বায়তুল মোকাররমে জোহরের নামাজের পর ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে শহীদদের উদ্দেশ্যে’ গায়েবানা জানাজা পড়েছেন বিএনপি ও যুগপৎ দলগুলোর নেতাকর্মীরা। বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুর ১টা ৪০ মিনিটের দিকে বায়তুল মোকাররমে এই জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোটসহ যুগপৎ শরিক দলের অনেক নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন।
এসময় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ, মির্জা আব্বাসসহ বিএনপির দুই শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া, গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোটসহ বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা জানাজায় অংশগ্রহণ করেন।
গায়েবি জানাজার সময় বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে এবং রাস্তায় উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি ও অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীরা। রাস্তায়ও শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
জানাজায় উপস্থিত একজন সাধারণ মুসল্লি বাংলা ট্রিবিউনের এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘নামাজ পড়ার পর একটা গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। একজন সাধারণ মুসলমান হিসেবে নামাজ আদায় করেছি। নামাজ পড়া শেষ হতেই পুলিশ বেশ কয়েকজনকে আটক করে নিয়ে যায়। আমি ভয়ে তাড়াতাড়ি মসজিদ থেকে বের হয়ে যাই।’
‘গায়েবানা জানাজায় নাশকতার তথ্য ছিল গোয়েন্দাদের’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মতিঝিল জোনের এডিসি হায়াতুল ইসলাম খান খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে কোনও জানাজা অনুষ্ঠিত হয়নি। ভেতরে সাধারণ মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেছেন। তার সঙ্গে বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ছিল।’
‘গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, এখানে নাশকতার আশঙ্কা ছিল। তাই আমরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বেশ কয়েকজনকে আটক করেছি। তবে কতজনকে আটক করা হয়েছে বা তাদের পরিচয় কী এ বিষয়ে কিছুই জানাননি তিনি।’
‘জানাজা পড়লে কী হবে’
বিএনপির মিডিয়া সেল থেকে জানানো হয়েছে, বুধবার দুপুর ১টার আগে থেকেই বায়তুল মোকাররম এলাকা থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ। এর মধ্যে বিএনপি দলীয় সমর্থক ডা. সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্ত উল্লেখযোগ্য।
বায়তুল মোকাররম এলাকায় জানাজার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর হয়ে ওঠে। মির্জা আব্বাস সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা তো আন্দোলনে আসিনি। আমরা তো জানাজায় এসেছি। জানাজায় আসলে বাধা দিতে হবে?’
‘আমি আসলে বুঝতে পারছি না, জানাজা পড়লে কী হবে’, প্রশ্ন করেন মির্জা আব্বাস।
ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
নামাজ শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গায়েবানা জানাজায় অংশ নিতে মুসল্লিদের বাধা দেওয়া হয়েছে। তিনি এর নিন্দা জানান। তিনি আরও বলেন, ‘সরকার ইচ্ছা করলে আলোচনার মাধ্যমে কোটা সমস্যার সমাধান করতে পারতো। তা না করে বর্বরভাবে হামলা করে মানুষ হত্যা করা হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল কথা বলে মসজিদের উত্তর গেট থেকে বের হওয়ার পর সেখানে আগে থেকে উপস্থিত গণতন্ত্র মঞ্চ ও বিএনপির কিছু নেতাকর্মী স্লোগান দেন। এ সময় পুলিশ তাদের ধাওয়া করে। এরপর তারা ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করেন। পুলিশ পাল্টা রাবার বুলেট ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এর আগে বিএনপির নেতাকর্মীরা বায়তুল মোকাররমের আশপাশে এবং পল্টনের বিভিন্ন গলিতে অবস্থান নিয়েছিলেন। পুলিশ গিয়ে তাদের ধাওয়া করে তাড়িয়ে দেয়। গলিগুলোতে পুলিশের অবস্থান দেখা যায়।