X
মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
৩০ বৈশাখ ১৪৩২

সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে যা পেলো পুলিশ

রিয়াদ তালুকদার
০৯ মার্চ ২০২৩, ১৮:১৪আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২৩, ১৮:১৪

রাজধানীর সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত কুইন স্যানিটারি মার্কেটের নাম একসময় ছিল কুইন ক্যাফে। ভবন নির্মাণে ১০ তলা প্ল্যান পাস করা হলেও ১৯৯২ সাল পর্যন্ত বেজমেন্ট ও ১ তলা কমপ্লিট ছিল। বেজমেন্টে রান্নাঘর আর একতলায় ছিল খাবারের হোটেল।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নিয়তি রায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, এই ভবনের রান্নাঘরে কমার্শিয়াল গ্যাসের বড় লাইন ছিল যা পরে লিখিতভাবে তিতাসের কাছে সারেন্ডার করা হয়। ২০০৪ সালে ভবনটির সাত তলা পর্যন্ত নির্মাণকাজ শেষ হয়। ভবনটির মালিক মরহুম হাজী মোহাম্মদ রেজাউর রহমান ২০১১ সালে মারা যান। উত্তরাধিকার সূত্রে তার তিন ছেলে, দুই মেয়ে এবং স্ত্রী বর্তমান ভবনটির মালিক।

প্রাথমিক তদন্তে যা পাওয়া গেছে

ভবনটির বেজমেন্টে গাড়ি পার্কিংয়ের কথা থাকলেও সেখানে এক সময় রান্নাঘর ছিল। সর্বশেষ সেখানে বাংলাদেশ স্যানিটারি নামে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের স্যানিটারি মালামাল বিক্রির দোকান ছিল। প্রায় ১৮০০ বর্গফুটের আন্ডারগ্রাউন্ডের পুরোটাই কাচঘেরা। দোকান ঠান্ডা রাখতে বড় ২টি এসি চালানো হতো এখানে। এখানে আরও আছে একটি বড় পানির ট্যাংক। ভবনটির স্যুয়ারেজ সেপটিক ট্যাংকের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত নন মালিকরা। ধারণা করা হচ্ছে— উত্তর পাশের ভবনের সাথে এ ভবনের মাঝখানে যে আড়াই-তিন ফিটের জায়গা খালি আছে সেখানে থাকতে পারে দুই ভবনের সেপটিক ট্যাংক।

বিস্ফোরণের নেপথ্য কারণগুলো—

১. বেজমেন্টে কার পার্কিং থাকলে বাতাসের ভেন্টিলেশন থাকতো। কোনও গ্যাস জমা হতো না। বিস্ফোরণও হয়তো ঘটতো না।

২. সাত তলা ভবনের বেজমেন্টসহ তিনটি বাণিজ্যিক ফ্লোর ও তার উপরের বাসাবাড়ির লোকজনের পয়োবর্জ্য যেখানে জমা হয়—দীর্ঘসময় পরিষ্কার না করায় সেখানে বায়োগ্যাসের জন্ম হতে পারে। যা বিভিন্ন কারণে বিস্ফোরিত হয়ে ব্যাপক ক্ষতির সৃষ্টি করে।

৩. একসময় এই বেজমেন্টের রান্নাঘরে কমার্শিয়াল বড় লাইনে গ্যাস সরবরাহ করা হতো যা পরে বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু বাড়ির অন্যান্য ফ্লোরের ডমেস্টিক লাইন এখনও চলমান। ফলে এই লাইন সম্পূর্ণ বন্ধ না হয়ে সেখান দিয়েও গ্যাস লিক হতে পারে। কোনভাবে জমা গ্যাসে স্ফুলিঙ্গের মাধ্যমে বিস্ফোরণ হতে পারে।

৪. ভবন মালিকদের তথ্য মতে, মূল ক্ষতিগ্রস্ত ভবন এবং তার উত্তরপাশে ব্র্যাক ব্যাংকের ভবনের মাঝখানে সরু একটি গলি আছে। এ গলিতে পয়োবর্জ্যের সেপটিক ট্যাংক, এসির আউটার লাইন ইত্যাদি অবস্থিত। বিস্ফোরণে সেপটিক ট্যাংকের পাশের দেয়ালগুলো সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পয়োবর্জ্যের গ্যাসের বিস্ফোরণেও এমনটি হতে পারে।

৫. ভবনটির আন্ডারগ্রাউন্ডে বড় একটি স্যানিটারি দোকান, নিচতলায় ৫টি দোকান, দোতলায় মালিক সমিতির সেক্রেটারির অফিস এবং কাপড়ের ২টি দোকান ছিল। এসব দোকান ও অফিস কাচ এবং ভারী ইন্টেরিয়র সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করা। এগুলোতে উচ্চ শক্তির এসি লাগানো ছিল। এসিগুলোকে সময়ে সময়ে সার্ভিসিং না করা হলে বা ত্রুটিপূর্ণ থাকলে তা থেকেও বিস্ফোরণ হতে পারে। ২/৩ বছর আগে গুলশানে আরব আমিরাতের ভিসা সেন্টারে এরকম ঘটেছিল।

