মেট্রোরেলে যাত্রীদের চলাচলের জন্য একক যাত্রার টিকিটের সংকট দেখা দিয়েছে স্টেশনগুলোতে। ধারণা করা হচ্ছে অধিকাংশ টিকিট যাত্রীরা নিয়ে আর ফেরত দেননি এবং অনেক টিকিট নষ্ট হয়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে। এতে রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়েছে আনুমানিক কোটি টাকা।
মেট্রোরেল সূত্র জানায়, মেট্রোরেল চালুর প্রথম দিকে প্রায় আড়াই লাখ একক যাত্রার টিকিট রাখা হয়েছিল। ইতোমধ্যে প্রায় অর্ধেক টিকিট হারিয়ে গেছে। এই একক যাত্রার টিকিট মেট্রোরেল স্টেশনের বাহিরে নেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ।
স্টেশনকর্মীদের মতে, এক পরিবারের একাধিক সদস্যের জন্য টিকিট কাটা হলেও একসঙ্গে বের হওয়ার সময় দুই-একটি টিকিট জমা দেওয়া হয়। বাকিগুলো ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃতভাবে জমা হয় না। অনেক যাত্রী আবার ভিড়ের মধ্যে টিকিট জমা না দিয়েও বের হয়ে যেতে পারেন। এমন ঘটনা বেশ কয়েকবার ধরা পড়েছে।
একক যাত্রার এতগুলো টিকিট নাই হয়ে যাওয়ায় টিকিট কাটার মেশিনগুলোতেও টিকিটের কমতি পড়ে বলে জানান বিভিন্ন স্টেশনের কর্মীরা।
তারা বলেন, বহির্গমন গেটে টিকিট জমা পড়ার পর সেই টিকিট নিয়ে আবার ভেন্ডার মেশিনে সেট করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে অপেক্ষা করতে হয় বহির্গমন গেটে পর্যাপ্ত টিকিট জমা হওয়া পর্যন্ত। কারণ বারবার ওই গেট খুলে টিকিট বের করা কিছুটা সময় সাপেক্ষ। সবাই এই গেট খোলে না। অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকায় কখনও গেট থেকে টিকিট বের করতে দেরি হয়। এক্ষেত্রে আবার টিকিট কাটার ভেন্ডার মেশিনে টিকিট শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
পর্যাপ্ত টিকিট থাকলে বারবার গেট খুলে বের করতে হয় না। জমা থাকা টিকিট ভেন্ডর মেশিনে সেট করা যায় বলে জানান স্টেশন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে টিকিট কম থাকায় যাত্রীদেরও ভোগান্তিতে পড়তে হয়। টিকিট না থাকায় কিছু কিছু ভেন্ডর মেশিন বন্ধ থাকে। তখন এক মেশিনে চাপ পড়ে। টিকিট শেষ হলে অপেক্ষা করতে হয়।
এ বিষয়ে যাত্রীরা আধুনিক সমাধান চান। নিয়মিত মেট্রোরেলে চলাচল করা যাত্রী নাইম ইসলাম সোহাগ বলেন, ‘আমি ভারতের দিল্লি ও কলকাতায় মেট্রোরেলে চড়েছি। সেখানে দেখেছি প্লাস্টিকের কয়েন ব্যবহার করতে। যেটা আমার কাছে টেকসই মনে হয়েছে। এছাড়া তারা কিউআর কোড সিস্টেম রেখেছে। সেই ব্যবস্থাও রাখা যেতে পারে আমাদের মেট্রোরেলে।’
ডিএমটিসি থেকে একক যাত্রার টিকিট সঙ্গে না নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এতে রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমটিসিএল এর পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) নাসির উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খোয়া যাওয়া টিকিটের একেবারে সঠিক সংখ্যা বলতে পারবো না। তবে যাত্রীদের সঙ্গে করে টিকিট নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। তারা এটা কিন্তু পরবর্তীতে ব্যবহার করতে পারবে না। এবং এটা অন্য কোনও কাজেও আসবে না। তাই এটা সঙ্গে করে না নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানাই সবাইকে।’
এ বিষয়ে ডিএমটিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এমআরটির সিঙ্গেল জার্নির টিকিট অনেকে পকেটে করে নিয়ে যান, অনেকে জমা না দিয়েই বের হয়ে যান। এসব কারণে এই টিকিটের সংখ্যা বেশ কমেছে। তবে কতটা কমেছে তার সুনির্দিষ্ট সংখ্যা এই মুহূর্তে বলতে পারবো না। জেনে জানাতে পারবো।’
প্রতি টিকিটে কত টাকা করে খরচ হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা লটে অর্ডার দিয়ে আনিয়েছি। সিঙ্গেল টিকিটের খরচ কত হয়েছে সেই হিসাবটা জানা নেই।’