সোমবার (২৯ জুলাই) গণভবনে অনুষ্ঠিত ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেটিকে ‘বেআইনি’ উল্লেখ করে এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। এ সিদ্ধান্তকে ‘অসাংবিধানিক’ বলেছেন তিনি।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম। একটি রাজনৈতিক দল বা জোট অন্য একটি রাজনৈতিক দলের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। বাংলাদেশের আইন ও সংবিংধান কাউকে এ এখতিয়ার দেয়নি। কোনও দল বা জোট অন্য কোনও দলকে নিষিদ্ধ করার ধারা চালু হলে এক দল অন্য দলকে নিষিদ্ধ করতে থাকবে। তখন রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা বলে কিছু থাকবে না।’
দলের আমির দাবি করেন, ‘জামায়াতে ইসলামী একটি প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংগঠন যা বাংলাদেশের সব গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে। প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে।’
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি বিরোধিতা করেছে জামায়াত। মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রমাণিত হয়ে দলটির শীর্ষ বেশ কয়েকজন নেতার ফাঁসি হয়েছে। কেউ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পেয়ে কারাভোগ করার সময় মারা গেছেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতা, মানুষের মৃত্যু, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগসহ নানা নাশকতায় সরকারের পক্ষ থেকে জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করা হচ্ছে। এছাড়া বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর বেশ কয়েকজন নেতাও এরমধ্যে আটক হয়েছেন।
বিবৃতিতে জামায়াতের আমির বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জামায়াতের সঙ্গে বসে অতীতে অনেক আন্দোলন করেছে। দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থার ফর্মুলা জাতির সামনে উপস্থাপন করেছে এবং তার ভিত্তিতে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরকম একটি গণতান্ত্রিক সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার দাবি বেআইনি, এখতিয়ার বহির্ভূত ও সংবিধান পরিপন্থি। জনগণ ১৪ দলের এই দাবি গ্রহণ করবে না।’
বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, ‘অরাজক পরিস্থিতিতে সরকার দেশ ও বিশ্ববাসীর দৃষ্টি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার জন্য এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে ১৪ দলের বৈঠকে জামায়াত নিষিদ্ধের এ হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
দলে কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার প্রত্যয় জানিয়ে আমির উল্লেখ করেন, ‘অতীতে যত অঘটন ঘটেছে কোনও তদন্ত ছাড়াই তার জন্য জামায়াতকে দোষারোপ করা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে প্রমাণিত হয়েছে যে জামায়াত কোনও ঘটনার সঙ্গেই জড়িত নয়। বরং দেখা গেছে, ওই সব ঘটনার সঙ্গে শাসকগোষ্ঠীই জড়িত। এবারও সরকারের সব অপপ্রচার মিথ্যা প্রমাণিত হবে, ইনশাআল্লাহ।’
উল্লেখ্য, গত ২৬ জুলাই রাতে বিএনপির পক্ষ থেকে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি বিরোধিতাকারী জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে নিয়েই সরকার পতনের ডাক দেওয়া হয়। নিজের স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা বিএনপির নেতৃত্বে যুগপৎ আন্দোলনের সব শরিক দল ও জোট, বাম-ডান সব রাজনৈতিক দল, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য ধর্মভিত্তিক ও ইসলামী রাজনৈতিক দল এবং সংগঠনের প্রতিও জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানাচ্ছি।’