কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রাণহানি ও আহত হওয়ার ঘটনায় যৌথ বিবৃতি দিয়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ৩৯টি রাজনৈতিক দল।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গত ৪৮ ঘণ্টায় চিহ্নিত সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের হাতে যেভাবে দেশব্যাপী সহস্রাধিক ছাত্র-ছাত্রীর আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে, অনেকে গুরুতর আহত অবস্থায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। আমরা মনে করি, এসব ঘটনার পুরো দায়-দায়িত্ব সরকার ও সরকারি দলের। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যেভাবে উসকানি সৃষ্টি করা হয়েছে এবং ছাত্রলীগকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ যৌক্তিক আন্দোলন মোকাবিলা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তা গত দুই দিনের সমগ্র ঘটনার ক্ষেত্র তৈরি করেছে।’
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) রাতে গুলশানের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও বিএনপির সিনিয়র কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের বৈঠক হয়। বৈঠকে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে পরবর্তী কর্মসূচি কী আসতে পারে, তা নিয়েও আলোচনা হয়।
লিয়াজোঁ কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, বুধবার গায়েবানা জানাজা পড়ার পর শিক্ষার্থীদের সিদ্ধান্ত দেখে পরবর্তী রাজনৈতিক কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়টি আলোচনা হবে। এ ক্ষেত্রে বৃহস্পতিবার কোনও কর্মসূচি থাকতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে যৌথ বিবৃতি পড়ে শোনান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবি পূরণে কার্যকরী ও বিশ্বাসযোগ্য উদ্যোগ নেওয়ার পরিবর্তে ছাত্র তরুণদের এই আন্দোলনে সোমবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত যেভাবে ঠান্ডায় মাথায় পরিকল্পিতভাবে বলপ্রয়োগ করা হয়েছে এবং সরকারি দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগসহ তাদের বিভিন্ন সংগঠন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আজ যেভাবে প্রায় সারা দেশে হামলা, আক্রমণ ও গুলিবর্ষণ করা হয়েছে, গণমাধ্যমের সংবাদ অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত ৭ জনকে হত্যা হয়েছে, এই ঘটনায় আমরা ক্ষোভ, তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
ফখরুল বলেন, ‘আমরা এই পরিকল্পিত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের তীব্র প্রতিবাদ করে বলতে চাই যে দমন-নিপীড়ন ও সহিংসতা চালিয়ে সরকার আজ এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে। আমরা লক্ষ্য করেছি, এখনও পর্যন্ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত শতাধিক সরকারদলীয় স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে আইনের আওয়াত আনা হয়নি। আমরা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আজ পুলিশের গুলিতে ও ছাত্রলীগের স্বশস্ত্র হামলায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের জন্য আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি। আমরা নিহত ও আহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক সাংবাদিক আহত ও নির্যাতিত হয়েছেন, তাদের প্রতি সমবেদনা জানাই।’