৬. ব্যক্তি মালিকানাধীন এ ভবনে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সিসি ক্যামেরার ছিল। ফলে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির জন্য যে পরিমাণ বিস্ফোরক প্রয়োজন তা এখানে সবার অজান্তে জমা রাখা প্রায় অসম্ভব।

৭. বিস্ফোরণের প্রকৃত কারণ সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিস, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, ডিএমপির সিটিটিসি'র বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট আলাদা আলাদাভাবে তদন্ত করছে। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারা একটা যৌক্তিক সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে রিপোর্ট দেবেন তাতেই প্রকৃত কারণটি জানা যাবে। তবে এখনও বিস্ফোরক বা অন্তর্ঘাতমূলক কোনও কাজের আলামত সেখানে পাওয়া যায়নি।

৮. ভবনটির বিভিন্ন ফ্লোরের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে সিসি ক্যামেরা ছিল। সিসি ক্যামেরার ডিভিআর থেকে ফুটেজ সংগ্রহ করার চেষ্টা চলছে। ভবনের মালিক ও দোকান মালিকদেরকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে এনে বিস্ফোরণের কারণ জানার চেষ্টা অব্যাহত আছে।

এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে পুলিশ বলছে, কুইন্স স্যানিটারি মার্কেটের আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে। এই আন্ডারগ্রাউন্ড স্পেসটি রাজউকের বিধান অনুসারে খোলামেলা থাকলে সেখানে কোনও ত্রুটি দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে নিরসন করা যেতো। জমে থাকা গ্যাসের নির্গমণসহ অন্যান্য সমস্যারও সমাধান করা যেতো। বাড়ির মালিকরা টাকার লোভে আন্ডারগ্রাউন্ডকে এক সময় রান্নাঘর হিসেবে ব্যবহার করেছেন। সেই রান্নাঘরের গ্যাসের লাইন যথাযথভাবে অপসারণ না করে তার উপরেই সম্পূর্ণ এয়ারটাইট এসি করা নির্মাণসামগ্রীর মার্কেট বানিয়ে দিয়েছেন তারা। দোকানের মালিক বেজমেন্টের ১ ইঞ্চি জায়গাও ফাঁকা না রেখে দোকান বানিয়ে তার কর্মচারী ও ক্রেতা সাধারণের জীবন ঝুঁকিতে ফেলেছেন। এত প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির জন্য ভবনের মালিক এবং দোকানদারের স্বেচ্ছাচারিতা, লোভ এবং অবহেলাকেই দায়ী করা যায়।

এরই মধ্যে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ভবন মালিক ওয়াহিদর রহমান, মতিউর রহমান এবং দোকান মালিক আব্দুল মোতালেব মিন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

/এমএস/
টাইমলাইন: সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণ
০৯ মার্চ ২০২৩, ১৮:১৪
সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে যা পেলো পুলিশ
০৮ মার্চ ২০২৩, ১৭:২৮
সম্পর্কিত
চলন্ত মোটরসাইকেলে ককটেল নিক্ষেপ, দুই ভাই আহত
মোহাম্মদপুরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে শিশুসহ দগ্ধ ৩
রূপগঞ্জে টেক্সটাইল মিলে বিস্ফোরণে ২ জনের মৃত্যু
সর্বশেষ খবর
ওটিপি সমস্যায় সারাদেশে এনআইডি সেবা বন্ধ
ওটিপি সমস্যায় সারাদেশে এনআইডি সেবা বন্ধ
জুলাইয়ে বাংলাদেশে গণহত্যা হয়েছে, জেনোসাইড হয়নি: চিফ প্রসিকিউটর
জুলাইয়ে বাংলাদেশে গণহত্যা হয়েছে, জেনোসাইড হয়নি: চিফ প্রসিকিউটর
একাত্তরকে উপেক্ষাকারীদের রাজনীতি বুমেরাং হবে: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
একাত্তরকে উপেক্ষাকারীদের রাজনীতি বুমেরাং হবে: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
বৃহৎ বিনিয়োগের আশায় ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর শুরু, পৌঁছালেন সৌদি আরব
বৃহৎ বিনিয়োগের আশায় ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর শুরু, পৌঁছালেন সৌদি আরব
সর্বাধিক পঠিত
পররাষ্ট্র সচিবের অফিসার্স ক্লাবের সদস্য পদ স্থগিত
পররাষ্ট্র সচিবের অফিসার্স ক্লাবের সদস্য পদ স্থগিত
আ.লীগ-ছাত্রলীগের ২৬ নেতার আত্মসমর্পণ
আ.লীগ-ছাত্রলীগের ২৬ নেতার আত্মসমর্পণ
রংপুরের হাসপাতাল নেপাল ও ভুটানের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে: প্রধান উপদেষ্টা
রংপুরের হাসপাতাল নেপাল ও ভুটানের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে: প্রধান উপদেষ্টা
স্বর্ণের দাম আবার কমলো
স্বর্ণের দাম আবার কমলো
সুস্থ তটিনী, তবে শুটিংয়ে ফেরার মতো নয়
সুস্থ তটিনী, তবে শুটিংয়ে ফেরার মতো নয়