X
শনিবার, ০৩ মে ২০২৫
২০ বৈশাখ ১৪৩২

আমি কখনও চাইনি এভাবে মানুষ আপনজন হারাবে: প্রধানমন্ত্রী

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৬ জুলাই ২০২৪, ২১:১৯আপডেট : ২৬ জুলাই ২০২৪, ২১:৪৮

মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বন্ধে সহিংসতায় জড়িতদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তি দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘দেশবাসীর কাছে এইটুকু বলবো যে যারা অপরাধী, তাদের খুঁজে করে দিতে হবে। সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এই বর্বরতার বিরুদ্ধে; এই ধরনের জঘন্য ঘটনার বিরুদ্ধে।’

শুক্রবার (২৬ জুলাই) বিকালে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় আহতদের খোঁজখবর নিতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগ পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আবারও বলবো, দেশবাসীকে বলবো, যারা এই ধরনের জঘন্য কাজ করে, তাদের কোথায় কে আছে খুঁজে বের করা। তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া, যেন আর কখনও এ দেশের মানুষের জীবন নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে। যেটা আমি কখনও চাইনি। কখনোই চাইনি এভাবে মানুষ আপনজন হারাবে, এভাবে মৃত্যুর মিছিল হবে। আজ বাংলাদেশে সেটাই করলো।’

সহিংসতায় যারা মারা গেছেন, তাদের আত্মার মাগফিরাত এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অত্যন্ত বেদনাদায়ক অবস্থা, আজ এতগুলো মানুষ আহত-নিহত হলো। আমি তো আমার সব হারিয়েছি— বাবা-মা, ভাই— সব হারিয়েছি, আমি তো জানি মানুষের হারানোর বেদনা কী? আমার চেয়ে বোধ হয় আর কেউ বেশি জানে না।’

বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই জামায়াত-শিবির, বিএনপি, ছাত্রদল, তারাই এই সুযোগটা নিয়ে, কোটা আন্দোলনের সুযোগটা নিয়ে দেশব্যাপী এই ধ্বংসাত্মক কাজ করে যাচ্ছে। এদের মধ্যে কোনও মনুষ্যত্ববোধ নেই, দেশের প্রতি কোনও মায়া-মমতা নেই, দেশের প্রতি কোনও দায়িত্ববোধ নেই। আর মানুষকে এরা মানুষ হিসেবেই গণ্য করে না।’

তিনি বলেন, ‘আমার প্রশ্ন, এতে অর্জনটা কী হলো? কতগুলো মানুষের জীবন চলে গেলো। কতগুলো পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হলো।’

ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের খোঁজখবর নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবি: ফোকাস বাংলা)

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই ’৭১ সালের কথা মনে পড়ে, ২০১৩-তে ৩ হাজার ৮০০ মানুষ, মানুষকে পোড়ানো, মেরে ফেলা, আবার ২০১৪-তে সেই একই ঘটনা। ২০২৩-এর ২৮ অক্টোবর, পুলিশকে যেভাবে মেরেছে, এবারও সেই পুলিশকে মারা না শুধু, মেরে লাশ ঝুলিয়ে রাখা। আওয়ামী লীগের (কর্মী) গাজীপুরের, তাকে মেরে ঝুলিয়ে রাখা। একই বর্বরতা, একই জঘন্য। কোনও মনুষ্যত্ববোধ নেই।’

তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সবাইকে আহ্বান করবো, এই যে বর্বরতা, এই যে সন্ত্রাস-জঙ্গি এবং মানুষকে হত্যা, এটা তো সম্পূর্ণ জঙ্গি কাজ। মানুষের হাত কাটা, পা কাটা, রগ কাটা। চট্টগ্রামে আমাদের ছাত্রলীগের ছেলেদের ছয় তলা থেকে ফেলে দেওয়া, তাদের রগ কেটে দেওয়া। পড়ে যাওয়ার পরও তাদের ওপর হামলা। এটা কোন ধরনের বর্বরতা?’

