আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পুলিশ প্রবিধান (পিআরবি) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোরভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে মামলাটিতে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে দায়ের করা রিট খারিজ করে রবিবার (৪ আগস্ট) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ পর্যবেক্ষণ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুননিতে ছিলেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন, অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, ব্যারিস্টার অনীক আর হক, অ্যাডভোকেট মানজুর আল মতিন প্রীতম। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মো. মোরসেদ ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মেহেদী হাছান চৌধুরী।
হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ মিছিল, সমাবেশ ও জনসভায় অংশগ্রহণের অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে। মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ জীবন। তাই আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে মানুষের জীবন এবং মর্যাদা রক্ষায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। অনিবার্য প্রয়োজন ছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো দায়িত্ব পালনের সময় বল প্রয়োগ করতে পারবে না।
দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে মানবাধিকার ও মানুষের মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। সবার শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা থাকবে এবং তা সমানভাবে উপভোগ করতে পারবে। কোনও কর্তৃপক্ষ ব্যক্তি-গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে বৈষম্য করতে পারবে না।
যখন কোনও সাধারণ সমাবেশ বা মিছিল বেআইন সমাবেশ-মিছিলে পরিণত হবে তখন পুলিশের কী দায়িত্ব? এ বিষয়ে আদালত বলেন, বেআইনি সমাবেশ, দাঙ্গা ও জনশৃঙ্খলা বা জনশান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ দমনে পুলিশ সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অুনচ্ছেদ, দণ্ডবিধি ও পদ্ধতিগত আইনের প্রয়োগ করতে পারবে। এক্ষেত্রে সংবিধানের ৩২, ৩৩(১)(ড), ৩৬, ৩৭, ৩৮ অনুচ্ছেদ, ফৌজদারী কার্যবিধির ১২৭ থেকে ১৩২ ধারা, বেঙ্গল পুলিশ প্রবিধি (পিআরবি)’র ১৫৩, ১৫৪, ১৫৫, ১৫৬ ও ১৫৭ এবং দণ্ডবিধির ৯৬ থেকে ১০৬ পর্যন্ত বিধি অনুসরণ করবে।
আদালত আদেশে আরও বলেন, যদি কেউ আইন লঙ্ঘন করে তবে পুলিশ বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ব্যবহার করতে পারবে। আইনের লঙ্ঘন না হলে বা দাঙ্গা না বাঁধলে কোনও তাজা গুলি ব্যবহার করা যাবে না।
আদালত বলেন, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার পাশাপাশি পুলিশকে আইনি কাঠামোর মধ্যে থাকা অপরিহার্য।
পরে আইনজীবীরা বলেন, পিআরবিতে বলা আছে, গুলি করার আগে পুলিশকে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হয়। জীবন রক্ষার্থে সর্বশেষ ধাপ হিসেবে পুলিশ গুলি করতে পারবেন। তবে নির্বিচারে গুলি করা যাবে না।
এর আগে গত ২৯ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি না চালানোর নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। একইসঙ্গে রিট আবেদনে কোটা আন্দোলনের ৬ জন সমন্বয়কের ডিবি হেফাজত থেকে মুক্তির নির্দেশনা চাওয়া হয়। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মানজুর আল মতিন প্রীতম ও আইনুন্নাহার সিদ্দিকা লিপি এ রিট দায়ের করেন।
রিটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, সেনাবাহিনী প্রধানসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।
ওই রিট আবেদনের ওপর দুইদিন শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। তবে বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারপতি ছুটিতে থাকায় গত সপ্তাহের বুধবার ও বৃহস্পতিবার রিটের শুনানি হয়নি।