কোটা সংস্কারের দাবিতে সারা দেশে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলন চলছে। বাংলাদেশে আন্দোলন নতুন কোনও ঘটনা নয়। বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থী-রাজনীতিকরা তাদের ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনে নামেন। এ পথ ধরেই সময়ে সময়ে বড় বড় পরিবর্তন এসেছে। তবে রাস্তা বন্ধ করে, যানবাহন আটকে, মানুষের স্বাভাবিক চলাচল বন্ধ করে আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষ। যারা দিন এনে দিন চলেন, তারা বলছেন, মূলত আন্দোলনের প্রভাব পড়ে আমাদের পেটে।
জীবিকা নির্বাহের তাগিদে প্রতিদিন সকালে রিকশা-অটোরিকশা নিয়ে বের হন শ্রমজীবীরা। তাদের আয়ের ওপরই পরিবারের দৈনন্দিন খরচ নির্ভর করে। রাস্তা অবরুদ্ধ থাকলে তাদের আয় কমে যায়। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তে হয় তাদের।
সোমবার (৮ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অফিসফেরত অনেকে হেঁটে বাসায় যাচ্ছেন। অনেকে আবার রিকশা, অটোরিকশায় বসে অপেক্ষা করছেন।
এ সময় বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে রিকশাচালক মোহাম্মাদ সালাম বলেন, ‘প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে একই জায়গায় বসে আছি। কোথাও যেতে পারছি না। যাত্রীরা রিকশা থেকে নেমে চলে যাচ্ছে।’
অটোরিকশাচালক মোহাম্মাদ জিয়া জানান, তিনি প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে একই জায়গায় বসে আছেন। যাত্রীরা নেমে চলে গেছেন। এখনও দিনের জমা ওঠে নাই তার। কীভাবে মালিককে ভাড়া দেবেন জানেন না তিনি।
২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য এক শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল। ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটা ব্যবস্থা সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। সে বছরের ৪ অক্টোবর কোটা পদ্ধতি বাতিল বিষয়ক পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এর মাধ্যমে ৪৬ বছর ধরে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে যে কোটাব্যবস্থা ছিল, তা বাতিল হয়ে যায়। ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করেন। সেই রিটের রায়ে চলতি বছরের ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই আন্দোলনে নেমেছেন চাকরিপ্রত্যাশী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।