বগুড়ায় মোট প্রদত্ত ভোটের এক অষ্টমাংশ পেতে ব্যর্থ হওয়ায় ৫৮ প্রার্থীর মধ্যে দুই এমপি ও আলোচিত হিরো আলমসহ ৪৫ জনের মনোনয়ন বাজেয়াপ্ত হয়েছে। বগুড়া জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান সোমবার (৮ জানুয়ারি) বিকালে এ তথ্য দিয়েছেন।
রবিবার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বগুড়ার সাতটি আসনের ৯৬৯টি কেন্দ্রে দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। গণনা শেষে রাত ১১টার দিকে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার সাইফুল ইসলাম ফলাফল ঘোষণা করেন।
অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সাতটি আসনের পাঁচটিতে নৌকা, একটিতে নৌকার বিদ্রোহী ও একটিতে ক্ষমতাসীনদের মিত্র জাতীয় পার্টির প্রার্থী বেসরকারিভাবে জয়ী হয়েছেন। এদের মধ্যে তিনটি আসনে নতুন মুখ এসেছে।
বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনে ১২৪ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের সাহাদারা মান্নান এমপি (নৌকা প্রতীক) ৫১ হাজার ৪৯৪ ভোট পেয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী (তবলা প্রতীক) শাহাজাদী আলম লিপি। তিনি পেয়েছেন ৩৫ হাজার ৬৮৪ ভোট।
বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে ১১০ কেন্দ্রে জাতীয় পার্টির শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ এমপি (লাঙ্গল প্রতীক) ৩৬ হাজার ৯৫২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী (ট্রাক প্রতীক) জেলা বিএনপির সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদক বিউটী বেগম পেয়েছেন ৩৪ হাজার ২০৩ ভোট।
বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) আসনে ১১৭ কেন্দ্রে নৌকার মনোনয়নবঞ্চিত আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক খাঁ মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ আল মেহেদী (ট্রাক প্রতীক) ৬৯ হাজার ৭৫০ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী অপর স্বতন্ত্র (কাঁচি) অজয় কুমার সরকার পেয়েছেন ২৩ হাজার ৮১৫ ভোট।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে ১১৪ কেন্দ্রের ফলাফলে জাসদের এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন নৌকা মার্কায় ৪২ হাজার ৭৫৭ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক বিএনপি নেতা ও সাবেক এমপি ডা. জিয়াউল হক মোল্লা পেয়েছেন ৪০ হাজার ৬১৮ ভোট।
বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনে ১৮৮ কেন্দ্রে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু (নৌকা প্রতীক) এক লাখ ৯৮ হাজার ১৫৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ইসলামী ঐক্যজোটের (মিনার প্রতীক) নজরুল ইসলাম চার হাজার ১০৫ ভোট পেয়েছেন।
বগুড়া-৬ (সদর) আসনে ১৪৪ কেন্দ্রে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু ৫৩ হাজার ২২৬ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী (ট্রাক প্রতীক) শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নান আকন্দ পেয়েছেন ২২ হাজার ৮৪০ ভোট।
বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে ১৭২ কেন্দ্রে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা আলম নান্নু বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ৯১ হাজার ২৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জাতীয় পার্টির (লাঙ্গল) এ টি এম আমিনুল ইসলাম ছয় হাজার ৮০১ ভোট পেয়েছেন।
বগুড়া-১ আসনে জামানত হারানো সাত প্রার্থী হলেন জাতীয় পার্টির গোলাম মোস্তফা বাবু (লাঙ্গল), তৃণমূল বিএনপির এন এম আবু জিহাদ (সোনালি আঁশ), বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের আনোয়ার হোসেন (ফুলের মালা), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নজরুল ইসলাম (বটগাছ), জাসদের হাসান আকবর আফজাল (মশাল), স্বতন্ত্র ইয়াসির রহমতুল্লাহ ইন্তাজ (ট্রাক) ও স্বতন্ত্র (সাবেক বিএনপি) মো. শোকরানা (কেটলি)।
বগুড়া-২ আসনে জামানত হারানো পাঁচ জন হলেন বিএনএফের বরকত উল্লাহ (টেলিভিশন), তৃণমূল বিএনপির বজলুর রহমান (সোনালি আঁশ), বাংলাদেশ কংগ্রেসের মুনছুর রহমান শেখ (ডাব), স্বতন্ত্র (আ.লীগ) আকরাম হোসেন (কাঁচি) ও স্বতন্ত্র আল ফারাবী মো. নুরুল ইসলাম (বেঞ্চ)।
বগুড়া-৩ আসনে জামানত হারানো ১০ জন হলেন জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম তালুকদার এমপি (লাঙ্গল), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির আফরিনা পারভীন (একতারা), তৃণমূল বিএনপির আবদুল মোত্তালেব (সোনালি আঁশ), জাসদের আবদুল মালেক সরকার (মশাল), বাংলাদেশ কংগ্রেসের তাজ উদ্দীন মন্ডল (ডাব), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের রফিকুল ইসলাম সরদার (নোঙর), স্বতন্ত্র (আ.লীগ) ফেরদৌস স্বাধীন ফিরোজ (ঈগল), স্বতন্ত্র আফজাল হোসেন (ফুলকপি), স্বতন্ত্র জাকরিয়া হোসেন (আলমিরা) ও স্বতন্ত্র নজরুল ইসলাম (কেটলি)।
বগুড়া-৪ আসনে জামানত হারানো চার জন হলেন বাংলাদেশ কংগ্রেসের আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম (ডাব), জাতীয় পার্টির শাহীন মোস্তফা কামাল (লাঙ্গল), গণতন্ত্রী পার্টির মনজুরুল ইসলাম (কবুতর) ও স্বতন্ত্র (আ.লীগ) মোশফিকুর রহমান (ট্রাক)।
বগুড়া-৫ আসনে জামানত হারানো চার জন হলেন জাসদের রাসেল মাহমুদ (মশাল), বিএনএফের আলী আসলাম হোসেন রাসেল (টেলিভিশন), ইসলামী ঐক্যজোটের নজরুল ইসলাম (মিনার) ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের মামুনার রশিদ (ডাব)।
বগুড়া-৬ আসনে জামানত হারানো তিন জন হলেন জাতীয় পার্টির আজিজ আহম্মেদ (লাঙ্গল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শহিদুল ইসলাম (আম) ও স্বতন্ত্র সৈয়দ কবির আহম্মেদ (ঈগল)।
বগুড়া-৭ আসনে জামানাত হারানো ১২ জন হলেন জাতীয় পার্টির এ টি এম আমিনুল ইসলাম (লাঙ্গল), বাংলাদেশ কংগ্রেসের মেহেরুল আলম মিশু (ডাব), জাসদের আবদুর রাজ্জাক (মশাল), জাতীয় পার্টির (জেপি) আবদুল মজিদ (বাইসাইকেল), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের এনামুল হক (ছড়ি), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফজলুল হক (আম), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মো. রনি (নোঙর), স্বতন্ত্র নজরুল ইসলাম (কেটলি), স্বতন্ত্র নজরুল ইসলাম মিলন (কাঁচি), স্বতন্ত্র রেজাউল করিম বাবলু এমপি (ট্রাক), স্বতন্ত্র আমজাদ হোসেন (চার্জার লাইট) ও স্বতন্ত্র (সাবেক বিএনপি) সরকার বাদল (ঈগল)।
