সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে কয়েক দিন ধরে টানা বিক্ষোভ করছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। গতকাল শনিবার (৬ জুলাই) বিকালে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে সড়ক অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। এ সময় ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে আজ রবিবার (৭ জুলাই) বিকাল ৩টা থেকে সারা দেশে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধের ডাক দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
পাশাপাশি সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও ছাত্র ধর্মঘট পালন করার কথা বলা হয়। এ ছাড়া রাজধানীর কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট শাহবাগ মোড়, সায়েন্স ল্যাব, চানখাঁরপুল, নীলক্ষেত, মতিঝিল, মহাখালী, বাংলামটরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ‘বাংলা ব্লকেড’র আওতায় থাকবে। আর কোনও জায়গায় বাইপাস দিয়ে গাড়ি গেলে সেগুলোও অবরোধ করার কথা জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
তবে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে কোনও রকম ঝামেলা যেন সৃষ্টি না হয়, সে জন্য সতর্ক অবস্থানে থাকার কথা জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ডিএমপির একটি সূত্রে জানিয়েছে, আন্দোলনকে ঘিরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাসহ গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তবে কোনোভাবেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে কোনও দুষ্কৃতকারী প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে পুলিশ।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) ড. খ মহিদ উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে আমাদের যা যা নিরাপত্তার প্রয়োজন, সেভাবেই আমরা প্রস্তুত রয়েছি। একই সঙ্গে বিষয়টি গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখছি। এ আন্দোলনে যেন কোনও দুষ্কৃতকারী প্রবেশ করতে না পারে, সতর্ক রয়েছি। তবে শিক্ষার্থীদেরও এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
কোটা সংস্কার ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের জন্য ২০১৮ সালের সরকারি পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গত ৫ জুন হাইকোর্ট ২০১৮ সালের পরিপত্রের আংশিক অবৈধ ঘোষণা করার পর আবার এই আন্দোলন শুরু হয়।
দাবি আদায়ে গতকাল শনিবার পূর্বনির্ধারিত বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষে রাজধানীর শাহবাগে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে শাহবাগ মোড় প্রায় এক ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা। তারা বলছেন, কোটা বাতিলের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষে ফিরবেন না।
বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি বলতে কী বোঝাচ্ছেন, জানতে চাইলে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক শারজিস আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলা ব্লকেড মানে হলো, সারা দেশে আমরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট অবরোধ করবো, যাতে কোনও গাড়ি চলতে না পারে। শহরের যান চলাচল (সারা দেশ ব্লক করার জন্য আমরা সম্ভাব্য সব রুট অবরোধ করবো। যদি জানতে পারি কোনও বিকল্প রুটে বাইপাস দিয়ে গাড়ি যাচ্ছে, সেটিও অবরোধ করবো।’
এই অবরোধ কতক্ষণ পর্যন্ত চলবে, জানতে চাইলে শারজিস আরও বলেন, ‘এটি আসলে এখন সুনির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। আমরা যত বেশি সময় থাকা যায়, সেই চেষ্টা করবো। সম্ভব হলে আমরা রাত পর্যন্ত অবস্থান করবো।’
এদিকে চলমান শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলন ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ‘প্রত্যয়’ ঠেকাও কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন জানিয়েছে বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চ, জাতীয় পার্টিসহ দেশের বিরোধী দলগুলো। দলগুলোর এই সমর্থন আজ শনিবারও (৬ জুলাই) অব্যাহত ছিল। কোনও কোনও দলের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে ‘আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের’।