশীয় একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগ আসে। বিশেষ করে শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূসকে এ জন্য দায়ী করা হয়।

অভিযোগ করা হয়, অবৈধভাবে গ্রামীণ ব্যাংকের পদে থাকতে না পেরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি খোলাসাও করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রথম মেয়াদে ১৯৯৮ সালে পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই হয়। ২০০১ সালে জাপানিদের সহায়তায় পুনরায় সম্ভাব্যতা যাচাই হয়।

স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে ২০০১ সালের ৪ জুলাই মাওয়া পয়েন্টে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করেন শেখ হাসিনা।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার শপথ নিয়েই নতুন করে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ হাতে নেয়। ২০০৯ সালের ১৯ জুন সেতুর নকশা প্রণয়নের প্রস্তাব মন্ত্রিসভা অনুমোদন দেয়। ২৯ জুন পরামর্শকের সঙ্গে চুক্তি হয়।

সেতুর কাজ ২০১৩ সালের মধ্যে শেষ করার সময় নির্ধারণ করা হয় তখন। ২০১০ সালে প্রিকোয়ালিফিকেশন দরপত্র আহ্বান করা হয়। তখন অর্থায়নে আগ্রহ দেখায় বিশ্বব্যাংক। সেইসঙ্গে সহযোগী হতে চায় এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) ও জাইকা।

২৯০ কোটি ডলার ব্যয়ে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য ২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি সই করে সরকার। এরপর ওই বছরের ১৮ মে জাইকা (৪০ কোটি ডলার), ২৪ মে আইডিবি (১৪ কোটি ডলার) এবং ৬ জুন এডিবির (৬২ কোটি ডলার) সঙ্গে ঋণচুক্তি সই হয়।

এরই মধ্যে শুরু হয় ষড়যন্ত্র। কোনও ধরনের অর্থ ছাড়ের আগেই বিশ্ব ব্যাংক থেকে আনা হয় কথিত দুর্নীতির অভিযোগ। ওই বছরের (২০১১) সেপ্টেম্বরে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন স্থগিত করে। সেই পথ অনুসরণ করে অন্য দাতা সংস্থাও।

ঋণ পুনর্বিবেচনার জন্য দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ চারটি শর্ত জুড়ে দেয় এই উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানটি। এ সময় দুই দফায় বিশ্বব্যাংক তাদের কথিত দুর্নীতির কিছু ‘তথ্য-প্রমাণ’ও বাংলাদেশকে দেয়।

সরকারের তরফ থেকে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারে দেন-দরবার চলতে থাকে। প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে চুক্তি বাতিল ও যোগাযোগ সচিবকে সরিয়ে দেওয়াসহ কিছু দৃশ্যমান পদক্ষেপও সরকার এ সময় নেয়।

কিন্তু বিশ্বব্যাংকের দৃষ্টিতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে এ পদক্ষেপ ‘সন্তোষজনক’ ছিল না। তারা প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়াসহ নতুন নতুন চাপ দিতে থাকে। শেষ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক ২০১২ সালের ২৯ জুন ঋণচুক্তি বাতিল করে।

এর তিন দিনের মাথায় ২ জুলাই সংসদে ৩০০ বিধিতে বক্তব্য দিয়ে বিশ্বব্যাংকের ঋণচুক্তি বাতিল নিয়ে সংসদে কথা বলেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিত। ঋণচুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংকের দেওয়া বক্তব্য বাংলাদেশকে অপমান করেছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি তখন বলেন, ‘আমি জোর গলায় বলতে পারি, পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোথাও কোনও অপচয় বা দুর্নীতি হয়নি।’ এ সময় বিশ্বব্যাংক বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে বলে আশা প্রকাশ করেন মুহিত।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সংসদে দেওয়া বক্তব্যে পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগ নাকচ করে দেন এবং নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। এসময় তিনি বাংলাদেশি ও প্রবাসীদের সেতু নির্মাণে সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেকে এগিয়েও আসেন। শুরু হয় অর্থ সংগ্রহ। জুলাইয়ের শেষ দিকে মন্ত্রিসভার বৈঠকে পদ্মা সেতুর অর্থ সংগ্রহে প্রতিটি তফসিলি ব্যাংকে দুটি করে ব্যাংক হিসাব খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

