হাইকোর্টের রায়ের পর কোটা বাতিল চেয়ে করা আপিল আবেদনের শুনানিতে রায় ঘোষণার আগে কিছু মন্তব্য তুলে ধরেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
১১ জন আইনজীবীর দীর্ঘ শুনানির পর গত রবিবার (২১ জুলাই) দুপুর ১টা ২৯ মিনিটে আপিল বিভাগের বেঞ্চে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, গত ১০ জুলাই আপিল বিভাগ রিট আবেদন নম্বর ৬০৬৩/২০২১-এ হাইকোর্ট বিভাগের দেওয়া রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা প্রদান এবং এর কার্যক্রম স্থগিত করে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়েছিল। এই আদেশের ফলে ২০১৮ সালে সরকার কর্তৃক জারি করা কোটা বাতিল সংক্রান্ত পরিপত্রটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হয়ে যায়। কিন্তু এই আদেশটির (কোটা সংক্রান্ত ২০২৮ সালের পরিপত্রের ওপর স্থিতাবস্থা বা বহাল রাখার অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ) অর্থ আমাদের শিক্ষার্থী ছেলে-মেয়েরা সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। এ দেশের বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ ও আইন বিভাগ— এই তিন বিভাগের দায়িত্ব একদিন তাদেরই নিতে হবে। আমরা যারা বয়োবৃদ্ধ আমাদেরকে তাদের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। কবি সুকান্তের ভাষায়- ‘এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান’। এই বিষয়গুলো আন্দোলনকারী সমস্ত শিক্ষার্থীকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে। তাদের চিন্তায়, মননে, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে হবে। তাহলেই শুধু পথ হারাবে না বাংলাদেশ। টিকে থাকবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত আমাদের এই মাতৃভূমি। এর মধ্য দিয়েই বেঁচে থাকবো আমরা, বেঁচে থাকবে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদদের স্মৃতি অনাদিকাল।
প্রধান বিচারপতি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি লাল-সবুজের পতাকা। তাদের প্রতি কোনরকম অসম্মান অবশ্যই জাতি ভালোভাবে নেয় না। সংশ্লিষ্ট সকলকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনে আমাদের কখনও যাতে কার্পণ্য না হয়, সেদিক খেয়াল রাখতে হবে।
এরপর আদালত আপিল মামলার রায়ের মূল অংশটি ঘোষণা করেন এবং লিখিত রায়ের অনুলিপিতে বিস্তারিত বর্ণনা করা থাকবে বলে জানান।
রায়ে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটার পরিবর্তে মাত্র ৭ শতাংশ নির্ধারণ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ; মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ; ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করে এ রায় দেওয়া হয়। তবে সরকার প্রয়োজন ও সার্বিক বিবেচনায় আদালত নির্ধারিত কোটা বাতিল, সংশোধন বা সংস্কার করতে পারবে বলেও রায়ে উল্লেখ করেন আপিল বিভাগ।