খেরসন শহর থেকে রুশ বাহিনী প্রত্যাহারের ঘটনায় ব্যাপক উজ্জীবিত ইউক্রেন। ইউক্রেনীয় সেনারা শহরটিতে প্রবেশের আগেই তাদের অভ্যর্থনা জানাতে রাস্তায় ফুল নিয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায় স্থানীয়দের। এরইমধ্যে সেখানে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে কিয়েভ। এসবের ডামাডোলে নতুন করে একটি প্রশ্ন সামনে আসছে, খেরসনের পর কী এবার ক্রিমিয়ায় নজর দিচ্ছে ইউক্রেন?
কোনও কোনও বিশ্লেষকের ধারণা, ইউক্রেনীয় বাহিনী এখনই ডিনিপার অতিক্রমের পথে হাঁটবে না। কেননা এতে করে তারা সরবরাহ লাইন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী এখন একটি অপারেশনাল বিরতি নিতে পারে। এই সময়ে তারা বিমান প্রতিরক্ষা, আর্টিলারি এবং সাঁজোয়া যান নিয়ে আসতে পারে। গোলাবারুদ, শেল ও রকেট সরবরাহের মতো কাজগুলো এখন সম্পন্ন হতে পারে।
৮০ কিলোমিটার পাল্লার হিমার্সও ইউক্রেনীয় বাহিনীর কাজে দেবে। এগুলো ব্যবহার করে তারা খেরসন অঞ্চলের দক্ষিণে রাশিয়ার বিভিন্ন গুদাম এবং সামরিক ঘাঁটিকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে পারবে।
গত এক মাসে ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোতে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির সাতটি অঞ্চলে এখনও বিদ্যুৎ নেই। এই বিদ্যুৎ সরবরাহ কবে নাগাদ পুনরুদ্ধার হবে সে বিষয়েও এখনও পর্যন্ত সুস্পষ্ট কোনও তথ্য নেই। ইতোমধ্যেই প্রায় ১৫টি দেশ ইউক্রেনকে জ্বালানি অবকাঠামো পুনরুদ্ধারে সহায়তা করছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের দফতরের একজন উপদেষ্টা এরেস্টোভিচ বলেছেন, ইউক্রেন থেকে কোন রৈখিক পাল্টা আক্রমণ হবে না। খেরসন অঞ্চলের দক্ষিণাঞ্চল দখলমুক্ত করার জন্য অন্যান্য উপায় ও বিকল্প ব্যবহার করা হবে।
উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামরিক-প্রযুক্তিগত সহায়তার পরবর্তী ধাপে কমপক্ষে ৪০টি সাঁজোয়া নৌযান থাকবে।
এদিকে সাগর থেকে রুশ হামলা মোকাবিলায় নৌ ড্রোন সংগ্রহে নজর দিচ্ছে ইউক্রেন। কৃষ্ণ সাগরে যুদ্ধজাহাজ থেকে উৎক্ষেপণ করা রুশ ক্ষেপণাস্ত্র থেকে আত্মরক্ষায় একটি নৌ ড্রোন বহর তৈরির ওপর জোর দিচ্ছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এই বহর তৈরিতে একটি তহবিল সংগ্রহ অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন তিনি।
রুশ আগ্রাসন শুরুর পর যুদ্ধের বহুমুখী খরচ মেটাতে অনলাইনে ‘ইউনাইটেড ২৪’ শীর্ষক একটি তহবিল সংগ্রহ অভিযান শুরু করে কিয়েভ। সেই ক্যাম্পেইনের আওতায় এবার নৌ ড্রোন বহরের জন্য তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
স্বভাবতই খেরসনের সাফল্য ইউক্রেনীয় বাহিনীকে উজ্জীবিত করেছে। পর্যবেক্ষকদের ধারণা, আপাতত সাময়িক অপারেশনাল বিরতিতে ক্রিমিয়ার নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার প্রস্তুতি পর্ব সম্পন্ন করতে পারে তারা। এমনিতেই মাঝেমধ্যেই ক্রিমিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে অঞ্চলটির যেসব স্থানে রুশ বাহিনীর উপস্থিতি রয়েছে সেসব এলাকা আক্রান্ত হওয়ার নজির রয়েছে।
রুশ জেনারেলরা সম্ভবত বুঝতে পেরেছেন যে, খেরসন ও জাপোরোজ্জিয়ার দক্ষিণাঞ্চল মুক্ত হওয়ার পর ইউক্রেনীয় বাহিনী তাদের পাল্টা আক্রমণ আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। ভলোদিমির জেলেনস্কিও নিজেও এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গোয়েন্দা প্রধান কিরিল বুদানভ আগেই নভেম্বরের শেষদিকে খেরসনকে মুক্ত করার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। এ বছরের শেষ নাগাদ তিনি গত ২৩ ফেব্রুয়ারির আগের সীমান্তে ফিরে যেতে চান। আর ২০২৩ সালের মে মাসের শেষ নাগাদ পুরো ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড মুক্ত করতে চান তিনি।
ইউক্রেনে সাবেক মার্কিন বিশেষ প্রতিনিধি কার্ট ভলকার এবং ইউরোপে মার্কিন সেনাবাহিনীর সাবেক কমান্ডার বেন হজেসও প্রায় একই রকমের পূর্বাভাস দিয়েছেন। স্বনামে তিন কর্মকর্তা একই রকমের পূর্বাভাস ইঙ্গিতপূর্ণ বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। সূত্র: এপি, আল জাজিরা, ডেইলি এক্সপ্রেস।