মন্ত্রিসভার বৈঠকে সকল মন্ত্রী তাদের এক মাসের সম্মানি পদ্মা সেতু ফান্ডে জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। অর্ধ শতাধিক সচিবও তাদের একটি উৎসব ভাতার সমপরিমাণ অর্থ ফান্ডে জমা দেন।

তবে, এসবের মধ্যেও বিশ্বব্যাংককে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাতে থাকেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী। যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনের পদত্যাগ, দুর্নীতির অভিযোগ দুদকের মাধ্যমে অধিকতর তদন্তসহ বিশ্বব্যাংকের শর্তপূরণের চেষ্টা করা হয়। বিশ্বব্যাংকের ফিরে আসার পথে আটকে থাকে অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানকে ছুটিতে পাঠানোর বিষয়টি। শেষ পর্যন্ত তাকে ছুটিতে পাঠানোর শর্তে সরকার রাজি হলে ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাংক আবারও ফিরে আসার ঘোষণা দেয়।

তবে বাধ সাধেন অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর। দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে তিনি ছুটিতে যেতে অস্বীকার করেন। নতুন করে অনিশ্চয়তায় পড়ে যায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন। তাকে রেখেই সমঝোতার চেষ্টা হয়।

বিশ্বব্যাংকের দেওয়া শর্তানুসারে সেতুর পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করে দুদক। ওই সময় বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদলও একাধিকবার ঢাকায় এসে দুদকের সঙ্গে বৈঠক করে। নতুন নতুন শর্তারোপ হতে থাকে এসব বৈঠকে।

বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে দেন-দরবারের পাশাপাশি সরকার বিকল্প অর্থায়নের প্রচেষ্টা শুরু করে। নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের উদ্যোগের কথাও এ সময় জোরেশোরে আলোচনা হতে থাকে।

বিশ্বব্যাংকের এই টালবাহানায় ক্ষুব্ধ হয়ে ২০১৩ সালের ২৪ জানুয়ারি বিশ্বব্যাংককে এক সপ্তাহের আলটিমেটাম দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ওই মাসের মধ্যে বিশ্বব্যাংক তাদের অবস্থান স্পষ্ট না করলে সরকার তাদের কাছ থেকে কোনও ঋণ নেবে না। পরে ৩১ জানুয়ারি অর্থায়নের অনুরোধ প্রত্যাহার করে বিশ্বব্যাংককে চিঠি দেয় সরকার।

পরে মালয়েশিয়া, চীনসহ কয়েকটি দেশ অর্থায়নে আগ্রহ দেখায়। তবে তাদের প্রস্তাব দেশের জন্য সাশ্রয়ী না হওয়ায় সরকার নিজস্ব অর্থায়নেই অটল থাকে।

পরবর্তী অর্থবছরের (২০১৩-১৪) বাজেটে পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য ছয় হাজার ৮৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের মধ্য দিয়ে সেতু নির্মাণের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়।

এদিকে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাতিল হওয়ার পেছনে ড. ইউনূসের হাত ছিল বলে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার অভিযোগ তোলা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার ড. ইউনূসের নাম উল্লেখ করে বলেছেন, পদ্মা সেতু ষড়যন্ত্রের সঙ্গে আমাদের দেশের একজন নোবেলজয়ী জড়িত। ব্যাংকের এমডি পদে থাকতে না পেরে তিনি এই ষড়যন্ত্র করেছিলেন। এ প্রসঙ্গে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনসহ কয়েকটি দেশের প্রধানমন্ত্রীকে ফোনও করেছিলেন বলে তিনি জানান।

পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন না করতে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিও নানা অপতৎপরতা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। তারা বিশ্বব্যাংকের এ দেশীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ঋণচুক্তি পুনর্বিবেচনা না করার তদবির করেছে বলে সরকারি দলের অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি দেশের কিছু বিশেষজ্ঞও নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগকে অলীক-কল্পনা বলেন।