আহতদের চিকিৎসার কোন ঘাটতি হয়নি এবং তাদের চিকিৎসায় যা যা প্রয়োজন, সব করার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘(আহতদের) চিকিৎসার জন্য যা যা প্রয়োজন সরকার করে যাচ্ছে এবং করবে। চিকিৎসা শেষে তাদের অন্তত আয়-রুজির ব্যবস্থা যাতে হয়, সেটাও আমরা করবো।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখি। এখানে দলমত-নির্বিশেষে সবার জন্য আমি কাজ করি। আমি যা করি সব মানুষের জন্য করি। কে আমাকে সমর্থন করে, কে করে না, আমি সেটা চিন্তা করি না। কারণ আমি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী করেছে তাদের সেবা করতে। সেভাবেই আমি সেবা করি।’

শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও দেশের সমৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি চাচ্ছিলাম দেশে শান্তি থাকবে, দেশের মানুষের উন্নতি হবে, দেশের মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে। আমি সব দিকে ব্যবস্থা করেছি। তারা মানুষের সেবা করার যা যা সবই নষ্ট করবে, সবই ধ্বংস করে দেবে, সবই পোড়াবে।’

তিনি বলেন, ‘কতবার আমাকে মারার চেষ্টা করেছে। তারপরও আমি সেই শোক, ব্যথা, বাবা-মা, ভাই সব হারানোর বেদনা ভুলে, নিজের ওপর এত বড় আঘাত মোকাবিলা করে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি; মানুষ যেন ভালো থাকে। কিন্তু সেখানে এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা এবং তারপর মানুষগুলোর ওপর হামলা করা…মানুষের সেবা করার প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করা। এর চেয়ে কষ্টের আর কিচ্ছু হয় না।’

হাসপাতালের জরুরি বিভাগ পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী  ছবি: ফোকাস বাংলা

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই যে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা। আর হাসপাতালে আক্রমণ…কোভিড হাসপাতাল ছিল, সেটা পুড়িয়ে দিয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদফতর, চিকিৎসা; যেখানে মানুষের সেবা, সেখানেই আঘাত হানা— এর চেয়ে জঘন্য কাজ আর কিছু হয় না।’

সরকার কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা তো সব দাবি মেনেই নিয়েছি। তারপর আবার কেন? সেটাই আমার প্রশ্ন। এটা কি জঙ্গিবাদকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য?’

দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশবাসীকে বলবো, আপনারা দোয়া করেন যেন এই জঙ্গিবাদ ও জুলুমের হাত থেকে মানুষ মুক্তি পায়; মানুষের জীবনে শান্তি আসে।’

এর আগে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাম্প্রতিক সহিংসতায় আহতদের খোঁজখবর নেন এবং তাদের সঙ্গে কথা বলেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা।

/ইএইচএস/এনএআর/এমওএফ/
টাইমলাইন: কোটা আন্দোলন
০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০০
০৫ আগস্ট ২০২৪, ১৫:২২
০৪ আগস্ট ২০২৪, ২১:৩৭
সম্পর্কিত
খিলগাঁওয়ে ভবন থেকে পড়ে নিরাপত্তাকর্মীর মৃত্যু
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক শিক্ষার্থীর হামলায় শিক্ষক আহত, বিক্ষোভ
রাজধানীতে মাদরাসা শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
সর্বশেষ খবর
আইনজীবীকে মারধর করে পুলিশে দিলেন বিএনপি নেতাকর্মীরা
আইনজীবীকে মারধর করে পুলিশে দিলেন বিএনপি নেতাকর্মীরা
ফুফুর বাড়িতে বেড়াতে এসে নদীতে নেমে কিশোরী নিখোঁজ
ফুফুর বাড়িতে বেড়াতে এসে নদীতে নেমে কিশোরী নিখোঁজ
শ্রমিক লীগ কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা, লাশ দাফনের পর ককটেল হামলা
শ্রমিক লীগ কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা, লাশ দাফনের পর ককটেল হামলা
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় ২ জন: প্রতিবেদন
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় ২ জন: প্রতিবেদন
সর্বাধিক পঠিত
কেন আবারও আন্দোলনে যাচ্ছেন সহকারী প্রাথমিক শিক্ষকরা?
কেন আবারও আন্দোলনে যাচ্ছেন সহকারী প্রাথমিক শিক্ষকরা?
শুকনো মরিচের দাম কেজিতে কমলো ১০০ টাকা
শুকনো মরিচের দাম কেজিতে কমলো ১০০ টাকা
৩০০ ফিট দিয়ে রামপুরা করিডোর চালুর পরিকল্পনা ডিএনসিসির
৩০০ ফিট দিয়ে রামপুরা করিডোর চালুর পরিকল্পনা ডিএনসিসির
‘নারী সংস্কার কমিশনের প্রতি ঘৃণা উসকে দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন’
‘নারী সংস্কার কমিশনের প্রতি ঘৃণা উসকে দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন’
ইঞ্জিন বিকল, মাঝপথে থামলো চলন্ত ট্রেন
ইঞ্জিন বিকল, মাঝপথে থামলো চলন্ত ট্রেন