মঙ্গলবার কোটা আন্দোলনকারী, ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষে উত্তাল ছিল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা। এদিন ঢাকা কলেজের অদূরে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়েও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। সেখানে আহত হয় অন্তত অর্ধশত মানুষ। সেখান থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় একজনকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে তখনও জানা যায়নি তার নাম-ঠিকানা।
অবশেষে প্রায় এক দিন পর মেলে তার পরিচয়। তার নাম সবুজ আলী। ছাত্রলীগ ঢাকা কলেজ শাখার সক্রিয় কর্মী ছিলেন তিনি। ঢাকা কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের ছাত্র সবুজ থাকতেন কলেজের নর্থ হলের ২০৫ নম্বর রুমে। তিনি নীলফামারীর সদর উপজেলার বাদশা মিয়ার ছেলে।
চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুর ১২টার পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের অদূরে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। এতে মিরপুর সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। বিকাল ৪টার দিকে সংঘর্ষ ঢাকা কলেজ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় ঢাকা কলেজের সামনের রাস্তায় এক যুবককে রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাকে বিকাল সোয়া ৫টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, তাৎক্ষণিকভাবে তার পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। পরে রাতে তাকে সবুজ আলী হিসেবে শনাক্ত করেন সিআইডির বিশেষজ্ঞরা।
নিউ মার্কেট থানার এসআই মাহাবুব আলী জানান, মঙ্গলবার মধ্যরাতে সিআইডির একটি দল মরদেহের আঙুলের ছাপ ডেটাবেজের সঙ্গে মিলিয়ে সবুজের পরিচয় শনাক্ত করে।
বুধবার সকালে ঢাকা জেলা ও ঢাকা মহানগর (উত্তর ও দক্ষিণ) আওয়ামী লীগ এবং সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, মঙ্গলবার ঢাকা কলেজের সামনে সংঘর্ষে নিহত সবুজ ছাত্রলীগের কর্মী। এছাড়া চট্টগ্রামে নিহত সন্দিপনও ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সবুজ আলীসহ সংঘর্ষে নিহতদের স্মরণে আজ বুধবার (১৭ জুলাই) বিকাল ৩টায় আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে সবুজ আলী ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন জানিয়ে ফেসবুকে শোক প্রকাশ করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। সেখানে তিনি লিখেছেন, সন্ত্রাসীদের হাতে খুন ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী মো. সবুজ আলী। এছাড়া ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান অনেক নেতাও ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে তাকে ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে সবুজের জন্য শোক জানিয়েছেন।
বুধবার ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান এক শোকবার্তায় সবুজ আলীর নিহতের ঘটনায় শোক ও নিন্দা জানিয়েছেন।
দুই নেতার স্বাক্ষরিত শোক বার্তায় বলা হয়, ‘বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী হামলায় ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কর্মী মো. সবুজ আলী মারা গেছেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ পরিবার তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছে।’
অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়ে ওই বার্তায় বলা হয়, ‘ছাত্রলীগ বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের দেশব্যাপী তাণ্ডবের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।’
এদিকে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ নেতা রজ্জব রায়হান বলেন, সবুজ ছিল ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের অনন্য কর্মী। কেননা নিজে উপার্জন করে সংগঠন করতো। কলেজে ফটোকপির দোকানে কাজ করে নিজে চলতো, পরিবারকেও সহায়তা করতো। আমরা ছাত্রলীগের এমন একনিষ্ঠ কর্মী ছোট ভাইকে হারিয়ে সত্যিই ভীষণ বেদনাহত।
ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের আরেক নেতা শেখ মিথুন বলেন, ঢাকা কলেজে আমরা পরিবারের মতো থাকতাম। সবুজ শুধু ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের কর্মী নন, আমাদের ভাইও। ওর পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা।
প্রসঙ্গত, ঢাকা কলেজের বর্তমানে কোনও কমিটি নেই। তারা দুই জন কলেজের সিনিয়র নেতা।