মেলেনি প্রমাণ

প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ করলেও কানাডার আদালতে কোনও প্রমাণ দিতে পারেনি বিশ্বব্যাংক। ২০১৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে কানাডার আদালত জানায়, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক ঋণ বাতিল করেছিল তার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

কানাডার আদালতের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, সততার শক্তি ছিল বলেই বিশ্বব্যাংকের ওই অভিযোগকে তিনি চ্যালেঞ্জ জানাতে পেরেছিলেন। তিনি বলেন, ‘এতকাল পরে আজ তারা স্বীকার করেছে, কোর্ট বলে দিয়েছে; এখানে তো কোনও দুর্নীতি হয়নি, বরং ওয়ার্ল্ড ব্যাংক যে অভিযোগ করেছে, তা ভুয়া, মিথ্যা ও আষাঢ়ে গল্প।’

এ ঘটনার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের মানুষের মর্যাদা অনেক বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পদ্মা সেতুর পেছনে বাধাবিপত্তির বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহম্মদ ফারুক খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে দেশের মধ্যে ও দেশের বাইরে ষড়যন্ত্র হয়েছে। তারা চেয়েছে এই সেতুটা যেন না হয়। নানাভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে দুর্নীতির অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ করে আমরা সেতু নির্মাণ শেষ করেছি। বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছি আমরাও পারি।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি ও সৎ সাহস না থাকলে পদ্মা সেতু সম্ভব হতো না। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের জন্য গর্ব ও অহংকারের বিষয়। শেখ হাসিনার দূরদর্শী দৃষ্টির কারণেই আজ জাতি ইতিহাস সৃষ্টির দ্বারপ্রান্তে।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন আমাদের জন্য আনন্দের, অহংকারের। পদ্মাপাড়ের মানুষের মাঝে উন্নয়নের স্পৃহা তৈরি করেছে এ সেতু। যে স্পৃহার উৎস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

উপদেষ্টার পদ থেকে সরে যাওয়ার চাপ থাকলেও নিজের অনড় অবস্থানের কারণে দুর্নীতির দায় নিয়ে পদত্যাগে অস্বীকার করা এই উপদেষ্টা বলেন, আমার ওপর একটা বড় ছায়া আছে। বঙ্গবন্ধুর ছায়া। ওই ছায়া যতদিন থাকবে, ততদিন আমি নিরাপদ।’

 

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন, এ সেতু নিয়ে দেশ-বিদেশে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু নিজেদের টাকায় এই সেতু নির্মাণ করে ষড়যন্ত্রকারীদের সমুচিত জবাব দেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু সক্ষমতা ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক এবং অপমানের প্রতিশোধ।

পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরুর পর থেকে বিশ্ব বাংলাদেশকে সমীহ করছে জানিয়ে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘অন্যায়ের কাছে মাথা নত করিনি, করবো না। পদ্মা সেতু আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করেছে। ভবিষ্যতে আরও উন্নত কাজ করা সম্ভব হবে।’

/এফএ/এমওএফ/
টাইমলাইন: পদ্মা সেতু টাইমলাইন
২৬ জুন ২০২২, ১০:০০
২৫ জুন ২০২২, ১৩:১৮
২৫ জুন ২০২২, ১১:৫৯
সম্পর্কিত
২৪ ঘণ্টায় পদ্মা সেতুতে প্রায় ৫ কোটি টাকা টোল আদায়
পদ্মা সেতুতে আট ঘণ্টায় পৌনে ২ কোটি টাকার টোল আদায়
বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ
সর্বশেষ খবর
বিতর্কের মুখে গাজায় ইসরায়েলি কার্যকলাপের নিন্দা জানিয়েছেন মালালা
বিতর্কের মুখে গাজায় ইসরায়েলি কার্যকলাপের নিন্দা জানিয়েছেন মালালা
‘পাতানো ম্যাচ’ নয়, মাঠে খেলেই এগিয়ে যেতে চায় স্বাধীনতা
‘পাতানো ম্যাচ’ নয়, মাঠে খেলেই এগিয়ে যেতে চায় স্বাধীনতা
ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে, মোকাবিলায় কী করছে ডিএনসিসি
ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে, মোকাবিলায় কী করছে ডিএনসিসি
গোপনে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
গোপনে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি